টেলিভিশন অনুমোদন নিয়ে যে হাহাকার, এই হাহাকার হচ্ছে পুরাতন বন্দোবস্ত এবং যারা মনে করে যে নতুন কোনো মানুষ বা নতুন কোনো মুখ যাতে না আসে, তাদের হাহাকার বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, আমরা যেহেতু ফ্যাসিবাদের মিডিয়া বন্ধ করিনি, আমরা নতুন মিডিয়া দেব।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকায় প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমে জুলাই ও তারপর’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহফুজ আলম এসব কথা বলেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে পিআইবির পাঁচটি প্রকাশনা ‘তারিখে জুলাই’, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবিতা’, ‘নিরীক্ষা: অভ্যুত্থান মিডিয়া বয়ান’, ‘যে সাংবাদিকদের হারিয়েছি’ এবং ‘ঘটনাপঞ্জি ২০২৪’ প্রকাশনা উৎসব উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
এ সময় ভুল স্বীকার করে মাহফুজ আলম বলেন, ৮ আগস্ট বা ৬ আগস্ট সজীব ওয়াজেদ জয় একটা ফেসবুক পোস্টে ‘মবোক্রেসি’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। আজকে বাংলাদেশকে ঘুরেফিরে ওই শব্দের ভেতর নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। এটা আমাদের একটা ব্যর্থতা। আমি স্বীকার করে নিচ্ছি এবং অনেক কিছু হয়তো আমরা সামাল দিতে পারিনি।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা মিডিয়াতে হস্তক্ষেপ করিনি। মিডিয়ার স্বাধীনতা এবং দায়িত্বশীলতা নিয়ে গত ৪ মাস ধরেই কথা বলে যাচ্ছি। আমি দেখছি না দায়িত্বশীলতা বলে কিছু আছে। বরং ‘সেট অব ন্যারেটিভস’ বার বার পুশ করা হচ্ছে। বার বার আমাদের পেছনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা যেই জায়গায় ছিলাম সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেই ন্যারেটিভগুলোতে পা রেখে হাসিনা এতদিন ক্ষমতায় ছিল। এক বছরে যেই মুখগুলো হারিয়ে গিয়েছিল তাদের আবার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, শিকারি সাংবাদিকতা এবং ১৫ বছরে গণমাধ্যমের যে পরিবর্তন এ বিষয়ে প্রতিবেদন করতে আমরা জাতিসংঘকে চিঠি লিখেছিলাম। বলা হয়েছিল একটা স্বাধীন তদন্ত করতে। দুঃখের সাথে বলতে হয় জুলাই- আগস্ট নাগাদ তারা আমাকে বললেন ইউনেসকোর সাথে কথা বলতে। ইউনেসকো বললো, আমরা মিডিয়া সামনে কীভাবে কাজ করবে সেটার কোড অব কনডাক্ট করে দিতে চাই।
গত ১৫ বছরে গণমাধ্যমের মালিক সম্পাদক যারা ফ্যাসিবাদী আমলে ছিলেন তাদের অবশ্যই ক্ষমা চাওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের জনগণের কাছে আসা উচিত এবং দায়বদ্ধ হওয়া উচিত। আমি বার বার বলেছি আকারে ইঙ্গিতে বলি, কারণ তথ্য উপদেষ্টা কিছু বললে তা নিউজ হয়ে যায় এমন অভিযোগও তোলেন তিনি।
মাহফুজ আলম বলেন, আজকে টেলিভিশন অনুমোদন নিয়ে যে হাহাকার, এই হাহাকার হচ্ছে পুরাতন বন্দোবস্ত এবং যারা মনে করে যে নতুন কোনো মানুষ বা নতুন কোনো মুখ যাতে না আসে, তাদের হাহাকার। এগুলো আমরা বুঝি। এ জন্য আমি গতকাল স্পষ্ট বলেছি এবং আমি যদি এক দিনও থাকি সরকারে, আমি চেষ্টাটাই করব যে আমি নতুন মিডিয়া (গণমাধ্যম) দিয়ে দেব। আমরা যেহেতু ফ্যাসিবাদের মিডিয়া বন্ধ করিনি, আমরা নতুন মিডিয়া দেব।
উপদেষ্টা আরও বলেন, নতুন মিডিয়ার মাধ্যমে নতুন মুখ আসবে, নতুন ন্যারেটিভ আসবে, নতুন বক্তব্য আসবে এবং এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে বক্তব্যের লড়াই হবে। যেহেতু আমরা ভায়োলেন্সে (সহিসতা) যাইনি, ফলে বক্তব্যের বিরুদ্ধে বক্তব্যের লড়াই ও চিন্তার বিরুদ্ধে চিন্তার লড়াইয়ে আমরা যাব। আমরা মনে করি, আমরা অবশ্যই জয়ী হব। এগুলো খুবই স্পষ্ট কথা। এখানে কোনো ধোঁয়াশা রাখার কিছু নেই।
আমি পিআইবিকে বলতে চাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করেন।মানুষ তখন অপেক্ষায় ছিলো টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দেখার জন্য। একটা কিছু দেখায়নি মানুষগুলোকে মেরে ফেলা হচ্ছে। মিডিয়াগুলো যদি মনে করে রাজনৈতিক দল এবং যারা ক্ষমতার অংশীদার তাদের সাথে মিলে মিশে তাদেরকে একটু সাথে রেখে পার পেয়ে যাবে আমি মনে করি না যে পাবে।
কেএন/টিকে