শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের শাস্তি চাইলেন নাহিদ

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দায়ীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে সমন্বয়কদের কীভাবে জোর করে আন্দোলন থেকে সরে আসার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল, আয়নাঘরে রেখে কীভাবে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা হয়েছিল সেসবসহ নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা আবারো তুলে ধরেন।

পাশাপাশি গণমাধ্যম কি এখন স্বাধীন আছে এমন প্রশ্ন করা হয় নাহিদ ইসলামের কাছে। তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় পক্ষে-বিপক্ষে কাজ করা দুই ধরনের গণমাধ্যমই ছিল। তবে আন্দোলনের পরে গণমাধ্যমের যে ধরনের সংস্কার হওয়ার কথা ছিল তা এখনো সেইভাবে হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আরও একজন। এদিন ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করছেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।

এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে তা শেষ না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল আজ পর্যন্ত কার্যক্রম মুলতবি রাখেন।

আগেরদিন জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ আখ্যা দিয়ে কোটাপ্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। তার মতে, এই বক্তব্য আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার একটি বৈধতা তৈরি করে দেয়। কারণ, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ন্যায্য আন্দোলন হলেই আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলা হতো, যাতে আন্দোলনের ন্যায্যতা খাটো হয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনার ওই মন্তব্যে দেশের শিক্ষার্থীরা অপমানিত বোধ করেন। সেই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়।

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ আরও বলেন, ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন যে আন্দোলন ঠেকাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট। পরদিন, ১৬ জুলাই সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। ওইদিন পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ শহীদ হন। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ওয়াসিমসহ আরও ছয়জন সেদিন প্রাণ হারান। ১৭ জুলাই ডিজিএফআই আন্দোলন প্রত্যাহার করে সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।

তিনি আরও বলেন, ১৭ জুলাই রাতে দেশব্যাপী পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৮ জুলাই সারা দেশে ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে আসেন। বিশেষ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা রাজপথে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। নাহিদের মতে, সেই সময় আন্দোলনের নেতাদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে এবং গ্রেপ্তার এড়াতে তারা আত্মগোপনে চলে যান।

নাহিদ আরও জানান, ওইদিন সারা দেশে বহু ছাত্র-জনতা আহত ও নিহত হন। রাতে দেশব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। একইভাবে ১৯ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালায়, ফলে ওইদিনও বহু মানুষ আহত ও নিহত হন।

গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ উত্থাপন করেছে।

মামলার অভিযোগপত্র মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা তথ্যসূত্র, ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা জব্দ তালিকা ও অন্যান্য দালিলিক প্রমাণ এবং ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠায় শহীদদের তালিকার বিবরণ রয়েছে। এ মামলায় ৮১ জনকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

পিএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অজনপ্রিয় সরকার যেকোনো সময়ই অজুহাত তৈরি করতে পারে: মাসুদ কামাল Sep 18, 2025
img
দেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়তে কৃষিখাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে: গভর্নর Sep 18, 2025
img
চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ ৩১ অক্টোবর : ইসি সচিব Sep 18, 2025
img
হোমবাউন্ড ট্রেলার প্রকাশ, তুলে ধরা হয়েছে বন্ধুত্ব ও সমাজের প্রভাবের গল্প Sep 18, 2025
img
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বিশাল রেকর্ড গড়লেন সালাহ Sep 18, 2025
img
আওয়ারাপান ২ থেকে সরে দাঁড়ালেন মানুশি ছিল্লার Sep 18, 2025
img
কৃষ সিরিজে ফিরছেন হৃতিক, থাকতে পারেন রাশ্মিকা Sep 18, 2025
দূর্নীতির প্রশ্নে নীরব মিঠু, মাথা নিচু করে আদালতে প্রবেশ Sep 18, 2025
ভোলায় মেঘনার তীরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন একটি অসহায় পরিবার! Sep 18, 2025
ভোলার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দুর্ভোগ পেরিয়ে পেল আধুনিক টার্মিনাল ভবন! Sep 18, 2025
বিসিবি সভাপতি হলে সব ধরনের ক্রিকেট ছাড়বেন তামিম Sep 18, 2025
যেভাবে ভালো নেতা হবেন Sep 18, 2025
img
রোহিঙ্গাদের জন্য ৫ লাখ ইউরো দেবে নেদারল্যান্ডস Sep 18, 2025
img
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই বাংলাদেশের হয়ে প্রথম শততম টেস্ট খেলবেন মুশফিক Sep 18, 2025
img
বলিউডে সিডনি সুইনির অভিষেক, প্রস্তাব পেল আড়াই হাজার কোটি টাকার Sep 18, 2025
img
এটা আমার বিষয় নয়, হ্যান্ডশেক বিতর্কে নির্ভার রউফ Sep 18, 2025
img
২৮ বছর পর 'ইক্কা'-য় একসঙ্গে জুটি বাধছেন সানি দেওল–অক্ষয় খান্না Sep 18, 2025
img
সাবেক এমপি বাহার ও তার মেয়ে সূচনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা Sep 18, 2025
img
প্রযোজকদের বাড়তি খরচ প্রসঙ্গে আমির খানের পাশে দাঁড়ালেন হর্ষবর্ধন রানে Sep 18, 2025
img
ইসির সংলাপে জাতীয় পার্টির ডাক পাওয়া প্রশ্নে সচিবের মন্তব্য Sep 18, 2025