আজ বিশ্ব হাসি দিবস। ১৯৯৯ সাল থেকে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম শুক্রবারকে বিশ্ব হাসি দিবস হিসেবে উদ্যাপন করে আসছে ‘হার্ভে বল ওয়ার্ল্ড স্মাইল ফাউন্ডেশন।’ দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্যও বেশ আকর্ষণীয়, ‘একটা দয়ার কাজ করো, একজনকে হাসতে সাহায্য করো।’ সংঘাতপূর্ণ ও যুদ্ধংদেহী বর্তমান বিশ্বের জন্য যেন এই বার্তাই যথেষ্ট।
মিষ্টি হাসি নিমেষেই একজনকে আনন্দিত করতে পারে। হাসতে কোনো খরচ নেই; কিন্তু তার অনেক শক্তি। হাসি রোগ সৃষ্টিকারী কর্টিসল হরমোন কমিয়ে শরীরে অক্সিটোসিন, ডোপেমিন, এন্ডোরফিন ইত্যাদি হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে শরীর ও মনকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। হাসি সব সময় দয়া, সহানুভূতি, ইতিবাচক মনোভাব, সম্পর্ক উন্নয়ন ও সুখানুভূতি চর্চায় উৎসাহিত করে।
হাসির শক্তি
ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে দিন দিন হাসির গুরুত্ব বাড়ছে। একটি সাধারণ প্রশংসা, আনন্দময় শুভেচ্ছা, হাসিমুখে কথা বলা একজন মানুষের ব্যক্তিত্বই বদলে দিতে পারে। একটি শুভ্র হাসির মানেই ভালো মনের প্রতিচ্ছবি, যার মাধ্যমে যেকোনো কঠিন কাজও সহজে করানো সম্ভব। তা ছাড়া কর্মক্ষেত্রে অধস্তন সহকর্মীদের সঙ্গে একটু হাসি দিয়ে কথা বললে তাঁরা উৎসাহবোধ করেন। আর এই উৎসাহ দেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
দিলখোলা হাসি
দিলখোলা হাসি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমায়, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ স্বভাবিক রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি শরীরে উপকারী হরমোন নিঃসরণ করে, যা ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডকে স্বাভাবিক রাখে। আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে সামগ্রিক জীবনে ইতিবাচকতা নিয়ে আসে হাসি। গবেষকদের মতে, দিনে যদি অন্তত ১০ মিনিট কেউ মন খুলে হাসেন, তা হলে যেকোনো স্নায়বিক সমস্যা দূর হতে বাধ্য।
নকল হাসি
অনেকেই মন থেকে হাসতে চান না। নকল হাসি আমাদের মনের কুটিলতা, শঠতা ও জটিলতা প্রকাশ করে। এর ফলে হতাশা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়। আর এই মানসিক চাপই শরীরের জন্য ক্ষতিকর স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ বাড়িয়ে নানা রকম রোগের সৃষ্টি করে। তাই যতটা সম্ভব স্ট্রেসমুক্ত থাকতে দিলখোলা হাসির অভ্যাস করতে হবে।
হাসির অভাবে ভুগছে বিশ্ব
বিশ্বব্যাপী মানুষ যেন হাসতে ভুলে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে বিচ্ছিন্নতা, আত্মকেন্দ্রিকতা, একাকিত্ববোধের পাশাপাশি যুদ্ধ, অস্থিরতা, হত্যা, ব্ল্যাকমেইলিং, সাইবার বুলিং, পারিবারিক অশান্তি, বেকারত্ব, লোভ, অর্থনৈতিক মন্দা ইত্যাদি কারণে মানুষ এখন প্রায় হাসতে ভুলে যাচ্ছে। সবাই যেন এক অসুখে ভুগছে, যার নাম ‘হাসির অভাব’। বিশ্বের ১০টির বেশি দেশে যুদ্ধ চলমান। যুদ্ধ কখনো সুন্দর পৃথিবী গড়তে পারে না। মানুষের মনস্তত্ত্বে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে যুদ্ধ। বিশ্বব্যাপী এই বিচ্ছিন্নতাবোধ ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে হাসি হতে পারে এক মহৌষধ। যে অভ্যাসের চর্চা বাড়ানো জরুরি।
চারদিকে যখন হাসির অভাব, এমন বাস্তবতায় শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা রক্ষার জন্য অনেকে লাফিং ক্লাব, লাফিং ইয়োগা চর্চা করছেন। দিন দিন শরীরচর্চা হোক বা ইয়োগা—সবখানেই গুরুত্ব পাচ্ছে হাসি।
লাফিং ক্লাবে সকালবেলা শরীরচর্চা করতে আসা ব্যক্তিরা একত্রে হাসির চর্চা করছেন। এই চর্চা ছড়িয়ে পড়া দরকার সবার মধ্যে। সব সময় প্রাণখুলে হাসতে পারলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ওজন কমানো, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো, মানসম্মত ঘুম ও গড় আয়ু বৃদ্ধি পায়।
হাসির অভ্যাস বাড়াতে দেশি–বিদেশি কমেডি সিরিয়াল, নাটক ও সিনেমা দেখা যেতে পারে। ছোট ছোট কাজেও মুখে হাসি রাখার অভ্যাস করা যেতে পারে।
হাসিকে প্রায়ই সংক্রামক বলে একমত হয়েছেন আধুনিক অনেক গবেষক। তাঁদের মতে, একজন যখন হাসেন, তখন অপরজনের মস্তিষ্কে থাকা ‘মিরর নিউরন’ সক্রিয় হয়।
এ জন্যই আমরা যখন কাউকে হাসতে দেখি, তখন এই নিউরনগুলো আমাদের মধ্যে একই রকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যার ফলে আমরাও অন্যদের অনুকরণ করে হাসতে থাকি। তাই আসুন হাসি, অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে সাহায্য করি।
ইএ/টিকে