নির্ধারিত টাইমলাইনে নির্বাচন হতেই হবে : সালাহউদ্দিন আহমেদ

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে রিজিওনাল সিকিউরিটির জন্য থ্রেট হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন কোনোভাবেই একটা আরেকটি উপর সম্পর্কিত নয়। সংস্কার সংস্কারের মতো চলবে, এটা কন্টিনিউ প্রসেস। বিচারেও টাইম লিমিট করা যায় না, তাতে অবিচার হবে তাহলে। সেটা চলবে, যে সরকারই আসুক, কিন্তু নির্বাচনকে এটা কন্ডিশনাল করা যাবে না। নির্ধারিত টাইমলাইনে নির্বাচন হতেই হবে।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আরও অনেকগুলো বিষয়ে সংস্কারের প্রয়োজন আছে, যেগুলো হয়ত আপনারা সময়ের অভাবে ট্রেস করতে পারেননি। সেগুলো জাতিকে সামনে ট্রেস করতে হবে। এখানে ১৯টি মৌলিক বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে। বাস্তবে মৌলিক বিষয় আরও অনেক আছে। আমরা ৮২৬টি ছোট-বড় সংস্কার প্রস্তাব পেয়েছি। এগুলো দলে আলোচনা করে লিখিত মতামত দিয়েছি। মাত্র ৫১টি প্রস্তাবে আমরা দ্বিমত করেছি, ১১৫টি প্রস্তাবে আমাদের মতামতসহ ভিন্নমত দিয়ে গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঐকমত্য হয়েছে প্রায়। মৌলিকগুলো নিয়ে ৮৪৫টি সংস্কার প্রস্তাব হয়।

তিনি বলেন, দুই দিন পরে টিকবে না, চ্যালেঞ্জ হয়ে যেতে পারে কোথাও এমন কোনো বিষয় আমরা রেখে যেতে চাই না। আমরা যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছি, তা বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং হয়ে যাবে। প্রসিডিউলের জন্য বাস্তবায়নে একটু সময় লাগে।

এখন ১৯টি সাংবিধানিক ইস্যু বাকি থাকার কথা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এর মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্টসহ আমরা একমত হয়েছি। আমাদের বিবেচনায় ৭০ অনুচ্ছেদের ৪টি বিষয়ে এমপিদের স্বাধীনতা না থাকলে ভালো হয়। সর্বনিম্ন দুটি বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। নোট অব ডিসেন্টের ভাষা উল্লেখ করে সনদ তৈরি হচ্ছে এবং সেভাবে আমরা স্বাক্ষর করবো। যারা জনগণের ম্যান্ডেট পাবে তারা তাদের নোট অব ডিসেন্ট রক্ষা করে বাস্তবায়ন করবে। এটি কোনো জটিল বিষয় নয়।

দুই তিনটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া বাকিগুলো খুবই সাধারণ বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো বাস্তবায়ন খুব সহজ। কিন্তু ফোরাম কোনটা? সাংবিধানিক বিষয়গুলো পরবর্তী সংসদ ছাড়া অন্য কোনো ফোরাম করতে পারে কিনা? এ ব্যাপারে আইনি পরামর্শ দিতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। আমরা সেখানে যেতে পারি এবং সহায়তা নিতে পারি। এর বাইরে কিছু থাকলে জানান, আমরা একমত। আমরা সনদে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত আছি, তা আগেও বলেছি।

ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা এবং শক্তিতে রূপান্তরিত করতে আরও বেশি নেগোশিয়েট করার কথা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা কম্প্রোমাইজ করবো। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কোনো পন্থা বের করতে পারলে তাতে একমত হবো। প্রস্তত করা চূড়ান্ত জুলাই সনদে ক্লারিক্যাল মিসটেক এবং কিছুটা বিভ্রান্তি আছে। এটা আমরা কারেকশন করে দেবো, এটা মেজর কিছু নয়। তবে এটি জাতীয় দলিল, রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল, ঐতিহাসিক দলিল হবে, সেজন্য এটা নির্ভুল হওয়া বাঞ্ছনীয়। যেসব বিষয়গুলো আলোচিত হয়নি, সেগুলো এতে অন্তর্ভুক্ত করা ঠিক হবে না। বিতর্ক যত কম করা যায়।

শেষ সময়ে এসে সনদের আইনত ভিত্তি দেওয়া না হলে স্বাক্ষর না করা নিয়ে কয়েকটি দলের অবস্থানের বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা বলেছি, আইনি ভিত্তি নিয়ে আলোচনা হলে তাতে আমরা অংশ নেবো। সেই আলোচনা শুরু হয়েছে। তার আগে কমিশন বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছে। সেখান থেকে অঙ্গীকারনামার যে ড্রাফট দেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা লিখিত মতামত দিয়েছি। যেসব বিষয় পরে টিকবে না, সেগুলো এতে উত্থাপন করা ঠিক হবে না।

সালাহউদ্দিন বলেন, কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না, তেমন কোনো দলিল হতে পারে না, সংবিধানের ওপর সনদকে স্থান দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। এর বাইরেও অনেক পন্থা থাকতে পারে যাতে আমরা এটার বৈধতা দিতে, আইনি ভিত্তি দিতে পারি। আপিল বিভাগের পরামর্শ নিতে পারি আমরা, এটা এক্সট্রা কনিস্টিটিউশনাল অর্ডার বা স্পেশাল কনিস্টিটিউশনাল অর্ডার করা যায় কিনা। তাহলে ভবিষ্যতে জুডিশিয়ালিতে এটা চ্যালেঞ্জ করলেও বলতে পারবে আমরা মতামত নিয়েছিলাম। এখন সেই পরামর্শ আপনারা দিতে পারেন, নাও পারেন।

তিনি বলেন, স্পেশাল কনিস্টিটিউশনাল অর্ডারে আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) করলেন। আমরা কেউ কিছু বললাম না। ঐকমত্য কমিশন থেকে আমরা আপনাকে দায়িত্ব দিলাম, সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে আপনি সিদ্ধান্ত দেন। তারপর আপনি করলেন। কিন্তু যেকোনো একজন নাগরিক যদি এটা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে কোথাও যায়, সেটা আপনার গ্লোবাল রিপোটেশন নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। আমরা অনেক আলোচনা করেছি, সেখান থেকে আপনি কোনো মতামত নিতে পারে। সেই স্বাধীনতা আপনার আছে।

গত ১৫ বছরে আওয়ামী আমলে বিএনপি সবচেয়ে বেশি অবিচারের শিকার হয়েছে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা গুম-হত্যা-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। বিচার চলবে, এটা আমাদের কমিটমেন্ট, জাতির কমিটমেন্ট। কিন্তু নির্বাচনকে এটা কন্ডিশনাল করা যাবে না। আর যদি ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যেকোনো করম একটা অনিশ্চিত পরিবেশ সৃষ্টি হয়, সেটা ফ্যাসিবাদ চেষ্টা করছে। আমরা যদি এমন কোনো কর্মকাণ্ড করি যে ফ্যাসিবাদী শক্তি সুযোগ পাবে, আস্কারা পাবে সেটা আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য অনেকে বলছেন, এটা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে। আমি বলছি, এটা রিজিওনাল সিকিউরিটির জন্য থ্রেড হতে পারে। এখানে দুইটা রিজিওনাল শক্তি, আমরা বাংলাদেশকে সেখানে নিতে চাই না। নির্ধারিত টাইমলাইনে নির্বাচন হতে হবে। 

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খানসহ ৪ জনের জামিন নামঞ্জুর Sep 14, 2025
img
ব্রাজিলের পর আবারও রিয়ালে ফিরতে চান আনচেলত্তি Sep 14, 2025
img
সিঙ্গেল-ইউজ প্লাস্টিক মুক্ত করতে সচিবালয়ে শুরু হচ্ছে চেকিং কার্যক্রম Sep 14, 2025
img
নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হবে শাকসু নির্বাচন! Sep 14, 2025
img
দোহায় আরব-মুসলিম শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতিসভায় যোগ দিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Sep 14, 2025
img

নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী

বিক্ষোভের নামে যা ঘটেছে, মনে হচ্ছে সব পরিকল্পিত Sep 14, 2025
img
রিজার্ভ বেড়ে ৩০.৫৯ বিলিয়ন ডলার Sep 14, 2025
img
পিএসসির নতুন সচিব আব্দুর রহমান Sep 14, 2025
img
খুলনায় ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে ১৬ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা Sep 14, 2025
img
নারীদের জন্য ১০০ আসনে সরাসরি ভোটের প্রস্তাব চসিক মেয়রের Sep 14, 2025
img
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ৫ সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন Sep 14, 2025
img
অভিনব উপায়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রতিবাদ জানাতে পারেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা Sep 14, 2025
img
পিএসসিকে সহায়তায় ৭৫ কর্মকর্তা সংযুক্ত Sep 14, 2025
img
এক নেত্রীকে শোকজ করল এনসিপি Sep 14, 2025
img
অনুমতি ছাড়া রাস্তা কাটলে ওয়াসার ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : মেয়র Sep 14, 2025
img
বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার আহ্বান তারেক রহমানের Sep 14, 2025
img
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব Sep 14, 2025
img
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলার শিকার স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা Sep 14, 2025
img
ধমক দিয়ে মতিউরকে স্ত্রী বললেন ‘তোমার জন্য এসব হয়েছে’ Sep 14, 2025
img
বিগ বসে নেহলের অভিযোগে অশান্তি, অমালকে কড়া কথা শোনালেন ফারহা Sep 14, 2025