৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে গরমিলের অভিযোগে ২৭ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) করা মামলায় আপত্তি জানিয়েছে আইজিডব্লিউ অপারেটরস ফোরাম (আইওএফ)। তাদের দাবি, এই টাকা ছিল সম্পূর্ণ তাদের নিজস্ব। তবুও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে তহবিল সংক্রান্ত সব তথ্য নিয়মিতভাবে বিটিআরসিকে দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, জানালে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিত অপারেটররাই। অথচ বিটিআরসি কিছুই জানায়নি। এছাড়া মামলায় মৃত ব্যক্তিকে আসামি করা দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেছেন আইওএফের আইনজীবী।
বিদেশ থেকে আসা ফোনকল প্রথমে গ্রহণ করে আইজিডব্লিউ অপারেটররা। এরপর আইসিএক্স ও মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কল পৌঁছায় সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের কাছে। এই সেবাদাতাদের মার্কেট উন্নয়ন তহবিলের ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে গরমিলের অভিযোগে গত শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশান থানায় ২৭ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিটিআরসি। বিষয়টি নিয়ে এরমধ্যেই টেলিকম খাতে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
মামলার পর আইনজীবীর মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আইজিডব্লিউ অপারেটররা। তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক কল থেকে প্রাপ্ত আয়ের ৪ শতাংশ অর্থ সেবাদাতারা নিজস্ব মার্কেট উন্নয়ন তহবিলে জমা দিয়ে আসছে। ২০১৫ সালে সাত প্রতিষ্ঠান মিলে আইওএফ গঠনের পর থেকে এই তহবিলের ব্যয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়েছে।
এমনকি তহবিল সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য নিয়মিতভাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সরবরাহ করা হয়েছে বলেও দাবি তাদের। এরপরও যদি অর্থ ব্যয়ে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা তুলত, তবে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতো বলেও জানিয়েছে আইওএফ।
আইওএফের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ড. সৈয়দা নাসরিন বলেন, ‘বিটিআরসির দায়িত্ব ছিল ক্ষতিগ্রস্তদের সরাসরি চাপ না দিয়ে, যদি কেউ প্রকৃতপক্ষে দায়ী হয়ে থাকে তবে তাদেরকে শনাক্ত করে আইওএফকে জানানো। যাতে প্রয়োজনে আইওএফ মামলা করে সহযোগিতা করতে পারে। কিন্তু কোনো রকম নোটিশ না দিয়েই হঠাৎ এমন পদক্ষেপ নেয়া হলে তা আইওএফ কিংবা আইজিডব্লিউ অপারেটরদের ওপর অযাচিত চাপ তৈরি করবে।’
সাত প্রতিষ্ঠান নেতৃত্ব দিলেও মামলা হয়েছে সবার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে মামলার ১৮ নম্বর আসামি আজিজুল হক এরই মধ্যে মারা গেছেন। বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন আইওএফের আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘যারা টাকা নিয়েছে, সেটা তাদের দায়দায়িত্ব। কিন্তু এখন অভিযোগ আনা হয়েছে যে আইজিডব্লিউ সদস্যরা টাকা দিয়ে আবার নিজেরাই আত্মসাৎ করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্তরাই যদি অভিযুক্ত হয়ে যান, তবে তাদের প্রতিকার কোথায় মিলবে, সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মার্কেট ডেভেলপমেন্ট সাপোর্ট (এমডিএস) তহবিলে জমা ছিল ৬৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খরচ হয়েছে ৬২৫ কোটি ৮৩ লাখ ৫২ হাজার ৪৫৬ টাকা। ব্যয়ের এই বিপুল অংশের ৯৫ শতাংশই জমা হয়েছে আইজিডব্লিউ লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো কম্পিউটারস লিমিটেডের অ্যাকাউন্টে।
এসএস/এসএন