চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ সাত দফা দাবিতে টানা ৫২ ঘণ্টা আমরণ অনশনে থাকা শিক্ষার্থীরা অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়া আখতার স্বয়ং উপস্থিত থেকে অনশনরত শিক্ষার্থীদের মুখে পানি তুলে অনশন ভাঙান। এ সময় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দীনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
উপাচার্য বলেন,
শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান। তাদের দাবিগুলো আমরা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। আগামী রোববারের (১৪ সেপ্টেম্বর) মধ্যেই বিষয়গুলো সমাধানের চেষ্টা করা হবে। আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি থাকবে না।
অনশনের দীর্ঘ সময়ে অন্তত সাতজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে তিনজনকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে ভর্তি করে স্যালাইন দেয়া হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন নারী অঙ্গনের সংগঠক ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিকদার, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা।
শুক্রবার দুপুরে প্রশাসনের প্রতিনিধি দল আবারও অনশনস্থলে গিয়ে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেন এবং মেডিকেল থেকে প্রক্টর অফিসের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে নিয়ে আসেন। পরে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে রবিবার বৈঠকের প্রস্তাব দিলে অনশনকারীরা তা মেনে নেন।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর সমুদ্র বলেন,
আমাদের ভিসি স্যার স্বয়ং এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, আলোচনার টেবিলে আমাদের সাত দফা দাবির প্রতিটি নিয়েই আলোচনা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশেষ করে প্রক্টোরিয়াল বডির অযোগ্যতার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে প্রশাসন আলোচনার প্রস্তাব দিলেও শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিল, অতীতেও প্রশাসন কেবল আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই দায়িত্বহীন এই প্রশাসন পদে থাকতে পারে না এবং প্রক্টরিয়াল বডিকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে এই দাবিতেই টানা কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে বসেছিলেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ, গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের মানসম্মত চিকিৎসার নিশ্চয়তা, নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা, হামলার ভিডিও প্রকাশকারীদের নিরাপত্তা, প্রকৃত অপরাধীদের বিচার, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমন্বয় কমিটি গঠন ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন।
ইএ/টিকে