সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জায়ান্ট এক্স সোমবার সতর্ক করে জানিয়েছে, ভারতের এক আদালতের রায় অনুযায়ী পুলিশরা সরকারি পোর্টালের মাধ্যমে ‘স্বেচ্ছাচারীভাবে’ কনটেন্ট মুছে ফেলার নির্দেশ দিতে পারবে যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য হুমকি।
গত সপ্তাহে টেক-সিটি বেঙ্গালুরুসহ কর্ণাটক রাজ্যের হাইকোর্ট এক্সের করা আবেদন খারিজ করে দেয়। ওই আবেদনে এক্স অভিযোগ করেছিল, সরকার একটি বিশেষ পোর্টাল ব্যবহার করে কনটেন্ট সেন্সর করছে।
সরকার বলছে, তাদের অনলাইন পোর্টাল ‘সহযোগ’ কনটেন্ট মধ্যস্থতাকারীদের (যেমন এক্স ও ফেসবুক) কাছে নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়াকে স্বয়ংক্রিয় করতে সহায়তা করে।
সরকারি বয়ানে বলা হয়েছে, ‘এটির উদ্দেশ্য হলো অবৈধ কোনো অনলাইন তথ্য অপসারণ বা তার অ্যাক্সেস বন্ধ করার মাধ্যমে ভারতের নাগরিকদের জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস তৈরি করা।’
কিন্তু এক্সের অভিযোগ, এই পোর্টাল কর্মকর্তাদের শুধুমাত্র ‘অবৈধতা’ অভিযোগের ভিত্তিতেই কনটেন্ট মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে—যেখানে বক্তাদের জন্য কোনো বিচারিক পর্যালোচনা বা ন্যায্য প্রক্রিয়া নেই। এ ছাড়া প্ল্যাটফরমগুলোকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তারা অমান্য করলে ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হতে হবে।
এক্স বলেছে, এর ফলে ‘লাখ লাখ পুলিশ কর্মকর্তা স্বেচ্ছাচারী টেকডাউন নির্দেশ দিতে পারবেন’, যা ভারতের নাগরিকদের সাংবিধানিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘন করবে।
তবে কর্ণাটক হাইকোর্ট গত সপ্তাহে রায়ে জানায়, এক্সের আবেদন ‘মূল্যহীন’ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকতে পারে না।
আদালতের রায়ে বলা হয়, ‘স্বাধীনতার নামে নিয়ন্ত্রণহীন বক্তব্য আসলে আইনহীনতার লাইসেন্সে পরিণত হয়।’
আদালত আরো উল্লেখ করে, এক্স যুক্তরাষ্ট্রে টেকডাউন আদেশ মেনে চলে, কিন্তু ভারতে একই ধরনের আদেশ মানতে অস্বীকার করছে। তবে এক্স জানিয়েছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে।
২০২৩ সালে কর্ণাটক হাইকোর্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারবিরোধী মন্তব্য ও অ্যাকাউন্ট সরানোর নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করায় এক্সকে (তখনকার টুইটার) ৬১ হাজার ডলার জরিমানা করেছিল।
অধিকারকর্মীরা বলছেন, ভারতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এখন ব্যাপক হুমকির মুখে এবং বর্তমানে দেশটি ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০ দেশের মধ্যে ১৫১তম স্থানে রয়েছে।
ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ভারতে বর্তমানে ৯০০ মিলিয়নের বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে।
এবি/টিএ