বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। এতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৯০০ ডলার ছাড়িয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার (৬ অক্টোবর) স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৩ হাজার ৯২৯ দশমিক ৯১ ডলারে। একই সময়ে ডিসেম্বর ডেলিভারির জন্য মার্কিন স্বর্ণের ফিউচার ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৫৪ দশমিক ৭০ ডলারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইয়েনের পতন, মার্কিন সরকারের অচলাবস্থা আর ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা-এই তিন কারণে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেছে।
কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, 'জাপানের এলডিপি নির্বাচনের পর ইয়েনের দুর্বলতা বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিয়েছে। ফলে অনেকেই নিরাপদ বিকল্প হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন। অন্যদিকে মার্কিন সরকারের অচলাবস্থা দেশটির অর্থনীতি ও জিডিপি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এই অবস্থায় স্বর্ণ এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সম্পদ।'
ওয়াটারার আরও বলেন, 'ফেড যদি চলতি মাসে আবার সুদের হার কমায়, তাহলে স্বর্ণের চাহিদা আরও বাড়বে। কম সুদের পরিবেশে স্বর্ণই সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগে পরিণত হয়।'
এদিকে জাপানে নতুন প্রধানমন্ত্রী সানাই তাকাইচি দায়িত্ব নেয়ার পর গত পাঁচ মাসে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইয়েনের দর সবচেয়ে বেশি কমেছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে আংশিক সরকারি অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি মনে করেন ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি নেই, তাহলে প্রশাসন ফেডারেল কর্মীদের ছাঁটাই শুরু করবে।
গত শুক্রবার ফেড গভর্নর স্টিফেন মিরানও ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে আবারও আক্রমণাত্মকভাবে সুদের হার কমানোর পক্ষে মত দেন।
২০২৪ সালে ২৭ শতাংশ বাড়ার পর চলতি বছর এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৯ শতাংশ। এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর বাড়তি স্বর্ণ কেনা, এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডের (ইটিএফ) চাহিদা বৃদ্ধি, ডলারের দুর্বলতা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা।
গত মাসে ফেড সুদের হার এক-চতুর্থাংশ কমানোর পর থেকে স্বর্ণের বাজার আরও চাঙ্গা হয়েছে। ফেড ইঙ্গিত দিয়েছে, বছরের বাকি সময়েও তারা ঋণের খরচ কমিয়ে আনবে।
সিএমই ফেডওয়াচ টুল অনুযায়ী, বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত যে ফেড অক্টোবর ও ডিসেম্বরে আরও দুটি করে ২৫ বেসিস পয়েন্ট হারে সুদ কমাবে-এর সম্ভাবনা যথাক্রমে ৯৫ ও ৮৩ শতাংশ।
বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও কম সুদের সময়ে স্বর্ণ বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প হিসেবে কাজ করে। চলতি বছর মার্চে প্রথমবারের মতো আউন্সপ্রতি স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ডলার ছাড়ায়, আর সেপ্টেম্বরে তা ৩ হাজার ৭০০ ডলার পেরোয়। ফলে ৩ হাজার ৯০০ ডলারে পৌঁছানো যেন ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র।
অন্য মূল্যবান ধাতুগুলোর দামেও দেখা গেছে ঊর্ধ্বগতি। সোমবার স্পট সিলভারের দাম ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আউন্সপ্রতি ৪৮ দশমিক ৫৩ ডলারে। আর সমান ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে প্লাটিনাম ১ হাজার ৬২৩ দশমিক ৮৮ ডলার ও প্যালাডিয়াম ১ হাজার ২৭৫ দশমিক ৬৫ ডলারে পৌঁছেছে।
এমআর/টিকে