ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী সম্প্রতি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সম্পর্ক, নির্বাচন ও শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান নিজের ইউটিউব চ্যানেল জাহেদস টেইক-এ এ প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ভারতের উদ্দেশ্য সম্ভবত বাংলাদেশে একটি নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি করা। যাতে নির্বাচন স্থগিত থাকে বা প্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করা যায়।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, ভারত কি সত্যিই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকার চায়? যদি হয়, তাহলে সরকারকে স্লেভের মতো নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইবে না।
বিক্রম মিশ্রী দিল্লিতে ‘ডিপ্লোম্যাটিক কোরেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিক্যাব)’ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় জানান, ভারত বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কেমন হবে, সেটি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ, সাধারণ মানুষ ও সুশীল সমাজ মিলে সিদ্ধান্ত নেবে। শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মিশ্রী বলেন, এটি বিচারিক ও আইনগত বিষয়, তারা এখন এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চায় না।
অর্থাৎ, ভারতের অবস্থান আপাতত নিষ্ক্রিয় ও অপেক্ষাবস্থা।
জাহেদ উর রহমান আরো বলেন, এখানে ভারতের উদ্দেশ্য অন্যরকম, তারা বাংলাদেশকে একটি নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র হিসেবে রাখতে চায়। শেখ হাসিনা যেভাবে ভারতের স্বার্থে কাজ করেছিলেন, তাতে মনে হয় তিনি বাংলাদেশকে কার্যত ভারতের উপনিবেশে পরিণত করেছেন। নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার বিনিময়ে দেশের জনগণের অধিকার ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থের বড় অংশ তিনি বিসর্জন দিয়েছেন।
এমন এক শাসকের পক্ষে যখন পরিস্থিতি প্রতিকূল হয়ে ওঠে এবং তিনি ভারতে আশ্রয় নেন, তখন তাকে ফেরত দেওয়া ভারতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ভবিষ্যতে ভারত আবার এমন একজন শাসক খুঁজে পেতে চাইবে, যাকে তারা একইভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন বাংলাদেশ ভারতের এই লক্ষ্য পূরণে বাধা সৃষ্টি করবে। তাই ভারত সম্ভবত ভবিষ্যতেও এমন নেতাকে সমর্থন করবে, যিনি তাদের স্বার্থে কাজ করতে ইচ্ছুক। শেখ হাসিনার মতো কাউকে যদি আশ্রয় দেওয়ার পর ফেরত দেওয়া হয়, তাহলে তিনি ভারতের অনেক অজানা রাজনৈতিক ভূমিকা ফাঁস করে দিতে পারেন।
এতে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান বিপদে পড়তে পারে। এই ধরনের পদক্ষেপগুলো ভারতের পররাষ্ট্রনীতির দুর্বলতা এবং অপরিণত কৌশলের পরিচায়ক বলেই মনে করা যায়।
তিনি বলেন, ভারত এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে এগোচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে তাদের আর উপায়ও নেই। শোনা যাচ্ছে, ভারত আবার ভিসা দেওয়া শুরু করবে এবং সেই প্রক্রিয়াও বাড়াবে। এর মূল কারণ হলো, বাংলাদেশের উপর এই ধরনের চাপ সৃষ্টি করে ভারতও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ, কেনাকাটা এই সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রচুর মানুষ যান। এ ছাড়া বাণিজ্য ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ট্রেড ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, যেখানে ভারতের রপ্তানিই অনেক বেশি। তাই সম্পর্কের টানাপোড়েন ভারতের নিজেদের স্বার্থেই ক্ষতিকর হয়ে উঠছে, এটা তারা এখন বুঝতে পারছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের যে কোনো সরকারই যদি ভারতের সঙ্গে সম্মানজনক ও আত্মমর্যাদাভিত্তিক সম্পর্ক গড়তে না পারে, সেটি কার্যত ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। তাই যেই দলই সরকারে আসুক বা আছে, তাদেরকে এই বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে। এটি নথিভুক্ত ভাবে বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন এবং সেই অনুযায়ী কূটনৈতিক নীতি নির্ধারণ করতে হবে। যতটা সম্ভব বাস্তবসম্মত হতে হবে এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনা করতে হবে যাতে দেশের স্বার্থ রক্ষা করা যায়। তবে ভারতের বিদেশনীতি ও কূটনীতিক আচরণ সবসময় যুক্তিযুক্ত নয়, তারা বাস্তবে বেশি দায়িত্বশীল ও পরিপক্ক কূটনীতি গ্রহণ করবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে যায়।
এবি/টিকে