ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপ, যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে বাড়ি নির্মাণের খরচ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা নতুন শুল্ক মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) থেকে কার্যকর হয়েছে। কাঠ, আসবাবপত্র ও রান্নাঘরের ক্যাবিনেট আমদানির ওপর আরোপিত এ শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে গৃহনির্মাণ ব্যয় আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা ইতিমধ্যেই চ্যালেঞ্জপূর্ণ হাউজিং মার্কেটকে আরও চাপে ফেলবে।
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, দেশের শিল্প খাতকে সহায়তা করা ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে এসব শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরে আসার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে আরোপ করা খাতভিত্তিক শুল্কের অংশ।

সর্বশেষ ঘোষণায় নরম কাঠ বা সফটউড আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। কিছু আসবাবপত্র ও রান্নাঘরের ক্যাবিনেটের ক্ষেত্রে প্রাথমিক শুল্ক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আমদানিকৃত আসবাবপত্রের শুল্কহার ৩০ শতাংশে উন্নীত হবে। একই সময় ক্যাবিনেট ও ভ্যানিটি পণ্যের শুল্ক ৫০ শতাংশে পৌঁছাবে।

তবে যুক্তরাজ্যের কাঠপণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশের বেশি হবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। তিন দেশই ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছে কঠোর শুল্ক এড়াতে সক্ষম হয়েছে।

তবুও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব হোম বিল্ডার্সের (এনএএইচবি) চেয়ারম্যান বাডি হিউজ সতর্ক করে বলেছেন, এই নতুন শুল্ক এরই মধ্যে বিপর্যস্ত হাউজিং মার্কেটে আরও প্রতিকূলতা সৃষ্টি করবে, কারণ এতে নির্মাণ ও সংস্কার ব্যয় আরও বাড়বে।

গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে গৃহবিক্রি আশানুরূপ নয়। উচ্চ মর্টগেজ সুদহার ও সীমিত ঘরবাড়ির সরবরাহের কারণে ক্রেতাদের জন্য ব্যয় বেড়েই চলেছে।

সর্বশেষ শুল্ক আরোপের সময় ট্রাম্প বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন- কাঠপণ্য প্রতিরক্ষা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাঠ উৎপাদন এখনো ‘অপর্যাপ্ত’ অবস্থায় রয়েছে, যার ফলে দেশটি আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে এনএএইচবির চেয়ারম্যান হিউজ বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র অজুহাতে এসব শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে, কিন্তু এটি আসলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের শারীরিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় ঘাটতি তৈরি করবে। তিনি শুল্ক প্রত্যাহারের মাধ্যমে নির্মাণ উপকরণের দাম কমাতে নতুন চুক্তির আহ্বান জানান।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে কানাডা, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কাঠ সরবরাহকারী দেশ। নতুন ১০ শতাংশ শুল্ক কানাডার ওপর আগে থেকেই থাকা অ্যান্টি-ডাম্পিং ও পাল্টা শুল্কের সঙ্গে যুক্ত হবে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এই শুল্ক দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশে উন্নীত করেছে। ফলে ট্রাম্পের নতুন ঘোষণার ফলে কানাডিয়ান কাঠের মোট শুল্ক দাঁড়াচ্ছে ৪৫ শতাংশে।

কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার কাঠ উৎপাদকদের সংগঠন বি.সি. লাম্বার ট্রেড কাউন্সিল সেপ্টেম্বরে এক বিবৃতিতে এ পদক্ষেপকে ‘ভুল ও অপ্রয়োজনীয়’ বলে আখ্যা দিয়েছে। সংগঠনটি জানায়, এই সিদ্ধান্ত উত্তর আমেরিকার বাজারে অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করবে, সীমান্তের উভয় পাশে চাকরি হুমকির মুখে ফেলবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন সংকট আরও তীব্র করবে।
ক্যাপিটাল ইকনমিকসের অর্থনীতিবিদ স্টিফেন ব্রাউন বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ শতাংশ কাঠ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। তাই ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপে একটি সাধারণ বাড়ি নির্মাণের খরচ প্রায় ২,২০০ ডলার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

ব্রাউন আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের আসবাবপত্র আমদানির বড় অংশ আসে চীন, ভিয়েতনাম ও মেক্সিকো থেকে। তার হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রের মোট আসবাবপত্র আমদানির ২৭ শতাংশ চীনের, প্রায় ২০ শতাংশ ভিয়েতনামের ও আরও ২০ শতাংশ মেক্সিকোর।

তার মতে, ভিয়েতনাম সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে, কারণ দেশটির মোট রপ্তানির ১০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে আসবাবপত্র রপ্তানি থেকে আসে। তুলনামূলকভাবে চীনের ক্ষেত্রে এ হার ৪ শতাংশ এবং মেক্সিকোর ২ দশমিক ৫ শতাংশ।

নতুন শুল্কগুলো ১৯৬২ সালের ট্রেড এক্সপ্যানশন অ্যাক্টের ২৩২ ধারা অনুযায়ী আরোপ করা হয়েছে। একই আইনের অধীনে ট্রাম্প এ বছর ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ির ওপরও শুল্ক আরোপ করেছেন।

এ ধরনের খাতভিত্তিক শুল্ক আরোপ করা পণ্যের ক্ষেত্রে আলাদা করে দেশভিত্তিক উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হবে না, যা কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি হারে কার্যকর রয়েছে।

টিজে/টিকে


Share this news on:

সর্বশেষ

img
শিক্ষকদের ন্যায্য সব দাবি মেনে নিন : ব্যারিস্টার ফুয়াদ Oct 14, 2025
img
গভীর সমুদ্র মৎস্য আহরণে এফএও মহাপরিচালকের সহায়তার আশ্বাস Oct 14, 2025
img
এবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির পথে ইতালি! Oct 14, 2025
img
৪-৫ জন উপদেষ্টা একটি বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করছে: ডা. তাহের Oct 14, 2025
img
রুক্মিণীর নতুন ছবি ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’-এ চিরঞ্জিতের আবেগঘন প্রশংসা Oct 14, 2025
img
অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের ‘সেনা আইনে’ বিচার দাবি এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন Oct 14, 2025
img
১৯ অক্টোবরের মধ্যে এনসিপি প্রতীক না নিলে ইসি নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে Oct 14, 2025
img
ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে ‘সুন্দরী’ বললেন ট্রাম্প Oct 14, 2025
img
ক্ষমতা ছাড়বেন মাদুরো : মারিয়া কোরিনা মাচাদো Oct 14, 2025
img
২০ বছর পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক Oct 14, 2025
নিশ্বাস ধরে ‘পারফেক্ট শট’ দিলেন সামিরা খান মাহি! Oct 14, 2025
img
শেখ হাসিনাকে ফেরাতে রেড নোটিশ জারির পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে: দুদক চেয়ারম্যান Oct 14, 2025
নেটপাড়ায় শিরোনামে তামান্না ভাটিয়া, বিতর্কে অন্নু Oct 14, 2025
'মার্চ টু সচিবালয়' যা বলছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা Oct 14, 2025
কেমন সাড়া পাচ্ছেন রাবিতে ছাত্রশিবিরের প্যানেল? জানালেন ভিপি প্রার্থী Oct 14, 2025
img
সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়নি : বাণিজ্য উপদেষ্টা Oct 14, 2025
img
টিভিতে দেখাবে না বাংলাদেশ-হংকং চায়না ম্যাচ, দেখা যাবে অনলাইনে Oct 14, 2025
img
ট্রাম্প শান্তির দূত, ফের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করব: শেহবাজ শরিফ Oct 14, 2025
img
বিকেলে জাপানের মুখোমুখি হচ্ছে ব্রাজিল Oct 14, 2025
img
তেহরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি করতে প্রস্তুত ওয়াশিংটন Oct 14, 2025