ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় নতুন জোয়ার শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
রনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের যে ভূমিধস বিজয়, সেই বিজয়ের যে প্রতিক্রিয়া তার ফলে পুরো বাংলাদেশের রাজনীতির সব হিসাব এলোমেলো হয়ে গেছে। শিবির এত ভোট কিভাবে পেল? শিবিরকে কি ছাত্রলীগ ভোট দিয়েছে নাকি দেয়নি? এসব বিষয় নিয়ে তুমূল আলোচনা হচ্ছে।
এবং এই ডাকসু নির্বাচনের যে ফলাফল এটি জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে কি করবে না এবং বিএনপি যেভাবে আগামী নির্বাচনে জয় লাভ করার সুখস্বপ্নে বিভোর সেই স্বপ্ন পূর্ণ হবে, নাকি নতুন কোনো ম্যাটিকুলাস ডিজাইনের মধ্যে পড়ে বিএনপির জন্য ৫০টি সিট পাওয়াটা কঠিন হয়ে যাবে?’
‘তার আগে বলে নিই যে, ডাকসুর এই ফলাফলের কারণে যমুনাতে রীতিমতো জোয়ার এসে গেছে। মানে ড. ইউনূসের যে বাসভবন যেটাকে কেন্দ্র করে এখন প্রধান উপদেষ্টার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, সরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে, সেই যমুনাতে দীর্ঘদিন ধরে ভাটার টান যাচ্ছিল। যমুনার আকর্ষণ কমে যাচ্ছিল। যমুনাতে যারা কর্মরত ছিলেন তাদের অনেকের মধ্যে হতাশা এবং দোদুল্যমানতা দেখা যাচ্ছিল।
ডাকসু নির্বাচনের পরে সেখানে সংগত কারণে নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়েছে। জোয়ার এসেছে।’
‘আপনারা জানেন যে এই সরকার প্রথম থেকে বলে আসছিল তারা একটি ম্যাটিকুলাস ডিজাইন করেছিল শেখ হাসিনার পতনের জন্য। প্রথম দিকে আমরা পাত্তা দেয়নি।
কিন্তু পরবর্তীতে আমরা যেটা দেখলাম, সেটা হলো যে সত্যিকার অর্থেই ড. ইউনূস, জামায়াত, এনসিপি তারা দীর্ঘদিন ধরে দেশে ও দেশের বাইরে নানাভাবে চেষ্টা এবং তদবির চালিয়ে আসছিল শেখ হাসিনার পতনের জন্য। এবং তার পতনের নেপথ্যে একটা কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য। যা যা করা দরকার প্রায় সবকিছুই করা হয়েছিল। এটি এমনি এমনি একটা গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়নি।’
‘এটার পেছনে শক্তি ছিল, পরিকল্পনা ছিল, হতাশা ছিল, সফলতা ছিল এবং নিত্য নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
দেশে এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন শক্তি এবং বিভিন্ন জনমত কূটনৈতিক তৎপরতা সব মিলিয়ে যারা এই কাজগুলো সম্মিলিতভাবে করেছিলেন ২০২৩ সালে বা তারও অনেক আগে থেকে। মূলত রাতারাতি যখন ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলো এবং আমরা যাদেরকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখলাম মনে হয়েছে যে এরা আকাশ থেকে নাযিল হয়েছে। কিন্তু ঘটনা আসলে তা নয়, তাদের সবার সঙ্গে একটা সম্পর্ক ছিল।’
রনি দাবি করেন, ‘এনসিপি বা সমন্বয়কদের যাদের নাম আমরা বলছি তারা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ এবং ড. ইউনূস এবং তার গ্রামীণ ব্যাংকের যারা লোকজন তার সঙ্গে মার্কিন ডিপস্টেটের যে সংযোগ এগুলোর মধ্যে একটা পূর্ব পরিকল্পনা ছিল। এখানে হঠাৎ করে বদিউল আলম মজুমদার আসেননি, আলী রীয়াজ আসেননি; তাদের মধ্যে অবশ্যই একটা ভালো সুসম্পর্ক ছিল। গত এক বছরে নানা রকম রাজনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং মবের কারণে জনমত ক্রমশ ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছিল।’
‘এরই মধ্যে ডাকসু নির্বাচন। বিএনপি ইচ্ছা করলে নির্বাচনটা ঠেকিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু সেটা না করে তারা ওভার কনফিডেন্ট ছিল যে এই নির্বাচনে হয়তো তারা জয়লাভ করবে। শিবির কোনো অবস্থাতেই পারবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল শিবির এখানে জিতে গেছে এবং আমি আজকে যে ভিডিওটি করছি আজকের দিনটিতে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে এবং সেখানে বিএনপি যে খুব ভালো ফলাফল আসবে। আমি এই মুহূর্তে আশা করতে পারছি না।’
‘এই ডাকসু নির্বাচনের ফলে নির্বাচনের যে একটা ট্রেন চালু হয়ে গেছে, যে ইমেজ চালু হয়ে গেছে, এটাকে জামায়াত কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। আর এই যে ভূমিধস বিজয়ের ফলে সংগত কারণেই জামায়াত, ড. ইউনূস ও এনসিপির যে পুরনো প্রেম, ঐক্য, সেটাতে আবার গতি চলে এসেছে।’
এসএন