সাধারণত লো স্কোরিং ম্যাচে লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতে ধীরস্থির মনোভাবে আগাতে দেখা যায় বেশিরভাগ দলকে। একই পরিস্থিতিতে গতকাল (বৃহস্পতিবার) ১৩৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের ব্যাটারদের মনোভাব ছিল ছটফটে। যেন তারা রাজ্যের তাড়া নিয়ে নেমেছিল। সেই প্রচেষ্টা তারা দ্রুত উইকেট পড়তে থাকলেও চালিয়ে গেছেন। উইকেট হারানোর এই প্রতিযোগিতা শেষে ১২৪ রানে অলআউট হয়ে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত করে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
অথচ সুপার ফোরে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের শেষ ম্যাচটি ছিল অলিখিত সেমিফাইনাল। জিতলেই ফাইনাল, হারলে স্বপ্নভঙ্গ। এশিয়া কাপ খেলতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের এই দলটার কাছে ছিল জয়টাই মুখ্য। এমনকি টুর্নামেন্টের মাঝেও হংকংয়ের মতো দলের বিপক্ষে আগ্রাসী ব্যাটিং দেখাতে না পারায় বিষয়টি আলোচনায় উঠেছিল। তখনও সাবেক ক্রিকেটারদের কেউ কেউ একই বুরি আওড়ে গেছেন। কিন্তু পাকিস্তান ম্যাচে সেই ‘জয়টাই মুখ্য’ ধারা থেকে বেরিয়ে অদ্ভুত তাড়া দেখান টাইগার ব্যাটাররা।
কেন এত তাড়াহুড়া করলেন ব্যাটাররা? ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের জবাব, ‘ভুল সিদ্ধান্ত (হাসি)। বিশ্বের অন্যান্য দলেরও এমন দিন যায়। আজকে আমাদের এমন দিন গেছে। আমাদের সিদ্ধান্ত ও শট সিলেকশন সেরা ছিল না আজ।’ টাইগারদের ব্যাটিং অর্ডারে কোনো সমস্যা নেই বলেও মনে করেন সিমন্স, ‘আমরা রান তাড়া করতে জানি। এই উইকেটেই একই ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে ১৬০+ রান তাড়া করেছি। সেদিন ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তগুলো বেটার ছিল। ফলে ব্যাটিং অর্ডারে কোনো সমস্যা নেই, সিদ্ধান্তগুলো বাজে হয়েছে।’
পাঁজরের চোটে ভোগা নিয়মিত অধিনায়ক লিটন দাসকে শেষ দুটি ম্যাচে পায়নি বাংলাদেশ। সেটাকেও অন্যতম বড় কারণ হিসেবে দেখালেন প্রধান কোচ, ‘আসলে আমরা এখনও এমন দল হইনি যেখানে অধিনায়ককে হারিয়ে সেই খালি জায়গা পূরণও করে ফেলব। আমরা এখনও সেখানে যেতে পারিনি। আমরা সেখানে যেতে চেষ্টা করছি। ভালো ফর্মে থাকা অধিনায়ককে হারিয়েছি আমরা। এই ব্যাপারটা আমাদের জন্য বড় ছিল।’
এ ছাড়া বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ে দৃষ্টিকটু ক্যাচ মিসের বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। তাতে ফ্লাডলাইটের কোনো ভূমিকা ছিল কি না প্রশ্নে সিমন্স বলেন, ‘কিছু ক্যাচে লাইট একটা কারণ হতে পারে। আগের ম্যাচেরগুলোর সঙ্গে লাইটের সম্পর্ক ছিল না মনে হয়। ম্যাচের ব্যাপারে বললে শাহিনের (শাহিন শাহ আফ্রিদি) ক্যাচ ছাড়ার পর সে দুটি ছক্কা মেরেছে। (মোহাম্মদ) নওয়াজের ক্যাচও ড্রপ হয়েছে। ফলে এখানেই ম্যাচ বের হয়ে গেছে। এর আগপর্যন্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল।’
১৩৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের পরিকল্পনা কী ছিল জানান ফিল সিমন্স, ‘আসলে ১৩০ রান (মূলত ১৩৬) তাড়া করতে গিয়ে, আমরা চেয়েছি যেভাবে অনুশীলন করছি সেভাবেই খেলতে। ৬ ওভারে ১ বা ২ উইকেট হারিয়ে ৪০ রান করতে পারলেই চলত। ৬০ করলে আরও নিয়ন্ত্রণ আসত। এক ম্যাচে আমরা ৬০ নিয়েছি, আরেক ম্যাচে ৪৭। সেসব ম্যাচে ব্যাটাররা ভালো শুরু পেয়েছে। ভালো শুরুটা জরুরি ছিল। ৬ ওভার কাজে লাগানো দরকার ছিল।’
টানা দুই দিনে ভারত এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় দুটি ম্যাচ খেলতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তবুও সেটিকে অজুহাত হিসেবে দেখাতে রাজি নন ক্যারিবীয় এই কোচ, ‘আমার মনে হয় না এটা অজুহাত হতে পারে। আমি অজুহাত পছন্দ করি না। ব্যাক টু ব্যাক ম্যাচ খেললেও ফিট হলে আপনি শতভাগ দিতে পারবেন।’
এমকে/এসএন