সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, ‘ড. ইউনূস সরকার হচ্ছে অর্ধেক এনসিপি এবং অর্ধেক নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকার। তার প্রমাণ হলো এই আমলে দুটি টিভি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, যা দুটোই এনসিপির সঙ্গে সম্পর্কিত। একজন সরাসরি এনসিপির আর অন্যজন অর্ধেক এনসিপি। পুরনো প্রক্রিয়ায় নতুন দুটি টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘পতিত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সমালোচনা ছিল যে তিনি দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে স্বজনপ্রীতি এবং দলের আস্থাভাজন লোকদের চ্যানেল দিতেন। এই সরকারের গণমাধ্যম কমিশনের কামাল আহমেদ বলেছেন, এই সরকার নতুন কোনো চ্যানেলের কথা চিন্তা করছে না বরং বিদ্যমান চ্যানেলগুলোকে কিভাবে মেরামত করা যায়, সেটাই তাদের চিন্তার বিষয়।’
মঙ্গলবার (অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেল এ মোস্তফা ফিরোজ এসব কথা বলেন।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘ইউনূস সাহেব নাকি তার গ্রামীণ নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০-২৫টি লাইসেন্স নিয়ে বসে আছেন। ফলে তার অনুগত ব্যক্তিদেরই লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে; না দিলে তারা কিভাবে শক্তিশালী হবে? এই কারণেই বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। নাহিদ ইসলামের কথাই মনে হচ্ছে ঠিক হচ্ছে, তিনি বলেছেন, অনেকে সেফ এক্সিটের কথাও ভাবছেন। এখন মনে হচ্ছে এটি সত্যি—কোন প্রক্রিয়ায় এবং কী কারণে এই অন্তর্বর্তী সরকার লাইসেন্স বিতরণ করছে, এর জবাব দিতে হবে। বিএনপি অথবা জামায়াত যারাই ক্ষমতায় আসবে এর হিসাব নেবে।
আগের আমলেও ১৫ বছরে প্রায় ৫০টি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৩৬টি এখনো আছে। এগুলো কী ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে, তা সহজে তদন্ত করা সম্ভব। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, তা সত্যিই অন্যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের মূল কাজ হওয়া উচিত কিছু সংস্কার করে একটি ভালো নির্বাচন নিশ্চিত করা, কিন্তু তারা লাইসেন্স বিতরণ করছে—চ্যানেল, মেডিক্যাল, বিশ্ববিদ্যালয়—সব কিছু। টিভি লাইসেন্সের কথা তো নাই-বা বললাম। টিভি লাইসেন্সের জন্য কি আর আবেদন নাই? শুধু এনসিপির সাথে যারা সম্পর্কিত তাদের কেন দেওয়া হচ্ছে? এটা গুরুতর অন্যায়। এই সরকারের কোথায় নিরপেক্ষতা থাকল।’
যারা পেলেন টিভি লাইসেন্স
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার যে প্রক্রিয়ায় বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের (টিভি) লাইসেন্স দিত, সেই একই প্রক্রিয়ায় নতুন দুটি টিভির অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। চ্যানেল দুটির নাম ‘নেক্সট টিভি’ ও ‘লাইভ টিভি’। নেক্সট টিভির লাইসেন্স পেয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মো. আরিফুর রহমান তুহিন। তিনি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি একটি ইংরেজি দৈনিকের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। এনসিপি গঠিত হওয়ার পর তিনি দলটির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হন।
লাইভ টিভির লাইসেন্স পেয়েছেন আরিফুর রহমান নামের আরেকজন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বছর ছয়েক আগে পড়াশোনা শেষ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি একটি ইংরেজি দৈনিকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ছিলেন। তিনি জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ছিলেন। তবে এনসিপিতে যোগ দেননি।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘লাইসেন্স পাওয়া ভালো, কিন্তু এটি অবশ্যই একটি নীতিমালার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। নীতিমালার আওতায় যাদের যোগ্যতা আছে তারা পাবেন, যারা যোগ্যতা হারিয়েছে বা অযোগ্য তারা মার্কেট থেকে ছিটকে যাবে। এতে প্রতিযোগিতা হবে এবং বাজারে মান নিশ্চিত হবে। কিন্তু এখানে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। যদি নীতিমালা থাকত তাহলে শুধু এই দুই আরিফ কেন অনুমোদন পেলেন আর আগের আবেদনকারীরা কেন পাননি তার উত্তর পাওয়া যেত। এ কারণে নাহিদ ইসলামের কথাই বাস্তবসম্মত—সেফ এক্সিট নিশ্চিত করার জন্য এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার।’
ইউটি/টিকে