যুক্তরাষ্ট্রে চলতি সপ্তাহে চাকরি ছাড়ছেন রেকর্ড ১ লাখ ৫৪ হাজারেরও বেশি সরকারি চাকরিজীবী। এই চাকরিজীবীদের সবাই বেসামরিক প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর, বিভাগ ও পরিষেবা খাতে কর্মরত। আজ মঙ্গলবার থেকে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া দিন শুরু হয়েছে।
আমাদের দেশে চাকরিক্ষেত্রে ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ নামে যে শব্দটি প্রচলিত, যুক্তরাষ্ট্রে সেটিকে বলে ‘বাইআউট’, যার আক্ষরিক অর্থ হলো চাকরি কিনে নেওয়া। কর্মীদের কয়েক মাসের বেতন-ভাতা প্রদানের বিনিময়ে তাদেরকে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানানোকে ‘বাইআউট’ বা ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ বলা হয়। এই বাইআউট কর্মসূচির আওতায়তেই চাকরি ছাড়ছেন দেড় লক্ষাধিক কর্মী; যারা এই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাকরিতে ছিলেন।
যেসব কর্মী সরকারের বাইআউট প্রস্তাব গ্রহণ করেন নি, তাদেরকে বেতন-ভাতা ছাড়াই বরখাস্ত করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের মানবসম্পদ বিষয়ক দপ্তর অফিস অব পারসোনেল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দপ্তর, স্বাস্থ্যসেবা খাত, মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র বা নাসার বিভিন্ন প্রকল্প, কৃষি ও কৃষি গবেষণা সংক্রান্ত প্রকল্প, খাদ্য নিরাপত্তা সমুদ্র গবেষণা বিভাগসহ বেসামরিক প্রশসানের বিভিন্ন খাতের হাজার হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন বাইআউট প্রস্তাব গ্রহণকারীদের তালিকায়।
২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হওয়ার পর বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ককে নিজের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাম্প। মাস্ক ট্রাম্পকে বোঝাতে সক্ষম হন যে দেশে সরকারি চাকরিজীবীদের সংখ্যা ‘প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি’ এবং এই সংখ্যা কমিয়ে আনলে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে।
পরে ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে মার্কিন প্রশাসন থেকে সরে যান মাস্ক, কিন্তু বাইআউটের সিদ্ধান্ত অপরিবর্তনীয় থাকে। মানবসম্পদ দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ প্রায় ৩ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অব্যাহতি দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
অফিস অব পারসোনেল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের মুখপাত্র ম্যাকলাউরিন পিনোভার জানিয়েচেন ৩ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাই করে যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক প্রশাসনের জনবল শতকরা ১২ দশমিক ৫ শতাংশ কমে যাবে। তবে এর ফলে একই সঙ্গে দেশটির কেন্দ্রীয় বা ফেডারেল সরকার ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার সাশ্রয় করতে সক্ষম হবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান ফোর্ড স্কুল অব পাবলিক পলিসির অধ্যাপক ডন ময়নিহান সরকারের এই অর্থ সাশ্রয়ের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না। তার মতে, সরকারের এই বাইআউট পদক্ষেপ অব্যাহত থাকলে এক সময় দেশের বেসামরিক প্রশাসন ‘মেধাশূন্য’ হয়ে যাবে।
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ময়নিহান বলেন, “যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী-গবেষকদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই বছরের পর বছর ধরে কাজ করার ফলে নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষ ও বিশেষায়িত জ্ঞান (স্পেশালাইজেশন) অর্জন করেছিলেন। তাদের বিদায়ের ফলে যে মেধাশূন্যতার পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, সেই ঘাটতি সহজে পূরণ হবে না। একজন দক্ষ ও বিশেষায়িত জ্ঞানসম্পন্ন কর্মী তৈরি করতে অনেক সময় লাগে।”
সূত্র : রয়টার্স
এমকে/এসএন