জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, ‘জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিক মেহেদী হাসানকে সাক্ষাৎকার দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মেহেদী হাসান একসময় বিবিসি ও আলজাজিরায় কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি নিজস্ব সংবাদমাধ্যম জিটিও পরিচালনা করছেন। তার নেওয়া সাক্ষাৎকার সবসময়ই আন্তর্জাতিক মহলে আলোচিত হয়।
এর আগে ২০১৭ সালেও তিনি ড. ইউনূসকে সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তখন ড. ইউনূস কেবল একজন নোবেলজয়ী ও বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে তিনি এসব কথা বলেন।
মাসুদ কামাল বলেন, ড. ইউনূসের এই সাক্ষাৎকারে আলোচনায় আনা হয় নির্বাচন কবে হতে পারে, সরকারের মেয়াদ কতদিন চলবে এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস জানান, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি, কেবল তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকায় সেটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম চালু হবে না। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হয়েছে, আওয়ামী লীগ নয়। তবে স্থগিতাদেশ যেকোনো সময় তুলে নেওয়া সম্ভব।
ড. ইউনূস আরো জানান, নির্বাচন কমিশন মনে করেছে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবে, তাই তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
মাসুদ কামাল বলেন, ড. ইউনূসের বক্তব্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয় সরকারের মেয়াদ নিয়ে। নেপালের উদাহরণ টেনে মেহেদী হাসান বলেন, সেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘোষণা দিয়েছিল ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অথচ ড. ইউনূসের সরকার আঠারো মাস পার করছে। কেন এই বিলম্ব? উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন।
তাদের সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, তা কেউ নির্ধারণ করে দেয়নি তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবেন কতদিন থাকবেন। ড. ইউনূস আরো জানান, কেউ কেউ মনে করছে নির্বাচন দিতে দেরি হচ্ছে, আবার কেউ বলছে সরকার ৫, ১০ কিংবা ৫০ বছরও থাকতে পারে। নানা মত আছে, তাই সিদ্ধান্ত নেবে তারাই কতদিন ক্ষমতায় থাকবে।
ড. ইউনূসের এই বক্তব্য নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন মাসুদ কামাল। তিনি বলেন, কোন ক্ষমতাবলে তিনি নিজেই নির্ধারণ করবেন কতদিন ক্ষমতায় থাকবেন? পৃথিবীর কেউ নিজের আয়ু নির্ধারণ করতে পারে না, আর একটি সরকারও নিজের ইচ্ছামতো ক্ষমতার মেয়াদ ঠিক করতে পারে না। এটি স্পষ্টতই ধৃষ্টতাপূর্ণ মনোভাব। তার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়েছে তিনি ক্ষমতায় থাকার সময়সীমা নিজেই ঠিক করতে চাইছেন। অথচ বাস্তবতা হলো, তিনি কতদিন ক্ষমতায় থাকবেন তা নির্ধারণ করবে দেশের সাধারণ মানুষ রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, দিনমজুর। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই সরকারের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে, কোনো নেতার ব্যক্তিগত ইচ্ছার ওপর নয়।
মাসুদ কামাল বলেন, ‘আমি চাইলে থাকব, না চাইলে থাকব না’ এই বক্তব্য প্রকৃত স্বৈরাচারী। দুঃখজনকভাবে ড. ইউনূস নিজেকে সেই খাতায় নাম লিখিয়েছেন। তার এই মানসিক পতন শুধু হতাশাজনক নয় বরং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্যও শঙ্কাজনক।
এবি/টিকে