বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৫ উপলক্ষে “জাতি গঠনে শিক্ষকগণের ভূমিকা” শীর্ষক এক অনলাইন সেমিনারের আয়োজন করেছে দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংক (ইউটিএল)। রবিবার (৫ অক্টোবর) রাত ৯টায় অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আড়াই শতাধিক শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইউটিএল-এর আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বিশ্বাস এবং সঞ্চালনা করেন ইউটিএল-এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মির্জা গালিব। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল।
মূল প্রবন্ধে ড. মির্জা গালিব শিক্ষা, শিল্প ও সরকারের মধ্যে কার্যকর সহযোগিতার (collaboration) গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষাখাতে জিডিপির অন্তত ৫ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করা জরুরি। এটি আমাদের জাতীয় উন্নয়নের বড় মাইলফলক হবে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এটি রাজনৈতিক দাবির অগ্রাধিকার হিসেবে দেখা উচিত।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র পে-স্কেল বা বিকল্প প্রণোদনা কাঠামো গঠন জরুরি, যাতে সর্বোচ্চ মেধাবীরা এই পেশায় আগ্রহী হন। পাশাপাশি, সকল স্তরের শিক্ষকদের জন্য নিয়মিত প্রফেশনাল ট্রেনিং ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রবর্তনের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ফেয়ার রিক্রুটমেন্ট নিশ্চিত করা, পদোন্নতিতে পিএইচডি বাধ্যতামূলক করা, বিদেশে কর্মরত মেধাবী গবেষকদের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ গ্রহণ এবং চীন ও ভারতের মতো ট্যালেন্ট হান্ট প্রজেক্ট চালুর প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ইউটিএল যদি সরকারের সঙ্গে নীতি নির্ধারণ ও প্রয়োগে কাজ করতে পারে, তবে নতুন বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সম্ভব।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, মেধাবী শিক্ষক ও গবেষকদের নিয়োগ দিতে পারলে শিক্ষার মানোন্নয়নে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। একাডেমিয়া ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে কার্যকর সংযোগ গড়ে তুলতে হবে।
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “বিগত শিক্ষা কমিশনগুলো বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন সময় এসেছে শিক্ষাব্যবস্থার স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণের। ইউটিএলকে সেই দিকনির্দেশনামূলক ভূমিকা নিতে হবে।
তিনি শিক্ষকদের আত্মসমালোচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমাদেরকে নৈতিকতা ও মেধাকে ধারণ করতে হবে। এ মূল্যবোধ ধারণ করতে পারলেই শিক্ষকতা হবে সম্মানজনক পেশা, এবং আমরা নৈতিক ও একাডেমিক নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারবো। এ জন্য এ মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি দরকার জুলাইকে ধারন করা, জুলাইকে ধারন করতে পারলে শিক্ষকতায় মেধাবীরা আসবে, বিজ্ঞান চর্চা হবে, আমরা নৈতিক শিক্ষক পাবো, আমরা দক্ষ একাডেমিক লিডারশীপ পাবো।
সভাপতির বক্তব্যে ইউটিএল-এর আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বিশ্বাস বলেন,
“আজকের সেমিনারে উত্থাপিত বিষয়গুলো নিয়ে ইউটিএল বৃহত্তর পরিসরে কাজ করবে। আমাদের চারটি মৌলিক আদর্শের আলোকে ইউটিএল শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাবে।”
তিনি সকল অংশগ্রহণকারী শিক্ষক, আলোচক ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপককে ধন্যবাদ জানিয়ে সেমিনারের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
টিকে/