ভারতের জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গার্গের অকালমৃত্যুকে ঘিরে শুরু থেকেই তৈরি হয়েছিল ধোঁয়াশা, কিন্তু এবার সেই রহস্য আরও গভীর হলো। সিঙ্গাপুরে কনসার্টে যোগ দিতে গিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর তার আকস্মিক মৃত্যু, যা প্রথমে স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি এখন নতুন মোড় নিয়েছে। বিশেষ তদন্তকারী দল গ্রেপ্তার করেছে জুবিনের চাচাতো ভাই, আসাম পুলিশের আধিকারিক সন্দীপন গর্গকে।
সন্দীপন গার্গ গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর, তার স্ত্রী গরিমা গার্গ জানিয়েছেন, জুবিন এবং সন্দীপনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক ছিল এবং জুবিন তাকে খুব ভালোবাসতেন। গরিমা আরও বলেন, পরিবার ন্যায়বিচার চায় এবং তারা বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখছে।
জুবিন গার্গ গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে মারা যান। তিনি নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভালে পারফর্ম করতে গিয়েছিলেন। ৫২ বছর বয়সী এই শিল্পী একটি ইয়ট ভ্রমণের সময় সাঁতার কাটতে নেমেছিলেন এবং পরে পানিতে মুখ থুবড়ে ভাসতে দেখা যায়।
ঘটনার সময় সন্দীপন ইয়টেই ছিলেন। পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে এবং আসাম পুলিশ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
গরিমার বলেন, ‘সন্দীপন খুব বেশি দিন হয়নি আসাম পুলিশে যোগ দিয়েছেন। সে মডেলিং ও অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সে আমাদের কয়েকটি প্রোজেক্টেও কাজ করেছিল। জুবিন সবসময় নতুন প্রতিভাদের উৎসাহ দিতেন। সন্দীপন তার প্রথম কাজিন হওয়ায়, তিনি তাকে খুব ভালোবাসতেন। জুবিন ওর সম্পর্কে গর্বিত ছিলেন এবং প্রায়ই বলতেন কতটা লম্বা, সুদর্শন এবং পুলিশে যোগ দিয়ে কী দারুণ কাজ করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন সন্দীপন প্রথমবার বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, জুবিন খুব খুশি হয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে যান। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম, সন্দীপনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে এবং পরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হয়তো তার বক্তব্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্ত এখনো চলছে, তাই এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।’
গরিমা জানান, পরিবার, ভক্ত এবং গোটা আসাম অপেক্ষা করছে যে, কীভাবে জুবিনের মৃত্যু হলো, তার উত্তর পাওয়ার জন্য। আমাদের বিচার ব্যবস্থার ওপর পূর্ণ আস্থা আছে। আমি বিশ্বাস করি, শিগগরিই আমরা উত্তর পাবো।
কূটনৈতিক আলোচনার ইঙ্গিত
আসাম মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন, তিনি সিঙ্গাপুরের ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দিল্লিতে দেখা করবেন এবং এই মামলার কিছু কূটনৈতিক দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। বিশেষ করে সেই সিঙ্গাপুরপ্রবাসী এনআরআই ব্যক্তিদের নিয়ে যারা ইয়ট ভ্রমণে ছিলেন এবং এখন প্রধান সাক্ষী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘বিশেষ তদন্ত দল পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করছে। তাদের সময় দেওয়া উচিত। সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক এনআরআইদের জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে আমি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা করব। আমাদের সম্পর্ক ভালো, তাই আশা করি তারা সাহায্য করবে।’
বন্ধুর দাবি
জুবিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, গায়ক ও সুরকার মানস রবিন। তিনি বুধবার পুলিশের ডাকে হাজির হন এবং বলেন, তার কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ রয়েছে।
তিনি জানান, জুবিনের শেষকৃত্যের দিন, আমি বলেছিলাম আমার কাছে কিছু প্রমাণ রয়েছে। আমি পুলিশের কাছে তা জমা দেব, কিন্তু এখনই তা প্রকাশ করতে পারব না। এই প্রমাণ হয়তো তদন্তে সাহায্য করতে পারে।
মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৫
সন্দীপনের মামলায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবার বিরুদ্ধে খুন, অনিচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং অবহেলার কারণে মৃত্যু ঘটানো–এমন সব অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে, জুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা, ব্যান্ড সদস্য শেখর জ্যোতি গোস্বামী, সহশিল্পী অমৃতপ্রভা মহন্ত এবং ফেস্টিভালের ব্যবস্থাপক শ্যামকানু মহন্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।
টিজে/এসএন