বিদ্যুৎ ও পানি সংকটের বিরুদ্ধে যুব-নেতৃত্বাধীন ‘জেন জি’ আন্দোলনে উত্তাল পূর্ব আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কার। বিক্ষোভে প্রাণহানি ও সহিংসতার মধ্যেই দেশটির প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি রাজোয়েলিনা সরকার ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সোমবার টেলিভিশনে প্রচারিত জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট বলেন, “সরকারের সদস্যরা যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে থাকেন, তবে আমরা তা স্বীকার করছি এবং দুঃখ প্রকাশ করছি।”
এর আগে গত বৃহস্পতিবার থেকে দেশটিতে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়। ‘জেন জি’ নামে পরিচিত এ বিক্ষোভ রাজধানী আন্তানানারিভো থেকে শুরু হলেও এখন আটটি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক নিরাপত্তা বাহিনীর “অপ্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগের” নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, অন্তত ২২ জন নিহত এবং ১০০ জন আহত হয়েছেন। তিনি জানান, আটক ও মারধরের পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এমনকি সরাসরি গুলিও চালানো হয়েছে।
তবে মাদাগাস্কারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের দেওয়া পরিসংখ্যানকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, এসব তথ্য “গুজব বা ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে” সামনে আনা হয়েছে।
এদিকে সহিংসতা ও লুটপাটের খবরের পর পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটির রাজধানীতে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে কেবল বিক্ষোভকারীরা নয়, সাধারণ পথচারীও রয়েছেন। আবার অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন বিক্ষোভ-পরবর্তী সহিংসতা ও লুটপাটে।
এর আগে গত সপ্তাহে বিদ্যুৎ–জ্বালানি মন্ত্রীকে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে বরখাস্ত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট ও তার পুরো সরকারকে পদত্যাগের দাবি তোলেন।
একই দাবিতে সোমবার আবারও হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। সেই প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করেছেন ও সরকার ভেঙে দিয়েছেন এবং আগামী তিন দিনের মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য আবেদন গ্রহণ করা হবে। এর পর নতুন সরকার গঠন করা হবে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ‘টেলেভিজোনা মালাগাসি’তে ভাষণে রাজোয়েলিনা বলেন, “বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও পানি সংকটে যে ক্ষোভ, দুঃখ ও ভোগান্তি তৈরি হয়েছে, আমি তা বুঝতে পারি”। তিনি আরও জানান, তিনি তরুণদের সঙ্গে আলোচনা করতে চান।
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর ১৯৬০ সাল থেকে মাদাগাস্কার একাধিক গণঅভ্যুত্থানের মুখোমুখি হয়েছে। ২০০৯ সালের গণবিক্ষোভে সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্ক রাভালোমানানাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয় এবং রাজোয়েলিনা ক্ষমতায় আসেন।
২০২৩ সালে তৃতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার জন্য এবারের আন্দোলনই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইএ/টিকে