কোডিং আর আগের মতো নেই। আগে যেখানে ডেভেলপারদের ঘন্টার পর ঘন্টা বসে কোড লিখতে হতো। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অনেক কাজ করে দিচ্ছে মুহূর্তেই। গুগলের নতুন এআই টুলস জেমিনি সিএলআই আর জেমিনি কোড অ্যাসিস্ট, ডেভেলপারদের জন্য তৈরি করছে এক নতুন দুনিয়া।
গুগলের ডেভেলপার টুলস প্রজেক্ট ম্যানেজার রায়ান সালভা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এআই এখন শুধু সহায়কের ভূমিকায় নেই। বরং ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে উঠছে। তার মতে, আগামী দিনে প্রোগ্রামারের ভূমিকা অনেকটা স্থপতির মতো হবে যেখানে ডেভেলপাররা বড় সমস্যাকে ভেঙে ছোট ছোট সমাধানযোগ্য কাজ হিসেবে সাজাবেন, আর কোড লিখে দেবে এআই।
এআই টুলসের ব্যবহার নিয়ে গুগলের গবেষণা
প্রতি বছর গুগল ডেভেলপার ট্রেন্ডস নিয়ে সমীক্ষা করে। তবে এবারের জরিপে মূল ফোকাস ছিল এআই টুলস। সেখানে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ডেভেলপার এপ্রিল ২০২৪ থেকে এআই ব্যবহার শুরু করেছেন। এই সময়েই বাজারে আসে Claude 3 এবং Gemini 2.5। যা কোডিং টাস্কে বিপ্লব ঘটায়।
সালভার ভাষায়, “কোডিংয়ের সময় মডেলকে শুধু কোড লিখলেই হবে না। বরং বাহ্যিক তথ্যও ব্যবহার করতে হবে। এজন্য টেস্ট চালানো, কম্পাইল করা, ভুল ধরতে পারা এসব জায়গায় এআই এখন নিজে নিজে ঠিক করতে পারছে। এটাই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন।”
নিজের কাজেও এআই ব্যবহার করেন গুগল ম্যানেজার
রায়ান সালভা জানিয়েছেন, তিনি এখন বেশির ভাগ সময় কোড লেখেন না। বরং এআইকে দিয়ে করান। কোনো বাগ রিপোর্ট এলে তিনি প্রথমে Gemini CLI ব্যবহার করে একটি বিস্তারিত রিকোয়ারমেন্ট ডকুমেন্ট তৈরি করেন। এরপর সেই ডকুমেন্টের ভিত্তিতেই এআই কোড লিখে ফেলে।
“আমার কাজের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ আমি ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে করি। টার্মিনালে বসে Gemini CLI-কে নির্দেশ দেই, আর সেটা কোড লিখে দেয়। আমি শুধু শেষ ধাপে কোড পড়ে দেখি, রিভিউ করি,” বলেন সালভা।
ভবিষ্যতের কোডিং: কম কোড, বেশি চিন্তা
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী এক দশকে ডেভেলপারের মূল ভূমিকা হবে বড় ছবি দেখা— একটি প্রজেক্টের কাঠামো, ব্যবহারকারীর প্রয়োজন আর আউটপুট নিয়ে চিন্তা করা। কোডের লাইন লেখা আর প্রধান কাজ থাকবে না।
সালভা মনে করেন, “আগে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের তিনটি মূল জায়গা ছিল—আইডিই (IDE), ব্রাউজার আর টার্মিনাল। কিন্তু সামনে ডেভেলপাররা অনেক বেশি সময় ব্যয় করবেন রিকোয়ারমেন্ট ঠিক করতে। আর কোড জেনারেশন করে দেবে এআই।”
নতুন এক যাত্রার শুরু
গুগলের এআই টুলস শুধু কোড লেখাই নয়, বরং ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়ায় নতুন ধারা তৈরি করছে। কোডিংয়ের পরিশ্রম কমে আসছে। তবে ডেভেলপারদের প্রয়োজন হবে কৌশলগত চিন্তাভাবনা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা আর সৃজনশীলতা। প্রযুক্তি দুনিয়ার অনেকেই বলছেন, এ পরিবর্তন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টকে শুধু সহজ করবে না, বরং নতুন প্রজন্মের ডেভেলপারদের জন্য পুরো খেলার নিয়মই বদলে দেবে।
এবি/এসএন