তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল চালু না হওয়ায় আগামী বছর বড় ধরনের ব্যান্ডউইথ ঘাটতিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সেবাদাতারা বলছেন, বর্তমানে দৈনিক ৮ হাজার ৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে। ২০২৬ সালে যা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ১৪ হাজার জিবিপিএসে। তখন সরকারি দুটি সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতা থাকবে চাহিদার অর্ধেক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না মেলায় আটকে আছে বেসরকারি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের কাজও। ফলে ৬ হাজার জিবিপিএসের বেশি ব্যান্ডউইথ আমদানি করতে হবে ভারত থেকে।
কেনাকাটা, পড়াশোনাসহ দৈনন্দিন নানা কাজে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড মিলিয়ে ৮ হাজার ৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করেন ১৩ কোটি গ্রাহক। স্টারলিংক আসায় ব্যান্ডউইথ চাহিদা আরও বাড়ছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদার বিপরীতে সক্ষমতা নেই সরকারের। দুটি সরকারি সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতা মাত্র ৭ হাজার ২২০ জিবিপিএস। বাড়তি মূল্যের কারণে যেখান থেকে ৪ হাজার ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ নিচ্ছে সেবাদাতারা।
তবে তুলনামূলক কম খরচে বাকি অর্ধেক ভারত থেকে এনে সরবরাহ করছে আইটিসি অপারেটররা। এজন্য মাসে গড়ে ৬০ কোটি টাকা দিতে হচ্ছে প্রতিবেশী দেশটিকে। বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। আইএসপিএবির তথ্য বলছে, ২০২৬ সালে ব্যান্ডউইথ চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ১৩ হাজার ৮৪৩ জিবিপিএসে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল চলতি বছরই চালুর কথা থাকলেও তা পিছিয়ে গেছে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, চলতি বছরও শেষ হচ্ছে না ১৭ হাজার জিবিপিএস সক্ষমতার তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের কাজ। ২০২৬ সালের মাঝামাঝি বা শেষ নাগাদ বাণিজ্যিক কার্যক্রমে আসবে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল।
এ পরিস্থিতিতে আগামী বছরে দৈনিক ব্যান্ডউইথ ঘাটতি বেড়ে দাঁড়াবে ৬ হাজার ২৪৩ জিবিপিএসে। যা ভারত থেকে আমদানি করতে হবে। এতো গেল সরকারি উদ্যোগ। বিকল্প আছে বেসরকারি খাতের তিনটি সাবমেরিন ক্যাবল। ৪৫ হাজার জিবিপিএস সক্ষমতার এই ক্যাবল ২০২৬ সালের শুরুতেই চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, এরই মধ্যে মিয়ানমার অংশের কাজ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ অংশে ক্যাবল স্থাপনের অনুমতি চেয়ে ডাক টেলিযোগাযোগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে তারা। তবে এখনো অনুমতি মেলেনি।
মেটাকোর সাবকম লিমিটেডের পরিচালক আমিনুল হাকিম বলেন, ২০২৪ সালে মন্ত্রণালয়গুলো কোনো ধরনের রেসপন্স করেনি। এর ফলশ্রুতিতে গত আগস্টে আবার চিঠি দিয়েছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে আগামী ডিসেম্বরেই কাজ শুরু হবে।
যদিও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলছেন, সরকারের দিক থেকে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কোনো বাধা দেয়া হচ্ছে না। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বেসরকারি সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানিতে ক্যাবল আনবে। অঞ্চলভিত্তিক বিষয়গুলো মেনেই আনতে হবে। তাদের ওপর কোনো বাধা নেই।
উল্লেখ্য, আইএসপিএবির হিসাবে ২০২৭ সালে দেশে দৈনিক ব্যান্ডউইথ চাহিদা দাঁড়াবে ১৭ হাজার ৭৮৯ জিবিপিএসে।
এমকে/এসএন