তামিলনাড়ুতে থালাপতি বিজয়ের জনসভায় পদদলিত হয়ে ৩৯ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু বাংলাদেশেও সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। মোস্তফা ফিরোজের আশঙ্কা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিলে বিপুল জনসমাগমের কারণে এমন দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। তাই নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর এখনই জনসভা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘ভয়েস বাংলা’-তে মোস্তফা ফিরোজ এ আশঙ্কা করেন।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘ভারতের থালাপতি বিজয় তামিলনাড়ুর অত্যন্ত জনপ্রিয় নায়ক। বর্তমানে তিনি রাজনীতিতে উত্থান ঘটাচ্ছেন এবং তার জনপ্রিয়তা নতুন এক মিশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই মিশনে শরিক হতে হাজার হাজার মানুষ সমর্থন দিচ্ছে। তবে সেই সমর্থনই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল ভারতের তামিলনাড়ুতে বিজয়ের জনসভায় একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। পদদলিত হয়ে নারী, শিশুসহ অন্তত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর থালাপতি বিজয় শোক জানিয়ে বলেছেন, এটি অসহনীয় যন্ত্রণা এবং অকল্পনীয় এক ঘটনা।’
মোস্তফা ফিরোজ আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকেও আমি এই ঘটনায় বিপদের আভাস দেখতে পাচ্ছি।
ঘটনাটি মূলত নির্বাচনী প্রচার অভিযানের অংশ ছিল। থালাপতি বিজয়ের জনপ্রিয়তার কারণে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে আসে। প্রচণ্ড গরমে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়, কারণ তিনি দেরিতে পৌঁছান। রোদের মধ্যে ক্লান্ত দর্শকরা যখন অবশেষে তাকে দেখতে পান এবং বক্তৃতা শুরু হয়, তখনই মাঝপথে ঘটে যায় এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এতে অনুষ্ঠানটি হঠাৎ থেমে যায়।
বর্তমানে পুরো ভারত এই ঘটনায় শোকে মুহ্যমান। একই সঙ্গে অনেক রাজনীতিক সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ বলছেন থালাপতি বিজয়কে গ্রেপ্তার করা উচিত, আবার কেউ প্রশ্ন তুলছেন কেন তার নিরাপত্তাব্যবস্থা এত দুর্বল ছিল।’
তিনি বলেন, ‘এটি আসলে একটি সতর্কবার্তা। বাংলাদেশেও আগামী নির্বাচনে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ধরুন, তারেক রহমান দেশে ফিরে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিলেন। বহুদিন অনুপস্থিত থাকার পর তার জনপ্রিয়তাকে ঘিরে বিভিন্ন অঞ্চলে বিপুল জনসমাগম ঘটতে পারে। একইভাবে জামায়াতও বড় বড় শোডাউন করতে পারে। যদিও তারা তুলনামূলকভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ তবু আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে বহুদিন পর একটি উৎসবমুখর নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শক্তি প্রদর্শন করবে, জনসভা করবে, ব্যাপক জনসংযোগ ঘটাবে। সেই ভিড়ে উসকানিদাতারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে পারে, এমনকি পদদলিত হওয়ার মতো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই নির্বাচন কমিশনের এখন থেকেই এ বিষয়ে ভাবা উচিত। বিশেষ করে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারের যুগে যদি বিশাল জনসভা আয়োজন অব্যাহত থাকে, তাহলে নানা ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যায়।’
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘আমাদের দেশে রাজনৈতিক জনসভায় প্রায়ই দেখা যায়, কোনো এলাকায় দুই গ্রুপের মিছিল বা নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থেকে সংঘর্ষ বাধে। আবার অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে তামিলনাড়ুর মতো দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থেকে যায়। তাই নির্বাচনী জনসংযোগ, সভা ও সমাবেশগুলো কিভাবে সীমিত পরিসরে, নিয়ন্ত্রিত সংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে করা যায়—সেটা আমাদের ভাবতে হবে।’
তামিলনাড়ুর সাম্প্রতিক এই ঘটনাটি আমাদের সবার জন্যই সতর্কবার্তা। এ নিয়ে শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, রাজনৈতিক দলগুলোকেও ভাবতে হবে—এ ধরনের হুড়োহুড়ি, ভিড় ও বিশাল জনসমাগম আদৌ প্রয়োজনীয় কি না। নতুবা তামিলনাড়ুর মতো ভয়াবহ ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি আমাদেরকেও বহন করতে হতে পারে।
এসএন