কক্সবাজারে প্রবারণা পূর্ণিমার ফানুসে দেখা মিলেছে ‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত’ বার্তা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শান্তি ও মানবতার উৎসব প্রবারণার উৎসবে এই বার্তা যেন সবার হৃদয় স্পর্শ করেছে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে রামুর সীমা বিহার প্রাঙ্গণে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় ফানুস উড়ানোর উৎসব। যেখানে আকাশজুড়ে ভেসে ওঠে শান্তি, ভালোবাসা ও মানবতার প্রতীক সেই বার্তা।
প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক গভীর তাৎপর্যের দিন। রামু সীমা বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, আষাঢ় পূর্ণিমা থেকে আশ্বিন পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাসের বর্ষাবাস শেষে ভিক্ষুরা এই দিনে আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নতুন প্রতিজ্ঞায় ব্রতী হন। বৌদ্ধ ধর্মে এটি ‘সংযম ও পরিশুদ্ধতার উৎসব’ হিসেবেই পরিচিত।
ফানুস উড়ানো প্রবারণা উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ। বৌদ্ধ বিশ্বাস অনুযায়ী, ফানুসের আলো অন্ধকার দূর করে শান্তি, কল্যাণ ও আলোকিত জীবনের প্রতীক হিসেবে কাজ করে। তাই এই রাতে সবাই একসঙ্গে আকাশে ফানুস উড়িয়ে প্রার্থনা করেন নিজের ও বিশ্বের মঙ্গলের জন্য।
স্থানীয় বাসিন্দা অর্পণ বড়ুয়া বলেন, প্রবারণা মানে শান্তি, সহমর্মিতা ও মানবতার জয়গান। আমরা চাই, পৃথিবীর সব যুদ্ধ, নিপীড়ন ও অন্যায়ের অবসান হোক। ফানুসে লেখা ‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত’ সেই মানবতার বার্তাই বহন করছে।
ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে স্থানীয় যুবক সুরেশ বড়ুয়া বলেন, প্রবারণার ফানুস শুধু আনন্দের নয়, প্রতিবাদেরও প্রতীক। আমরা ফিলিস্তিনের মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর মানবিক আহ্বান জানিয়েছি। এই আলো যেন অন্ধকারে থাকা মানুষের জন্য আশার প্রতীক হয়।
প্রবারণা উৎসবকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে চলেছে আলো ঝলমলে আয়োজন। কক্সবাজার শহরের অগগমেধা ক্যায়াংসহ জেলার প্রায় সব মন্দিরেই ছিল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, প্রার্থনা ও ফানুস উড়ানোর উৎসব।
উৎসব ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। ভিড় নিয়ন্ত্রণ, যান চলাচল ও নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব ও আনসারের যৌথ টহল দেখা গেছে সন্ধ্যার পর থেকে।
জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, আনন্দঘন পরিবেশে উৎসব পালন নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। জেলাজুড়ে বাড়ানো হয়েছে টহল ও নজরদারি। এখন পর্যন্ত সব কিছু শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হচ্ছে।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নেতা ডা. মায়েনু বলেন, সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে এবার প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব হয়ে উঠেছে সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ।
তিন দিনব্যাপী এই উৎসব শেষ হবে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাঁকখালী নদীতে কল্প জাহাজ ভাসানোর মধ্য দিয়ে। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এবি/টিকে