জাপানে ১০০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা বেড়ে প্রায় এক লাখে পৌঁছেছে বলে শুক্রবার ঘোষণা করেছে সরকার।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, টানা ৫৫ বছর ধরে নতুন রেকর্ড গড়ে জাপানে শতবর্ষীদের সংখ্যা সেপ্টেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৭৬৩ জনে। ওই সংখ্যার মধ্যে ৮৮ শতাংশই নারী। বিশ্বের সর্বোচ্চ গড় আয়ু রয়েছে জাপানে।
দেশটি প্রায়ই বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত ব্যক্তির দেশ হিসেবে পরিচিত—যদিও কিছু গবেষণা বিশ্বব্যাপী শতবর্ষীদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
এটি দ্রুততম বয়স্ক হয়ে যাওয়া সমাজগুলোর মধ্যেও একটি, যেখানে বাসিন্দাদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে স্বাস্থ্যকর কিন্তু জন্মহার কম। জাপানের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হলেন ১১৪ বছর বয়সী শিগেকো কাগাওয়া নামের নারা শহরের উপশহর ইয়ামাতোকোরিয়ামার এক নারী। এদিকে সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ হলেন কিয়োতাকা মিজুনো নামের ১১১ বছর বয়সী ইওয়াতা উপকূলীয় শহরের বাসিন্দা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাকামারো ফুকোকা ৮৭ হাজার ৭৮৪ জন নারী ও ১১ হাজার ৯৭৯ জন পুরুষ শতবর্ষীকে তাদের দীর্ঘায়ুর জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং সমাজ উন্নয়নে তাদের বহু বছরের অবদানের জন্য ‘কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেছেন।
এই পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে জাপানের এল্ডারলি ডের আগে, যা ১৫ সেপ্টেম্বর পালিত হয়। এই জাতীয় ছুটির দিনে নতুন শতবর্ষীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অভিনন্দনপত্র ও রুপার কাপ পান। এ বছর ৫২ হাজার ৩১০ জন এর জন্য যোগ্য বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
১৯৬০-এর দশকে জাপানের জনসংখ্যায় ১০০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের অনুপাত যে কোনো জি৭ দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম ছিল—কিন্তু পরবর্তী কয়েক দশকে তা নাটকীয়ভাবে বদলেছে। যখন সরকার ১৯৬৩ সালে শতবর্ষী সমীক্ষা শুরু করেছিল, তখন ১৫৩ জন মানুষ ছিলেন ১০০ বা তার বেশি বয়সী। ১৯৮১ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজারে এবং ১৯৯৮ সালে দাঁড়ায় ১০ হাজারে।
দেশটিতে উচ্চ আয়ুর প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয় হৃদরোগ ও সাধারণ ধরনের ক্যানসারে, বিশেষত স্তন ও প্রোস্টেট ক্যানসারে কম মৃত্যু হার। জাপানে স্থূলতার হার খুবই কম, যা উভয় রোগের প্রধান কারণ।
খাদ্যতালিকায় কম লাল মাংস এবং বেশি মাছ ও সবজিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য এটি সম্ভব হয়েছে।
যখন বিশ্বের অন্যত্র খাদ্যতালিকায় বাড়তি চিনি ও লবণ ঢুকেছে, জাপান গেছে বিপরীত পথে—জনস্বাস্থ্য প্রচারণা সফলভাবে মানুষকে লবণ গ্রহণ কমাতে উদ্বুদ্ধ করেছে। কিন্তু শুধু খাদ্য নয়। জাপানিরা সাধারণত বয়সের পরেও সক্রিয় থাকেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বয়স্কদের তুলনায় বেশি হাঁটেন ও গণপরিবহন ব্যবহার করেন।
১৯২৮ সাল থেকে প্রতিদিনের দলীয় ব্যায়াম রেডিও তাইসো জাপানি সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে, যা সমাজবোধ জাগানোর পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের উদ্দেশ্যে চালু হয়েছিল। এই তিন মিনিটের ব্যায়াম টেলিভিশনে প্রচারিত হয় এবং দেশজুড়ে ছোট ছোট কমিউনিটি গ্রুপে অনুশীলন করা হয়।
তবে কয়েকটি গবেষণা বিশ্বব্যাপী শতবর্ষীদের সংখ্যার যথার্থতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, তথ্য-ত্রুটি, অবিশ্বস্ত জনসাধারণের রেকর্ড এবং অনুপস্থিত জন্ম সনদ উচ্চ সংখ্যার জন্য দায়ী হতে পারে।
২০১০ সালে জাপানে পারিবারিক নিবন্ধনের এক সরকারি নিরীক্ষায় দুই লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষকে ১০০ বছর বা তার বেশি বয়সী হিসেবে তালিকাভুক্ত পাওয়া যায়, যারা প্রকৃতপক্ষে বহু বছর আগেই মারা গেছেন। ভুল গণনার জন্য দায়ী ছিল অসম্পূর্ণ নথি-রক্ষণ এবং কিছু পরিবার হয়তো বয়স্ক আত্মীয়দের মৃত্যু গোপন রেখেছিল তাঁদের পেনশন পাওয়ার জন্য।