‘ইন্টারনেট পাবো কোথায়? ইন্টারনেট পোড়ায় দিছে। জীবনে... আমি তো আর আনবো না, যদি অন্য সরকার আসে তাহলে আনবে... আমি দিছি ইন্টারনেট, ওরা পোড়াইতে থাকুক, ওইটা চলতে হবে...’ শেখ হাসিনার এমন কথার জবাবে জাসদ সভাপতি হাসানুল ইনুর বলেন- ‘অন্য সরকার, বাংলাদেশে ইনশাআল্লাহ অন্য সরকার আসবে না।’ প্রতিত্তোরে হাসিনা বলেন- ‘আসুক, না আমি আর পারবো না... যাচ্ছি এখন।’
এমন কথোপকথন উঠে এসেছে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর ফোনালাপে।
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ২২তম দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ ছিল বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর)। এদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্য দেন মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা। জবানবন্দি শেষে চারটি ফোনালাপ শোনানো হয়। এর মধ্যে একটি শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর।
কথোপকথনটি পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো—
হাসানুল হক ইনু : হ্যালো, জি জি আসসালামু আলাইকুম।
শেখ হাসিনা : হ্যাঁ, ওয়ালাইকুমুস-সালাম! কী হইছে?
হাসানুল হক ইনু : ইনু বলছিলাম... না একটা কথা। আমি মনে করি আপনার পদক্ষেপটা সঠিকই হয়েছে। এখন পর্যন্ত যা রিপোর্ট বাংলাদেশে পাচ্ছি আরকি। খালি ঢাকাতে আপনার রামপুরার দিকে এবং...
শেখ হাসিনা : না রামপুরা ক্লিয়ার, শনির আখড়ায় একটু ঝামেলা এখন আছে।
হাসানুল হক ইনু : শনির আখড়ায় কিছু মোল্লারাই রয়েছে।
শেখ হাসিনা : হ্যাঁ জানি। খালি মোল্লা না ওইখানে অনেক মাদরাসা।
শেখ হাসিনা : ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ওখানে মাইকিং করতে হচ্ছে আরকি। নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে দিচ্ছে না আর্মিকে আমরা... নামাচ্ছি।
হাসানুল হক ইনু : ও আচ্ছা...।
শেখ হাসিনা : না আমি বলছি ক্যাজুয়াল্টির দরকার নেই। ওরা ব্যারিকেড দিয়ে আছে তো, ঠিক আছে, আকাশ থেকে নামবে, তখন দুই পাশ দিয়ে ধরবে... মেসেজটা দিয়ে দিতে পারেন যে, সেনা পাঠানো হচ্ছে আর হেলিকপ্টার দিয়ে সোজা বোম্বিং করা হবে। র্যাবের হেলিকপ্টার দিয়ে ওপর দিয়ে মারবে।
হাসানুল হক ইনু : আচ্ছা ওপর দিয়ে সাউন্ড বোম যাবে আরকি, ঠিক আছে! আমি একটা পয়েন্ট আপনাকে একটু নজরে আনার জন্য রিকোয়েস্ট করতেছি। ‘কারফিউ’ ধরেন দুই-পাঁচদিন চলল। কিন্তু কারফিউয়ের পর যেন আর মিছিল না নামতে পারে সেজন্য একট হোমওয়ার্ক করা দরকার যে রকম আমি উত্তরা, বাড্ডা, গুলশান, যাত্রাবাড়ীতে যারা মিছিল লিড করছে সেইগুলা চিহ্নিত করা আরকি। ছাত্রদল, বিএনপির ছেলে-মেয়ে, ছেলেরা, শিবিরের.. মানে ধরেন রিজভীকে এরেস্ট করা বা রুহুলকে এরেস্ট করা ইর্ম্পোটেন্ট না, ইর্ম্পোটেন্ট হচ্ছে ওইখানে গ্রাউন্ডে যে মিছিলটা লিড করেছে। কুষ্টিয়া জেলার এসপি সেভাবে অলরেডি তালিকা করে ফেলছে। ওখানে কোনো সংঘর্ষ হয়নি। একটা ছররা গুলিতে খালি একজনের পায়ে লাগছে, উনি ম্যানেজ করছে। উনি অলরেডি কম্পিউটারে ছবি দেখে দেখে ছেলেগুলার তালিকা করতেছে। আমি বলেছি, ছেলেগুলাকে আজকে রাত্রের ভেতরে পিকআপ করে নিতে।
শেখ হাসিনা : হ্যাঁ শিওর।
হাসানুল হক ইনু : যেন মিছিলটা লিড না করতে পারে। তাই আমি ঢাকা শহরের জন্য বলছি, আপনার গোয়েন্দারা নিশ্চয়ই তালিকা করতে পারবে যে উত্তরায় কারা।
শেখ হাসিনা : খালি গোয়েন্দারটা না, লোকাল লিডারদেরও করা উচিত।
হাসানুল হক ইনু : লোকাল লিডার ওইখানে এমপি খসরু ও হাসান হাবিব আছে। হাসান হাবিব রাগ করে খসরুর ওপর ছেড়ে দিছে যে এমপি সাহেব মোকাবিলা করুক...।
শেখ হাসিনা : খসরু তো পারবে না, খসরু তো লোকাল না, হাসান তো লোকাল, ওদের তো লোকজন আছে।
হাসানুল হক ইনু : লোকাল নাতো। রাইট, হাসান হাবিব নামেনি। আর এখানে ওয়াকিলও সামলাইতে পারেনি। ওদুই লাইনে পা দিয়ে চলে। আমার কথা হচ্ছে, একটু লোকাল লিডারদের সাহায্যে তালিকাটা করে নিয়ে আজকের রাত্রের ভেতরে সব কাস্টডিতে নিতে পারেন তাহলে কোনো জায়গায়... আর মোহাম্মদপুরে একটা পাঁয়তারা ছিল। কালকে আপনি রাত ১২টায় যেয়ে খুব ভালো করছেন। আজ কিন্তু গণভবন ঘেরাও করতো।কিন্তু মোহাম্মদপুরে ওইখান থেকে রেডি হচ্ছিল কালকে, মানে এইটা, সুতরাং...।
শেখ হাসিনা : হ্যাঁ এইটা কয়েকদিন ধরে করতেছে।
হাসানুল হক ইনু : ডিসিশনটা খুবই কারেক্ট হইছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা : থ্যাংকিউ, থ্যাংকিউ... আমরা হলাম রণক্ষেত্রের সাথী।
হাসানুল হক ইনু : রণক্ষেত্রের সাথী। তা আপনি একটু দয়া করে.. এই পিকআপটা করতে বলেন।
শেখ হাসিনা : এইটা বলা আছে, বলতেছি, বলতেছি।
হাসানুল হক ইনু : ওইটা একটু হোমওয়ার্ক করতে বলেন, করে এরেস্ট করে ফেলতে বলেন আজকে। মানে সবইকে এরেস্ট করে ফেললে আর মিছিল করার লোক থাকবে না।
শেখ হাসিনা : লিসেন, দাঁড়ান, দাঁড়ান। এরেস্ট করে....
হাসানুল হক ইনু : আরেকটা রিকোয়েস্ট। ইন্টারনেট আমার মনে হয় চালু করতে পারেন, এটা আমাদেরই কাজে লাগবে।
শেখ হাসিনা : ভাই কি যে চালু করবো সবতো পোড়াই দিছে। ডাটা সেন্টারও পোড়ায় দিছে। এখন ওই নতুন তারতুর কিনে জোড়া লাগাতে হবে।
হাসানুল হক ইনু : আমি যে কথাটা বলার চেষ্টা... আমি একাত্তরে রাত ৮টার সময় যাবো একা কথা বলবো। আমি বলবো যে সরকারের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীর কোনো বিরোধ নাই। সরকারের সঙ্গে বিরোধ হচ্ছে নাশকতাকারী বিএনপি-জামাতের।
শেখ হাসিনা : না ওইটা তো বলা হয়েছে। ওইটা আমি নিজেও বলছি...।
হাসানুল হক ইনু : এই জিনিসটা প্রোপাগান্ডায় আনতে হবে যদি ইন্টারনেট থাকে, গণমাধ্যম দিয়ে আমরা পুরা নিউজে ফ্লাড করে দিলাম...।
শেখ হাসিনা : ইন্টারনেট পাবো কোথায়? ইন্টারনেট পোড়ায় দিছে। জীবনে... আমি তো আর আনবো না, যদি অন্য সরকার আসে তাহলে আনবে।আমি দিছি ইন্টারনেট, ওরা পোড়াইতে থাকুক, ওইটা চলতে হবে..।
হাসানুল হক ইনু : অন্য সরকার, বাংলাদেশে ইনশাআল্লাহ অন্য সরকার আসবে না।
শেখ হাসিনা : আসুক, না আমি আর পারবো না... যাচ্ছি এখন।
হাসানুল হক ইনু : না না... যাওয়া দরকার নাই।
শেখ হাসিনা : জামাত শায়েস্তা করে থুয়ে যেতে হবে।
শেখ হাসিনা : আপনার যেখানে যেখানে লোক আছে তালিকাগুলো আপনারা করান, আমরাও করাচ্ছি।
হাসানুল হক ইনু : আপনি এই... জামাত শিবিরের মেরুদণ্ডটা আবার ভেঙে দেন ঢাকা শহরে।
শেখ হাসিনা : একেবারে...।
হাসানুল হক ইনু : এক্সপোজ হইছে আরকি, একটু দেখেন, আর আমি বাদবাকি আমাকে যেটা বলবেন আমি ইনশাআল্লাহ করবো, কোনো অসুবিধা নাই।
শেখ হাসিনা : না ওই তালিকাগুলো একটু করায় ফালান... এই ইস্যুতে যা পারেন, শিবির যে কয়টা আছে, যা আছে সব বের করেন।
হাসানুল হক ইনু : বুঝছি আমি বুঝছি। জি স্লামুয়ালাইকুম
শেখ হাসিনা : ঠিক আছে আচ্ছা।
ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্যরা।
এদিন সকালেও মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার অন্যতম আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে। তার উপস্থিতিতেই জবানবন্দি দিচ্ছেন সাক্ষীরা।
এমআর