আইসিসি নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের জন্য সময়টা যেন দুঃস্বপ্নের মতো কাটছে। টানা তিন ম্যাচে হারের পর তাদের সেমিফাইনালের স্বপ্ন এখন অনেকটাই ঝুঁকির মুখে। তবুও ক্রিকেটে যেমন বলা হয়, খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই শেষ নয়, ঠিক তেমনি এখনো খাতা কলমে পাকিস্তানের সামনে সম্ভাবনার দরজা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি।
গত বুধবার (৮ অক্টোবর) কলম্বোয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে পাকিস্তানের পরাজয় ছিল একপাক্ষিক। ২২২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান ১১৪ রানে গুটিয়ে যায়, ফলে হারে ১০৭ রানের বিশাল ব্যবধানে।ম্যাচের শুরুটা কিন্তু পাকিস্তানের বোলাররা দারুণ করেছিল। মাত্র ১১৫ রানে অস্ট্রেলিয়ার ৮ উইকেট তুলে নেয়ার পর জয়টা হাতের নাগালেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু বেথ মুনি ও অ্যালানা কিংয়ের অবিশ্বাস্য এক নবম উইকেট জুটি বদলে দেয় ম্যাচের চিত্র।
মুনি খেলেন ১১৪ বলে অনবদ্য ১০৯ রানের ইনিংস, আর কিং অপরাজিত থাকেন ৪৯ বলে ৫১ রানে। সেই এক জুটিতেই গড়ে ওঠে ১০৭ রানের পার্টনারশিপ, যা শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের ব্যাটারদের জন্য হয়ে দাঁড়ায় অদম্য পাহাড়। এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচে হেরে গেল পাকিস্তান। টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছিল ২ অক্টোবর, বাংলাদেশ ম্যাচ দিয়ে। যেখানে পাকিস্তান হারে ৭ উইকেটে। দ্বিতীয় ম্যাচে ৫ অক্টোবর ভারতের বিপক্ষে, বোলাররা দারুণ শুরু করলেও ব্যাটাররা ব্যর্থ হয়। ২৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দল গুটিয়ে যায় ১৫৯ রানে, হার ৮৮ রানে। আর তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাটিং বিপর্যয়ে ভুগে পাকিস্তান হার মানে ১০৭ রানে।
তিন ম্যাচ শেষে পাকিস্তানের পয়েন্ট শূন্য, আর দলটি এখন পয়েন্ট টেবিলের একেবারে তলানিতে। বিশ্বকাপে মোট আটটি দল খেলছে, আর প্রতিটি দল লিগ পর্বে সাতটি করে ম্যাচ খেলবে। এর মধ্যে শীর্ষ চারটি দল উঠবে সেমিফাইনালে। পাকিস্তানের এখনো চারটি ম্যাচ বাকি, আর সেমিফাইনালে উঠতে হলে এই চারটিতেই জয় পেতে হবে এবং সেটাও বড় ব্যবধানে, যাতে রানরেট উন্নত হয়।
তবে এখানেই শেষ নয়, পাকিস্তানের ভাগ্য নির্ভর করছে অন্য দলগুলোর ফলাফলের ওপরও। এখন পর্যন্ত ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া দুটি করে জয় পেয়েছে। যদি এই দলগুলোর সঙ্গে আরও এক বা দুই দল চারটির বেশি ম্যাচ জিতে ফেলে, তাহলে পাকিস্তানের জন্য আর কোনো রাস্তা খোলা থাকবে না। অর্থাৎ, শুধু নিজেরাই জেতা নয় পাকিস্তানকে এখন চাই অন্যান্য দলের হোঁচটও।
পাকিস্তানের পরের ম্যাচগুলোও সহজ নয়। ১৫ অক্টোবর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ। এরপর ১৮ অক্টোবর তাদের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। ২১ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ২৪ অক্টোবর স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলবে পাকিস্তান। এই চারটি ম্যাচের প্রত্যেকটিতেই জয় পেতে হবে তাও বড় ব্যবধানে। রানরেট এখন পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধারাবাহিক পরাজয়ে দলটি এখন মানসিক চাপেও ভুগছে। প্রতিটি ম্যাচে পাকিস্তানের বোলাররা দারুণ শুরু করলেও ব্যাটিং বিভাগই হতাশ করছে। শুরুতে উইকেট হারিয়ে দল বারবার ভেঙে পড়ছে। সেরা ব্যাটারদের ধারাবাহিকতা না থাকায় চাপটা আরও বেড়ে যাচ্ছে।
তবে ইতিবাচক দিকও আছে যেমন নাশরা স্যান্ডু, দার, ফাতিমা সানার মতো বোলাররা নিয়মিত উইকেট নিচ্ছেন। ব্যাটিং লাইনআপ যদি আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়, তাহলে বাকি ম্যাচগুলোতে পাকিস্তান এখনও ‘ডার্ক হর্স’ হিসেবে ফিরতে পারে। খেলা এখনো শেষ হয়নি। তাত্ত্বিকভাবে সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা বেঁচে আছে পাকিস্তানের। কিন্তু বাস্তবতা হলো প্রতিটি ম্যাচই এখন তাদের কাছে ‘ডু অর ডাই’ পরিস্থিতি। বাকি চারটি ম্যাচে যদি দল একসঙ্গে পারফর্ম করতে পারে, আর অন্য দলগুলো হোঁচট খায়, তবে ক্রিকেটের অনিশ্চয়তার খেলায় চমক এখনও সম্ভব।
এসএস/এসএন