ভারতের বৃহত্তম বিদেশি বাজার যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্যের রপ্তানিতে ব্যাপক ধস দেখা দিয়েছে। কেবল গত সেপ্টেম্বরেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের পণ্য রপ্তানি ২০ শতাংশ কমে গেছে। এছাড়া দেশটিতে গত চার মাসে ভারতীয় রপ্তানি কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত উচ্চ শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর ভারতীয় রপ্তানিতে ভয়াবহ এই ধস নেমেছে বলে দেশটির সরকারি এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়েছে, ভারতের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকরের প্রথম মাস পূর্তি হয়েছে সেপ্টেম্বরে। দেশটির পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক কার্যকর হয় গত ২৭ আগস্ট থেকে। এই শুল্কের মাঝে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখায় যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত জরিমানাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
নয়াদিল্লি-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) অজয় শ্রীবাস্তব বলেছেন, শুল্ক বৃদ্ধির পর ভারতের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাজারে পরিণত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে, যার লক্ষ্য আগামী মাসের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছানো।
জিটিআরআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই শুল্কের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে ভারতের শ্রমনির্ভর খাতে। এসব খাতের মধ্যে বস্ত্র, রত্ন ও গয়না, প্রকৌশল পণ্য এবং রাসায়নিক পণ্যসামগ্রীও রয়েছে। মার্কিন শুল্কের কারণে ভারতীয় এসব শ্রমনির্ভর খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি টানা চার মাস ধরে কমেছে। মে মাসের ৮.৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি থেকে সেপ্টেম্বরে ৫.৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের রপ্তানি ৩৭.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
রপ্তানি কমে যাওয়ার ফলে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতিও বৃদ্ধি পেয়েছে; যা গত সেপ্টেম্বরে পৌঁছেছে ১৩ মাসের সর্বোচ্চ ৩২.১৫ বিলিয়ন ডলারে। তবে, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং চীনের মতো দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে দিয়েছে।
এদিকে, কয়েক মাসের অচলাবস্থার পর গত মাসে পুনরায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে বাণিজ্য আলোচনা শুরু হয়েছে। বর্তমানে একটি ভারতীয় প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে আলোচনায় অংশ নিচ্ছে।
বুধবার ট্রাম্প বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে রাজি হয়েছেন। ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ওয়াশিংটন ক্রেমলিনের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলোচনা ‘চলমান’ রয়েছে এবং তারা ‘ভারতের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা গভীর করার আগ্রহ দেখিয়েছে।’
তবে বাণিজ্য ইস্যুতে দুই দেশের মাঝে কিছু বড় ধরনের অমীমাংসিত বিষয় রয়ে গেছে। বিশেষ করে কৃষি ও দুগ্ধ খাতে প্রবেশাধিকার নিয়ে দুই দেশ এখনও অনড় অবস্থানে রয়েছে।
বহু বছর ধরে ভারতের কৃষিখাতে প্রবেশাধিকার চেয়ে আসছে ওয়াশিংটন। যদিও ভারত তার কৃষিখাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশের বিরোধিতা করছে। দেশের নাগরিকদের খাদ্য নিরাপত্তা, জীবিকা ও লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থের কারণ দেখিয়ে এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে বিরোধিতা করছে নয়াদিল্লি।
কয়েক মাস আগেও ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪ সালে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৯০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। ট্রাম্প ও মোদি এই বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন।
সূত্র: বিবিসি।