ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের মঞ্চ থেকে তীব্র আক্রমণাত্মক ভাষায় পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা করেছেন। ফ্রান্স, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বেশ কয়েকটি দেশ সম্প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সমালোচনা করে শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) তিনি বলেছেন, এসব দেশ পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদমাধ্যম, ইসলামপন্থি গোষ্ঠী ও ইহুদিবিরোধী চাপে নতি স্বীকার করেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
নেতানিয়াহুর বক্তব্য শুরুর আগেই বহু কূটনৈতিক প্রতিনিধি সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। তবে গ্যালারিতে থাকা অনেক অংশগ্রহণকারী দাঁড়িয়ে তাকে অভিবাদন জানান। তিনি অভিযোগ করেন, বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতা প্রকাশ্যে আমাদের নিন্দা করলেও গোপনে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সহযোগিতার প্রশংসা করেন, যা তাদের রাজধানীতে বহু হামলা প্রতিরোধ করেছে। গাজা যুদ্ধে ৬৫ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানির মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’র অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। তবে তিনি শুক্রবার ‘গণহত্যার মিথ্যা অভিযোগ’ বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
হিব্রু ভাষায় বক্তব্য রাখা নেতানিয়াহু গাজায় আটক থাকা প্রায় ২০ জন জীবিত জিম্মিকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘আমরা তোমাদের ভুলিনি, এক সেকেন্ডের জন্যও না।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার জানান, যুদ্ধ শেষ করা ও জিম্মিদের মুক্তির চুক্তি ‘কাছাকাছি’। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। সোমবার নেতানিয়াহু হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্প ইতোমধ্যেই ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে পশ্চিম তীর দখল বা সংযুক্তির কোনও পদক্ষেপ ‘গ্রহণযোগ্য নয়’। এতে দুই নেতার আলোচনায় অস্বস্তি তৈরি হতে পারে।
মার্কিন ভিসা না পাওয়ায় ভিডিও বার্তায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জাতিসংঘে ভাষণ দেন। তিনি গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে ‘গণহত্যা’র অভিযোগ এনে পশ্চিমা দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান যারা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আব্বাস বলেন, যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা পরিচালনার জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত, তবে হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে।
নেতানিয়াহুর জোট সরকারের কয়েকজন চরমপন্থি মন্ত্রী বলছেন, পশ্চিম তীরে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা উচিত। তবে ট্রাম্প এরই মধ্যে স্পষ্ট করেছেন, ‘এটি ঘটতে দেওয়া হবে না।’
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাইছেন যতক্ষণ না হামাস পুরোপুরি ধ্বংস হয়। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতি, আন্তর্জাতিক চাপ এবং যুদ্ধক্লান্ত ইসরায়েলি জনমত তাকে ক্রমশ কোণঠাসা করে তুলছে।
ইউটি/টিএ