বিবিসি বাংলাকে দেওয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার সম্পর্কে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেছেন, ‘তারেক রহমান বাংলাদেশের ডি-ফ্যাক্টো লিডার। সে কারণে তারেক রহমানকে আমাদের অবজার্ভ করতে হবে। আমি তাঁকে ক্রিটিক্যালি দেখার চেষ্টা করি। তারেক রহমানের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
সে কারণেও তাঁর বক্তব্য, তাঁর কর্মসূচিকে আমরা খুব ক্রিটিক্যালি দেখার চেষ্টা করব। তিনি বেশ কিছুদিন থেকে নিয়মিত আমাদের সামনে (দলীয় কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে) আসছেন এবং খুবই ম্যাচুয়েড আচরণ করছেন। ডিফারেন্স হচ্ছে, সেগুলো ইন্টারভিউ ছিল না। পাল্টা প্রশ্ন ছিল না।
তিনি তাঁর মতো করে বক্তব্য দিয়ে গেছেন। এবার ইন্টারভিউ দিয়েছেন।’
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া তাঁর ইন্টারভিউটা পড়া ছাড়াও দেখার পরামর্শ দিয়ে ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘পড়লে যতটা বোঝা যায়, দেখলে আরো বেশি বোঝা যায়। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, এক্সপ্রেশনে আরো বেশি বোঝা যাবে তারেক রহমানকে।
কেন এত দিন মিডিয়ায় ইন্টারভিউ দেননি, তার জবাবে তারেক রহমান খুব চমৎকারভাবে আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছেন। উনি ফিরে আসবেন কি না, এই প্রশ্নে তিনি নির্বাচনের আগে দেশে ফিরবেন এবং নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। আমার ধারণা, তিনি হয়তো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কিছুদিন আগেই আসবেন এবং তাঁকে ঘিরে জনগণের মধ্যে যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা তৈরি হবে সেটিকে দিয়েই তিনি নির্বাচনকে অ্যাড্রেস করবেন। প্রধানমন্ত্রী হবেন কি না—এ রকম প্রশ্নে তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে দল সিদ্ধান্ত নেবে। এটিও স্মার্ট জবাব।
উনি টেকনিক্যালি নিজের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা বলতে পারেন না। বিবিসি বাংলার প্রশ্নে চমৎকার উত্তর ছিল জুলাই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বিষয়ে। তারেক রহমান বলেছেন, এই আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন তাঁরা এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড। কোনো দল কোনো ব্যক্তি নয়, এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ। দ্রুত নির্বাচন কেন চেয়েছেন—এ প্রশ্নের জবাবেও পরিমিতিবোধ দেখিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া তিনি বলেছেন, নির্বাচন হলেই সব সমস্যার রাতারাতি সমাধান হয়ে যাবে না। কিন্তু নির্বাচিত সরকার যখন ক্ষমতায় আসেব এই সমস্যাগুলো ধীর ধীরে কমে আসবে। এটি যথাযথই বলেছেন। বিএনপির নেতাদের বুঝতে হবে, জনগণের মধ্যে উচ্চাশা তৈরি করে তাদের হতাশ করা যাবে না। এমপি প্রার্থী নমিনেশন নিয়ে তারেক রহমান বলেছেন, দলের নয় জনগণের মতামতও দেখতে চাই। কারণ এমপি তো দলের না, জনগণের হতে হবে। এটি ভালো কথা। কিন্তু এমপিদের স্থানীয় সমস্যা দেখার যে যোগ্যতার কথা বলেছেন তা আমি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করিনি। কারণ আমি দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, স্থানীয় সমস্যা দেখবে স্থানীয় সরকার। এমপিদের কাজ হবে পার্লামেন্টে আইন প্রণয়নের কাজ করা।’
পরিবারতন্ত্র, চাঁদাবাজি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগ নিয়ে তারেক রহমান যে কথাগুলো বলেছেন তা-ও যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন ডা. জাহেদ উর রহমান। তবে বিএনপি সরকার গঠন করলে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হবে—এমন কঠোর বক্তব্য প্রত্যাশা করেন তিনি।
ডাকসু নির্বাচন নিয়েও তারেক রহমান চমৎকার জবাব দিয়েছেন, মন্তব্য করে জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘এই নির্বাচনে যাঁরা বিজয়ী হয়েছেন তাঁদের অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে বলেছেন, একটা অগ্রযাত্রা শুরু হলো, কিন্তু আমরা চাইছিলাম না যে কোনো বিতর্কের মধ্যে এগুলা পড়ুক। আমরা আশা করব যে পরবর্তী সময়ে যেগুলোর নির্বাচন হবে সেগুলো বিতর্কবিহীন হবে।’
এবি/টিকে