বিসিবি নির্বাচনের ঠিক আগের দিন, অর্থাৎ বোর্ডের মেয়াদের শেষ দিনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। যেখানে গত কয়েক মাসের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। ঢাকাকেন্দ্রিক ক্রিকেট থেকে বেরিয়ে এসে সারাদেশে খেলাটিকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করার পাশাপাশি নির্বাচন ঘিরে চলমান সব বিতর্কেরও জবাব দেন তিনি।
রোববার (৫ অক্টোবর) বিসিবি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের সহ-সভাপতি ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
বিগত চার মাসে তার বোর্ডের অর্জন তুলে ধরে বুলবুল বলেন, জাতীয় দলের টানা চারটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করাটাই ছিল বড় সাফল্য। তিনি বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের ১১টি জেলা এবং রাজশাহীতে আঞ্চলিক টুর্নামেন্ট করেছি। ৬৪ জেলার অর্ধেক কোচকে আপগ্রেড করা হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে প্রথম। সাইমন টাফেলের মতো আম্পায়ার প্রশিক্ষক এবং টনি হেমিংসের মতো গ্রাউন্ডস বিশেষজ্ঞকে আনা হয়েছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা এখন শুধুমাত্র ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাই না। জেলার কাউন্সিলরদের আমরা ‘জেলা প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে দেখতে চাই এবং তাদের মাধ্যমে উপজেলা পর্যন্ত ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দিতে চাই। এই নির্বাচন করতে গিয়ে আমি আবিষ্কার করেছি আমাদের ক্রিকেটের আসল শক্তি কতটুকু, যা আমরা এখনো জানিই না।’
নির্বাচন পেছানোর দাবিতে ক্লাবগুলোর ক্রিকেট বর্জনের হুমকি প্রসঙ্গে বুলবুল আলোচনার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বযুদ্ধগুলোও হতো না, যদি টেবিলে আলোচনা হতো। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সবকিছু পরিষ্কার করার চেষ্টা করব।’
নির্বাচন পূর্বনির্ধারিত বা সাজানো এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন তো নির্বাচনই। আমি সবসময় সংবিধানের মধ্যেই ছিলাম।’
তিনি জানান, জেলা কাউন্সিলর তালিকা নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, সেখানে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই তাকে চিঠি দিতে হয়েছিল, যা পরবর্তীতে আদালতে নিষ্পত্তি হয়েছে। তামিম ইকবালসহ অন্যদের নির্বাচন বয়কটকে তিনি তাদের ‘ব্যক্তিগত ব্যাপার’ বলে অভিহিত করেন।
নির্বাচন করে বিসিবি প্রেসিডেন্ট হওয়া নিয়ে বুলবুল বললেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আমার চালিয়ে যাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আমাকে যারা ভোট দিচ্ছেন বা দিচ্ছেন না, কেউ যদি মনে করেন আমি যোগ্য না, যেকোনো সময় চলে যাব। তবে এই সময়ে আমার লক্ষ্য এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট।’’
আদালতের রায়ে নিষিদ্ধ ১৫ ক্লাব আবারও ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছে। ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হচ্ছে আরও। এই পরিবর্তন নিয়ে বুলবুলের ভাবনা, ‘আমি একটা জিনিস শিখেছি প্রতিটি ঘণ্টা চেঞ্জ হয়। এখনও ২০ ঘণ্টা আছে দেখি কি হয়।’
ক্রীড়া উপদেষ্টার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে বুলবুল বলেন, ‘আমার ঠিক মনে নেই, কবে আমি বলেছি ক্রীড়া উপদেষ্টা আমাকে অনুরোধ করেছেন বা ক্রীড়া উপদেষ্টা সহযোগিতা করেছেন। যে সময়সীমার মধ্যে আমি কাজ করছিলাম আর কী! এখানে তাকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই আরেকটা কারণে। তিনি একজন মন্ত্রী পদমর্যাদার মানুষ। আমি জানি তিনি রাজশাহীতে গিয়েছেন। শুধু সুষ্ঠু নির্বাচন না, চেষ্টা করেছেন যেন ভালো বোর্ড তৈরি করতে পারি। এখানে আমার কাছে প্রভাবের কিছুই মনে হয়নি।’
নিজের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কী ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, মিডিয়ার সঙ্গে আমার আরও বেশি যোগাযোগ বাড়ানো প্রয়োজন ছিল।’ কাজের চাপের কারণে অনেকের ফোন ধরতে না পারার বিষয়টিও স্বীকার করে নেন তিনি।
সবশেষে, আগামীকালকের নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখা যাক কী হয়। অনেকেই অনেক কিছু অনুমান করছেন। তবে আমরা একটি সুন্দর নির্বাচনের প্রত্যাশায় আছি।’
আইকে/টিকে