জাতিসংঘে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাকে বাথরুমে লাঞ্ছিতের অভিযোগ

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় বাথরুমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটেছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতিসংঘ ভবনের ভেতরে এক ‘উন্মাদ বামপন্থি’ ওই কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করে। এ ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র।

স্বাস্থ্য ও মানবসেবা দপ্তরের (HHS) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ওই কর্মকর্তা দপ্তরের নেতৃত্ব দলের সঙ্গে মন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রের সহায়ক হিসেবে নিউইয়র্কে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

গত শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আনা কেলি বলেন, একজন স্বাস্থ্য ও মানবসেবা দপ্তরের কর্মকর্তাকে জাতিসংঘে বাথরুম পর্যন্ত অনুসরণ করে, ভিডিও ধারণ করা হয়, শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয় এবং মৌখিকভাবে অপমান করা হয়। সৌভাগ্যবশত কর্মকর্তা নিরাপদ আছেন এবং হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এটি জাতিসংঘের বড় ধরনের নিরাপত্তা ব্যর্থতারই অংশ। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস তদন্ত করবে কীভাবে সহিংস বিক্ষোভকারী এত বড় জাতীয় নিরাপত্তা অনুষ্ঠান পর্যন্ত প্রবেশ করতে সক্ষম হলো।

ফক্স নিউজ ডিজিটাল জানিয়েছে, হামলাকারীর বিরুদ্ধে হামলা, হামলার চেষ্টা, গুরুতর হয়রানি এবং অস্ত্র রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে তাকে হেফাজত থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আগামী ১৩ নভেম্বর তার আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা রয়েছে।

হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আনা কেলি বলেন, জাতিসংঘকে জবাব দিতে হবে কেন প্রেসিডেন্ট ও তার স্টাফদের বিরুদ্ধে এ ধরনের উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা ক্ষুব্ধ মার্কিন প্রতিনিধিদলের একজন সদস্যকে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ভেতরে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। এ ধরনের হামলার দ্রুত তদন্ত হতে হবে এবং দায়ীদের শাস্তি পেতে হবে।

তিনি আরও যোগ করেন, জাতিসংঘ এখন এমন এক জায়গায় পরিণত হয়েছে যেখানে আমেরিকান প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হয়রানি ও হামলার শিকার হন। যদি নিজেদের ভবনের ভেতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারেন, তবে কীভাবে নিজেদের বিশ্বের কূটনৈতিক কেন্দ্র দাবি করেন? এ সময় তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ সংস্কার ও পর্যালোচনার দাবি জানান।

এদিকে হামলার শিকার কর্মকর্তা ফক্স নিউজ ডিজিটালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি ছিল খুবই দিশেহারা করে দেওয়ার মতো। আমি যখন সামলে উঠলাম, তখনও এটি থামেনি। বুঝতে পারলাম আমাকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করা হচ্ছে এবং যে আলো আমার মুখে ফেলা হয়েছিল, সেটি আসলে একটি রেকর্ডিং ডিভাইস।’ 

তিনি জানান, হামলাকারী নারী ক্রমাগত গালাগাল করতে থাকেন এবং তাকে ‘ফ্যাসিস্ট’ ও ‘নাজি’ বলে অপমান করেন। এমনকি ফিলিস্তিনপন্থি আক্রমণাত্মক স্লোগানও দেওয়া হয়।

প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কর্মকর্তা বাথরুমে ঢুকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই নারী সেখানে গিয়েও চিৎকার করতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে বাথরুমের দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন। দরজা বন্ধ করতে সক্ষম হলে তিনি উপরে ক্যামেরা তুলে ভিডিও করতে থাকেন এবং আক্রমণাত্মকভাবে চিৎকার চালিয়ে যান।

উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে কিছু বিড়ম্বনায় পড়ার অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় ‘তিনটি নাশকতার’ অভিযোগ তুলে সেগুলোর তদন্ত দাবি করেছেন তিনি।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘গতকাল জাতিসংঘে সত্যি অপমানজনক ঘটনা ঘটেছে—একটা নয়, দুইটা নয়, তিন-তিনটা অত্যন্ত অশুভ ঘটনা। এটা কাকতালীয় নয়, জাতিসংঘে তিনটি নাশকতার ঘটনা ছিল এটি। তাদের নিজেদের নিয়ে লজ্জিত হওয়া উচিত।’

ট্রাম্প বলেন, ‘এটি পুরোপুরি নাশকতা ছিল…এস্কালেটরের সব নিরাপত্তা টেপ সেইভ করা উচিত, বিশেষ করে জরুরি স্টপ বাটনটি। সিক্রেট সার্ভিসেস যুক্ত আছে।’

ইউটি/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
কূটনৈতিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তি সই করলো বাংলাদেশ-উজবেকিস্তান Sep 28, 2025
img
রোহিঙ্গাদের পেছনে আর কোনো অর্থ খরচ করতে চাই না: ড. খলিলুর Sep 28, 2025
img
পিএসজির সহজ জয়, অবস্থান শীর্ষে Sep 28, 2025
img
ট্রাম্পের সঙ্গে ড. ইউনূসের ছবি নিয়ে প্রেস সচিবের মন্তব্য Sep 28, 2025
img
জামায়াত সুসংগঠিত দল, তবে ভোটের মাঠে তাদের জয় সম্ভব নয়: মির্জা ফখরুল Sep 28, 2025
img
দুপুরের মধ্যে ঢাকায় বজ্রপাতসহ বৃষ্টির আভাস Sep 28, 2025
img
টরন্টো মেসিদের রুখে দিলো Sep 28, 2025
img
থালাপতি বিজয়ের জনসভায় পদপিষ্টের ঘটনায় মোদি-রাহুলের শোকপ্রকাশ Sep 28, 2025
img
সারাদেশে দাঁড়িপাল্লার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে: অ্যাডভোকেট হেলাল Sep 28, 2025
img
দাম কমেছে স্বর্ণের, আজ থেকে কার্যকর Sep 28, 2025
img
থালাপতি বিজয়ের জনসভায় পদদলিত হয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৯ Sep 28, 2025
img
কারিনা-শহিদের বিচ্ছেদেই জন্ম নেয় বলিউডের কালজয়ী প্রেমের গান! Sep 28, 2025
img
দেশের মানুষ স্বৈরাচার আর পিআর দেখতে চায় না : আবু সাঈদ খান Sep 28, 2025
img
‘নেতানিয়াহু রাতে কীভাবে ঘুমান?’ প্রশ্ন আইরিশ প্রধানমন্ত্রীর Sep 28, 2025
img
দুর্গাপূজা ঘিরে র‍্যাবের কড়া নিরাপত্তা, মাঠে রয়েছে সাইবার টিম Sep 28, 2025
img
ট্রাম্প কি শান্তিতে নোবেল পাবেন? কি বলছেন বিশ্লেষকরা? Sep 28, 2025
img
দেশ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Sep 28, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Sep 28, 2025
২৭২ কিলোমিটার অবাধ প্রবাহ ইউরোপের ‘শেষ বন্য’ নদীর স্বীকৃতি পেল ভিওসা Sep 28, 2025
ক্ষমতায় গেলে তিন প্রতিজ্ঞার কথা জানালেন জামায়াতের আমির Sep 28, 2025