'হ্যান্ডশেক বিতর্ক' নিয়েই বুঝি ভারত-পাকিস্তানের পরবর্তী যুদ্ধটা লেগে যাবে। গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুবাইয়ে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পর থেকে টান্টান উত্তেজনা দুই দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে। এশিয়া কাপের এই ম্যাচে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দেয়ার পর পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের সঙ্গে করমর্দন করেননি ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। এমনকি টসের পর পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান আলী আগার সঙ্গেও করমর্দন ও কুশল বিনিময় এড়িয়ে গেছেন ভারতের অধিনায়ক।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের জয়ে উইনিং শটটি আসে সূর্যকুমারের ব্যাট থেকেই। জয় নিশ্চিতের পরই সতীর্থ শিভম দুবেকে নিয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা দিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক। প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলাননি তিনি, যাকে অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ হিসেবেই আখ্যা দিচ্ছেন বেশিরভাগ ক্রিকেটপ্রেমী। এ নিয়ে টিভি অনুষ্ঠানে আলোচনাকালে ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমারকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি মোহাম্মদ ইউসুফ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৭ হাজারেরও বেশি রানের মালিক ইউসুফ পাকিস্তানের এক টিভি চ্যানেলে আলোচনার সময় ঘটান অবিশ্বাস্য কাণ্ড। হ্যান্ডশেক বিতর্ক নিয়ে আলোচনাকালে ইউসুফ বারবার যাদবকে 'শূকর' বলে উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক তাকে থামানোর চেষ্টা করলেও এই পাকিস্তানি কিংবদন্তি ভারত অধিনায়ককে গালি দিতেই থাকেন।
ইউসুফ বলেন, 'ভারত সিনেমার দুনিয়া থেকে বের হতে পারছে না। আম্পায়ার ব্যবহার করে, ম্যাচ রেফারির মাধ্যমে পাকিস্তানকে কষ্ট দিয়ে জেতার চেষ্টা করছে। এটা লজ্জাজনক।' এরপরই তিনি সূর্যকুমারকে 'শূকর' বলতে থাকেন। ইউসুফ পাকিস্তানের হয়ে ১৯৯৮ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ২৮৮টি ওয়ানডে, ৯০টি টেস্ট ও ৩টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। তার এই বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভালোভাবে নেয়নি ভারতের সমর্থকরা। তবে, পরে এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে ইউসুফ ব্যাখ্যা দেন।
তিনি লিখেছেন, 'আমি কোনো খেলোয়াড়কে অসম্মান করতে চাইনি। যে কেউ নিজের দেশের জন্য আবেগ ও মর্যাদার সঙ্গে খেলে, সে সম্মানের যোগ্য। কিন্তু যখন ইরফান পাঠান শাহিদ আফ্রিদিকে কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করছে বলে মন্তব্য করেছিলেন, তখন কেন ভারতীয় মিডিয়া ও জনগণ তাকে প্রশংসা করল? যদি মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে কথা বলা হয়, তাহলে সেটাকেও কি প্রত্যাখ্যান করা উচিত ছিল না?'
ইউসুফ যে ঘটনার উল্লেখ করেছেন তা সম্প্রতি আলোচনায় আসে ইরফান পাঠানের এক সাক্ষাৎকারে। সেখানে পাঠান জানান, যদিও তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আফ্রিদিকে ১১ বার আউট করেছিলেন, কিন্তু এই অলরাউন্ডারের মাঠের বাইরের আচরণ তাকে বেশি বিরক্ত করত। পাঠান বলেন, '২০০৬ সফরে আমরা করাচি থেকে লাহোর যাচ্ছিলাম। উভয় দলই একই ফ্লাইটে ছিল। আফ্রিদি এসে আমার মাথায় হাত দিয়ে চুল এলোমেলো করল। বলল, "কেমন আছো বাচ্চা?" আমি ভাবলাম—সে কবে থেকে আমার বাবা হলে? আমি তো কিছুই বলিনি। এরপর আফ্রিদি আমাকে কিছু খারাপ কথা বলল।'
এই সময় পাঠান আফ্রিদিকে চুপ করিয়ে দেওয়ার মতো মন্তব্য করেন, 'আব্দুল রাজ্জাক তখন আমার পাশে বসা ছিল। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম এখানে কী কী মাংস পাওয়া যায়। সে বলল বিভিন্ন পশুর মাংস পাওয়া যায়। তখন আমি বললাম, কুকুরের মাংস পাওয়া যায় কি? রাজ্জাক অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল কেন আমি এটা বলছি। তখন আমি বললাম—আফ্রিদি তো অনেকক্ষণ ধরে ঘেউ ঘেউ করছে, নিশ্চয়ই কুকুরের মাংস খেয়েছে। এরপর আফ্রিদি চুপ করে গেল। যদি কিছু বলত, আমি আবার বলতাম—দেখো, আবার ঘেউ ঘেউ করছে।'
পাঠান বলেন, এরপর থেকে আফ্রিদি আর কখনো তার সঙ্গে বাকযুদ্ধ করার চেষ্টা করেননি। হ্যান্ডশেক বিতর্কের পর পাকিস্তান এমনকি এশিয়া কাপ ২০২৫ থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকিও দিয়েছিল।