ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টার্মার শুক্রবারে এক ভাষণে যুক্তরাজ্যজুড়ে বাধ্যতামূলক ডিজিটাল পরিচয়পত্র চালুর পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারি শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতে, অবৈধ অভিবাসন রোধ করার জন্য বাধ্যতামূলক ডিজিটাল আইডি স্কিম চালু হচ্ছে।
তবে এ স্কিম বাস্তবায়নের কারিগরি দিক নিয়ে পরামর্শ নেওয়া হবে। সেইসঙ্গে যাদের স্মার্টফোন বা পাসপোর্ট নেই, তাদের জন্য কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটিও বিবেচনা করা হবে।
পূর্ববর্তী লেবার সরকারের আইডি কার্ড চালুর চেষ্টাতে কনজারভেটিভ লিবারেল ডেমোক্র্যাট জোট বাধা দিয়েছিল। শুরুর দিকে এক সাক্ষাৎকারে স্যার কিয়ার বলেন, তখন থেকে আলোচনার ক্ষেত্র আরো এগিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা আগের তুলনায় অনেক বেশি ডিজিটাল পরিচয় বহন করি। মানসিকভাবে বিষয়টির গুরুত্বও এখন ভিন্ন।’
খবরে বলা হয়েছে, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন এই ডিজিটাল আইডি ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যে বসবাস ও কাজের বৈধতা যাচাই করা হবে। প্রতিটি পরিচয়পত্র একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। বর্তমানে এসব যাচাইকাজ মূলত কাগুজে নথির ভিত্তিতে হয়। যদিও ২০২২ সাল থেকে কিছু ক্ষেত্রে অনলাইনে যাচাইয়ের সুযোগ চালু হয়েছে।
গত বছরের নির্বাচনী ইশতেহারে লেবার ডিজিটাল আইডি স্কিমের কথা উল্লেখ করেনি। এমনকি সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার প্রস্তাব দিলেও সরকার তা নাকচ করে দিয়েছিল। তবে সম্প্রতি অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রীরা এ পরিকল্পনা নিয়ে ক্রমশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
ক্যাবিনেট অফিস মন্ত্রী প্যাট ম্যাকফাডেনও বলেছেন, সরকারি সেবায় প্রবেশাধিকার উন্নত করতেও এ স্কিম কাজে আসতে পারে। তিনি সম্প্রতি এস্তোনিয়া সফর করেছেন, যেখানে ডিজিটাল পরিচয় ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবা, ভোটদান, ব্যাংকিংসহ নানা সুবিধা পাওয়া যায়।
বিরোধী দলগুলোর সমালোচনা
কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাদেনক বলেছেন, ‘বাধ্যতামূলক পরিচয় চালু করা একটি খুব গুরুতর পদক্ষেপ, যা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সঠিক বিতর্ক দরকার।’ তিনি এ ঘোষণার সমালোচনা করেন। তার দাবি, ডিজিটাল আইডি যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে কাজ করার সমস্যার সমাধান করবে না।
রিফর্ম ইউকে দল এ পরিকল্পনাকে ভোটারদের ভুল পথে চালানোর ‘কৌশলী চাল’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, ‘যারা আগেই অভিবাসন আইন ভঙ্গ করেছেন, তারা হঠাৎ করে মান্য করবে -এ ধারণা হাস্যকর। ডিজিটাল আইডির কোনো প্রভাব পড়বে না অবৈধ কাজে। বরং এটি আইন মেনে চলা সাধারণ ব্রিটিশদের স্বাধীনতার ওপর বাড়তি হস্তক্ষেপ।’
যারা আগে আইডি কার্ড চালুর উদ্যোগ আটকে দিয়েছিল সেই লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা জানিয়েছে, তারা বাধ্যতামূলক কোনো স্কিম সমর্থন করতে পারবে না। দলের প্রযুক্তি বিষয়ক মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া কলিন্স বলেন, ‘মানুষকে কেবল ডিজিটাল আইডি না থাকায় বা না নিতে চাওয়ায় অপরাধী বানানো ঠিক নয়।’
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নিয়োগকর্তাদের সম্ভাব্য কর্মীদের কাজের অধিকার আছে কি না, তা যাচাই করতে হয়। ২০২২ সাল থেকে ব্রিটিশ ও আইরিশ পাসপোর্টধারীরা সরকারি অনুমোদিত ডিজিটাল যাচাই সেবা ব্যবহার করে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারছেন। একই সঙ্গে হোম অফিসের একটি অনলাইন ব্যবস্থা রয়েছে, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু বিদেশি নাগরিকের অভিবাসন অবস্থা যাচাই করা হয়। সরকার ধাপে ধাপে বিদেশি বাসিন্দাদের কাগুজে পারমিট তুলে দিয়ে অনলাইন-ভিত্তিক ই-ভিসা চালু করছে।
সরকারি কর্মকর্তারা এখন খতিয়ে দেখছেন, ডিজিটাল আইডি বাধ্যতামূলক করলে পরিচয় যাচাই প্রক্রিয়া আরো সুনির্দিষ্ট ও একীভূত করা সম্ভব কি না।
তবে নাগরিক অধিকার রক্ষাকারী সংগঠন ওপেন রাইটস গ্রুপ সতর্ক করে বলেছে, ই-ভিসা চালুর সময় ডেটা ত্রুটি ও সিস্টেম বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে। তাদের মতে, নতুন প্রস্তাব কার্যকর হলে নাগরিকদের প্রতিনিয়ত পরিচয় প্রমাণ করতে বাধ্য করা হবে, যা এক ধরনের ‘প্রি-ক্রাইম রাষ্ট্র’ তৈরির ঝুঁকি তৈরি করবে। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টার্মার অভিবাসন ঘিরে তৈরি হওয়া উত্তেজনা নিয়েও কথা বলবেন।
সূত্র : বিবিসি
পিএ/এসএন