আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় তিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক নিয়ে জল্পনা চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান নিজের ইউটিউব চ্যানেল জাহেদস টেইক-এ এ প্রসঙ্গে কথা বলেন। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না এটা প্রায় নিশ্চিত হওয়ার মুহূর্তে ইউরোপের রাষ্ট্রদূতদের এই বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন।
জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় তিনটা দেশের রাষ্ট্রদূত একসাথে এটা এখন প্রতিষ্ঠিত।
আমরা কারো পক্ষ থেকে এটা নিয়ে কোনো অস্বীকার দেখিনি।’ দেশের একটি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘তিনজন রাষ্ট্রদূত একই গাড়িতে এবং তাদের ডিপ্লোম্যাটিক কোনো সাইন না রেখে সাবের হোসেন চৌধুরীর গুলশানের বাসায় যান এবং দুই ঘণ্টার মতো বৈঠক করেন। বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের যাদের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ নেই তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে, ১১ মে আমেরিকার চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সও সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।
জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘এসব নিয়ে নানান জল্পনা-কল্পনা চলছে এবং চলার কথা। এটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ জনাব সাবের হোসেন চৌধুরী ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং দ্রুত জামিনও পেয়েছিলেন।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘এই মুহূর্তে যখন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে পার্টিসিপেট করতে পারবে না, এটা প্রায় নিশ্চিত — তখন ইউরোপের রাষ্ট্রদূতদের এই বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ।
পশ্চিমা দেশগুলোর বিশেষ করে ইউরোপের কাছে ইসলামী রাজনীতি নিয়ে কিছু রিজার্ভেশন আছে। আমেরিকা সাংবিধানিক ইসলামি রাজনীতি সমর্থন করলেও ইউরোপের ক্ষেত্রে এটা ভিন্ন।
তারা চায় না যে বাংলাদেশে এমন রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় আসুক যারা শারিয়াভিত্তিক শাসনের কথা বলে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পশ্চিমে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটস আছে, কিন্তু ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটস খ্রিস্টান ধর্মের মতো করে সব আইন পাল্টে ফেলবো কখনোই বলে না। ভিন্নতা এই জায়গায়, সুতরাং এখানে ইসলামের নাম রেখে ওই ধরনের রাজনীতি যদি হতো, আদতে সাংবিধানিক রাজনীতি করছে, খুব বেশি এদিক সেদিক না।
কিন্তু পুরোপুরি ইসলামী শারিয়া কায়েম করবে যখন বলে তখন এই প্রশ্ন এসে যায় যে, এই দলগুলো আদতে এই ডেমোক্রেটিক যে সিস্টেম আছে তার মধ্যে ফিট-ইন করে কি না।
বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলো যেমন জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস প্রভৃতি একটা শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলছে। এটাতে পশ্চিমাদের হয়তো সমস্যা আছে। ইউরোপের হয়তো বেশিই সমস্যা আছে। এ ক্ষেত্রে তারা রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের কথা ভাবছে কি না, এটা ভবার কারণ আছে।’
জাহেদ বলেন, ‘সেটা এই নির্বাচনে কি হবে, নাকি নির্বাচনের পর। কিন্তু নির্বাচনের আগেই যখন তোর জোর চলছে তিনজন রাষ্ট্রদূত একসাথে দেখা করছে এই স্পেকুলেশন চলবে এবং এটাকে খুব উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।’
এই পরিস্থিতি আসলে বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোই তৈরি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই দলগুলো থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে স্পষ্ট করতে হবে যে, যদি ক্ষমতায় আসেন তারা শরিয়া শাসন চান কি না। আরো বেশি জরুরি কথা, শরিয়া আইনটা কোন ক্ষেত্রে কেমন হবে তার একটা বিস্তারিত ধারণা দিতে হবে। শুধু পশ্চিমাদের জন্য নয় এদেশের ভোটারদের জন্য।
ভোটারদের কাছে আমি চাকরি দেবো, দুর্নীতি দূর করবো বলে ভোট চাইব, কিন্তু আমি ক্ষমতায় আসার পর শরিয়া কায়েম করবো... যদি তারা সেই ধরনের সংঘর্ষতা পেয়ে সংবিধান পরিবর্তন করে ফেলেন এগুলো সব আগে বলতে হবে। এগুলো আগে না বলা কিন্তু মুনাফেকি হবে। ওনাদের এই অস্পষ্টতা সমাজে আরো বেশি সন্দেহ তৈরি করছে এবং খুব স্বাভাবিক ভাবেই বিদেশীদের মধ্যে এই সন্দেহ দানা বাঁধবে।’
এমকে/এসএন