টিকটকের মার্কিন অংশ যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনতে যে চুক্তি হয়েছে, তার বৈধতা দিয়ে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট লিখেছে, এই চুক্তি অনুযায়ী টিকটকের মার্কিন অংশের বেশিরভাগ শেয়ারের মালিক হবেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কয়েকজন বিনিয়োগকারী। টিকটকের মূল চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্সের হাতে মালিকানার কিছু অংশ থাকলেও অ্যাপের অ্যালগরিদমের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছেই রাখছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে যে অনিশ্চয়তা চলে আসছিল, এর মধ্য দিয়ে তার অবসান হতে চলেছে।
৩৫ কোটি মানুষের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭ কোটি। কিন্তু দারুণ জনপ্রিয় এই শর্ট ভিডিও অ্যাপের মালিক চীন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অভিযোগ ছিল, মার্কিন ব্যবহারকারীদের তথ্য চীনে ‘পাচার করে দিচ্ছে’ টিকটক। যদিও টিকটকের মূল মালিক বাইটড্যান্স সে অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে।
এ নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের এক পর্যায়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বছর একটি আইন পাস করেন, যেখানে বলা হয়, বাইটড্যান্সকে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ব্যবসা বিক্রি করে দিতে হবে, তা না হলে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যাবে।
এর বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিল বাইটড্যান্স। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এ বছর জানুয়ারিতে ওই আইন বৈধ ঘোষণা করে। ফলে বাইডেনের আদেশই বহাল থাকে।
বাইডেনের বেঁধে দেওয়া সময়ে বাইটড্যান্স মালিকানা না ছাড়ায় যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক বন্ধ হয়ে যায়, তবে সেটা এক দিনের জন্য। ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি নির্বাচনি প্রচারের সময় টিকটকের প্রশংসাই করেছিলেন।
দ্রুত এক নির্বাহী আদেশে সই করে ট্রাম্প টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সময়সীমা বাড়িয়ে দেন। এরপর সেই সময় আরো তিন দফা বাড়ানো হয়। এর মধ্যে চলতে থাকে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশাল’-এ ঘোষণা দেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার টিকটক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ভবিষ্যত নিয়ে তারা একটি চুক্তির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।
এরপর ২১ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউস জানায়, নতুন চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের বোর্ড এবং অ্যালগরিদম নিয়ন্ত্রণ করবে বিভিন্ন মার্কিন কোম্পানি।
সব আলোচনা শেষে বৃহস্পতিবারের নির্বাহী আদেশে সেই চুক্তিকেই বৈধতা দিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেখানে বলা হয়েছে, টিকটকের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে যেসব শর্ত মানা প্রয়োজন ছিল, বাইটড্যান্স তা পূরণ করেছে।
চুক্তি অনুযায়ী বাইটড্যান্স থেকে টিকটকের মার্কিন অংশ আলাদা করে নতুন এক কোম্পানি তৈরি হবে, যার বেশিরভাগ অংশের মালিকানায় থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানি।
আমেরিকান সংবাদমধ্যম সিএনবিসি বলেছে, বিনিয়োগকারীদের এ দলের মধ্যে থাকবে ওরাকল, সিলভার লেক ও এমজিএক্স। তাদের কাছে অ্যাপটির মার্কিন অংশের মোট ব্যবসার ৪৫ শতাংশ মালিকানা থাকবে।
এ দলে মার্কিন সফটওয়্যার কোম্পানি ওরাকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন ট্রাম্প। এ চুক্তির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মাইকেল ডেল ও রুপার্ট মারডকের থাকার কথাও তিনি বলেছেন।
নতুন মার্কিন কোম্পানিতে টিকটকের বর্তমান মালিক বাইটড্যান্সের হাতে থাকবে ১৯.৯ শতাংশ শেয়ার। বাকিটা যাবে একদল বিনিয়োগকারীর কাছে, যার মধ্যে বাইটড্যান্সের আগের বিনিয়োগকারীরাও রয়েছেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, টিকটকের মার্কিন অংশের দাম হবে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।
ভবিষ্যতে টিকটকের অ্যালগরিদম এবং নিরাপত্তা তদারকি করবে ওরাকল। আগেও অ্যাপটির ডেটা নিরাপত্তার কাজে সহযোগিতা করেছিল এ মার্কিন কোম্পানি।
ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে সই করার পর ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স সাংবাদিকদের বলেছেন, টিকটকের ‘অ্যালগরিদম কীভাবে ব্যবহারকারীদের কাছে কনটেন্ট দেখায়’ এ চুক্তির মাধ্যমে সে বিষয়টির নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করবেন মার্কিন বিনিয়োগকারীরা।
নতুন পরিকল্পনায় অ্যালগরিদম ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ বিষয়ক কনটেন্টকেই বেশি গুরুত্ব দেবে কি না–সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি চান অ্যাপটি পুরোপুরি ‘মাগা’ (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) সমর্থক হোক। তবে বাস্তবে অ্যাপটি ‘সবার সঙ্গে ন্যায়বিচার’ বা সমান আচরণ করবে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, এ চুক্তিতে ‘সম্পূর্ণ সমর্থন’ দিয়েছে চীন।
এমআর/টিকে