সারা দেশে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় একদিকে কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নীরব ভূমিকা সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
আজ বৃহস্পতিবার ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কৈবর্ত সভাকক্ষে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় এ অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা।
প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তারা তামাক চাষ বন্ধে নীতিমালা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি জাতীয় তামাকমুক্ত দিবসকে সরকারি স্বীকৃতির আহ্বান জানান।
এ বছর জাতীয় তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘কৃষি জমিতে তামাক চাষ, খাদ্য নিরাপত্তায় সর্বনাশ’। এতে অবিলম্বে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা চূড়ান্ত করা দাবি জানানো হয়।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট্রের কর্মসূচি প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন নীতি বিশ্লেষক ও আইনজীবি এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ভাইটাল স্ট্র্যাটিজিসের কারিগরি পরামর্শক আমিনুল ইসলাম সুজন, এইড ফাউন্ডেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, ডাস্-এর টিম লিড আমিনুল ইসলাম বকুল প্রমূখ। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য।
সভায় সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, খাদ্য নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। খাদ্যের প্রয়োজন মেটাতে এখনো আমরা বিদেশের উপর নির্ভরশীল। অথচ তামাক চাষের মাধ্যমে আমরা কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট করছি এবং খাদ্য নিরাপত্তাকে ধ্বংস করছি। শ্রমের মূল্য ও নিরাপত্তার দিক দিয়ে বিচার করে তারা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশকে বেছে নেয়।
তামাক ক্ষতিকর জেনেও দেশে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে তামাক চাষে কৃষকদের প্রলুব্ধ করে। তামাক চাষ লাভজনক, তামাক কোম্পানি এই মিথ প্রচার করে, অথচ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে কুষ্টিয়ায়, রংপুর, লালমনিরহাট,বান্দরবানসহ তামাক চাষের শীর্ষ ১০টিই জেলাই রয়েছে দরিদ্রতম জেলার তালিকায়। ২০১৭ সালের আপীল বিভাগের এক রায়েও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক চাষের জমি কমিয়ে আনাসহ নতুন করে কোনো তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিকে অনুমতি দেওয়া যাবে না বলা হয়েছে।
হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিবছর ঘরবাড়ি নির্মাণসহ অকৃষিখাতে এক শতাংশ হারে আবাদি জমি কমছে। এই বাস্তবতায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশকে তামাকের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা জরুরি।
এক্ষেত্রে তামাকের বিকল্প চাষে কৃষকদের উৎসাহ প্রদান, কারিগরি সহায়তা, উন্নত ও দ্রুত বর্ধনশীল বীজ সার প্রদান, জামানতবিহীন স্বল্প সেবামূল্যে ঋণ প্রদানে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা সংযুক্ত করার আহ্বান জানান।
আমিনুল ইসলাম বকুল বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির সকল পণ্য নিষিদ্ধের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে প্রদান করা হয়েছে। অথচ বিদেশি সিগারেট কোম্পানিগুলো বিডাকে ব্যবহার করে দেশে সিগারেট বাজার বৃদ্ধির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশে নতুন সিগারেট কোম্পানির প্রসার বা স্থাপনের যেকোনো উদ্যোগ সংবিধানে উল্লেখিত নির্দেশনা এবং আপীল বিভাগের রায়ের পরিপন্থী।
শাগুফতা সুলতানা বলেন, তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের কারণে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। কিছু সুবিধাভোগী সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা জনস্বার্থের চেয়ে কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে তৎপর।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫, এর ধারা ১২ অনুসারে তামাক জাতীয় ফসল চাষে নিরুৎসাহিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণের অধিকার রাখে।
আইকে/টিকে