সেনা হেফাজতে থাকা তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার নিয়ে ভিন্ন তথ্য!

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা তিন মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে পাঠানো গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় নাম আসা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার সম্পর্কে তার পরিচিতিজনরা ভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন। যেসব অপরাধে অভিযুক্ত হিসেবে ১৫ জনকে সেনা হেফাজতে নেয়া হয়েছে তার সঙ্গে তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার কতটা জড়িত সে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। 

তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার সেনানিবাসের বাইরে সবশেষ র‍্যাব ও ডিজিএফআইতে দায়িত্বে ছিলেন। এর মধ্যে র‍্যাবে থাকার সময় জলদস্যু মুক্ত সুন্দরবন, ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান ও টেকনাফে মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত ওসি প্রদীপকে বিচারের আওতায় আনতে অগ্রণী ভূমিকায় ছিল তার।

সেনাবাহিনীতে এবং বাইরের কর্মস্থলে তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা অনেকেই বলছেন, একজন সৎ এবং মানবিক অফিসার হিসেবে খ্যাতি ছিল তার। প্রেষনে থাকা অবস্থায় তিনি পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছিলেন। এমনকি ব্যক্তিগতভাবে কেউ তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দেয়নি। 

বর্তমান সেনা হেফাজতে থাকা ১৫ জনের মধ্যে তার নাম দেখে পরিচিত অনেকেই চমকে উঠেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে অনেকেই লিখেছেন, ছাত্র জীবন থেকে মেধাবী ও পরে সেনা কর্মকর্তা হিসেবে তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার পেশাগত দক্ষতা ও নিষ্ঠার স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।

তিনি যখন র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক তখনই কক্সবাজারের টেকনাফে মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় আসামি ওসি প্রদীপকে গ্রেফতার এবং প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনে অগ্রণী ভূমিকা ছিল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ারের। 

তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা নাখোস হলেও সত্য উন্মোচনে তিনি ওই সময় নির্ভীক ভূমিকা রেখেছিলেন বলেই তার তৎকালীন সহকর্মী ও পরিচিতরা বলছেন। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সন্তান তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার। এলাকায় তাদের পরিবার সম্ভ্রান্ত। স্থানীয়রা তাকে অত্যন্ত অমায়িক ও সৎ নির্ভীক সেনা অফিসার হিসেবেই চেনেন। 

এছাড়া জীবনের কোন পর্যায়ে তিনি ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। ফেসবুকে তার নামে একটি লেখা ভাইরাল হয়েছে যেখানে তিনি বলেছেন, "আমি কোন মানুষের ক্ষতি করিনি, ক্ষমতার অপব্যবহার করিনি, সেহেতু আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি একটি পরীক্ষা হিসেবে আমি মনে করছি। অনেক মহৎ মানুষকে আল্লাহ পরীক্ষা করে থাকেন। , আমার মত একজন সাধারন পাপী বান্দাকে আল্লাহতালা এই পরীক্ষায় ফেলে জগত এবং মানুষকে নতুনভাবে চেনার সুযোগ দিয়েছেন। যদি মনে করে থাকো, আমি এধরনের কোন অপরাধ এর সাথে জড়িত নয় তাহলে আমার জন্য দোয়া করবে, যেন সসম্মানের তোমাদের মধ্যে ফেরত আসি।"

তিনি আরো বলেছেন, "যদি কেউ কোন তথ্য কিংবা প্রমাণ পেয়ে থাকো আমি এ ধরনের কোন অপরাধের সাথে জড়িত, তাহলেও দোয়া করবে যেন আমার শাস্তি হয়। আমি দোয়া করি মিডিয়া প্রেশার, মিডিয়া জাস্টিস, প্রতিহিংসা ইত্যাদির ক্রোধানলে যেন কোন নিরপরাধ মানুষের শাস্তি না হয়। এতে জুলাই শহিদের রক্তের সাথে বেইমানি হবে। ইনশাআল্লাহ সুবিচার হবে। শুধুমাত্র দোষীরাই শাস্তি পাবে। 

এদিকে ট্রাইবুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা তিন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর যে ১৫ কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী নিজেদের হেফাজতে রাখতে চায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।

আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার যদি কোনো বাড়িকে সাবজেল বা উপকারাগার ঘোষণা করে, সেখানে মামলার আসামি রাখতে পারেন। এমন নজির এর আগেও রয়েছে। ২০০৭-০৮ সালে এক-এগারোর সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের পর সংসদ ভবন এলাকায় দুটি বাড়িকে সাবজেল ঘোষণা করে সেখানে তাঁদের রাখা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তিন মামলায় গত বুধবার সেনাবাহিনীর ২৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। একসঙ্গে এতসংখ্যক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি দেশে এর আগে ঘটেনি।

তাঁদের মধ্যে ১৫ জন এখনো চাকরিতে আছেন। একজন এলপিআরে (অবসরোত্তর ছুটিতে) আছেন। তাঁদের আদালতে হাজির করার বিষয়ে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব আছে। সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে ১৫ জনকে হেফাজতে নিয়ে গেছে। একজন আত্মগোপনে চলে গেছেন। তিনি হলেন মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ। ডিজিএফআইয়ে সাবেক এই পরিচালক সর্বশেষ সিলেটে সেনাবাহিনীর স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকসে (এসআইঅ্যান্ডটি) কমান্ড্যান্ট পদে ছিলেন। এর আগে তিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক সচিব ছিলেন।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মেঘলা থাকতে পারে ঢাকার আকাশ Oct 18, 2025
img
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকারের দায়ে ভোলায় ১৭ জেলে আটক Oct 18, 2025
img
লিগ খেলতে অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের কোচিং স্টাফে থাকবেন না সাউদি Oct 18, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Oct 18, 2025
এনসিপিসহ চার বাম দলের জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জন Oct 18, 2025
নির্বাচন কীভাবে করবেন তা নিয়ে নিজেরা বসুন, রাজনৈতিক নেতাদের ড. ইউনূস Oct 18, 2025
আইনি নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত স্বাক্ষরে অংশগ্রহণ নয় : এনসিপি Oct 18, 2025
বাংলাদেশ-পাকিস্তান বাণিজ্যে ঘাটতি কমানোর কৌশল আলোচনায় Oct 18, 2025
নতুন বাংলাদেশের জন্ম হলো আজ: ড. ইউনূস Oct 18, 2025
img
অর্ধেকেরও কম রাজনৈতিক দল মিলে জাতীয় ঐকমত্য করেছে: মাসুদ কামাল Oct 18, 2025
img
জুলাই সনদ রাজনৈতিক বাস্তবতা নাকি পরিকল্পিত নাটক: জিল্লুর রহমান Oct 18, 2025
img
নেতানিয়াহুর দেশের সাথে সম্পর্ক গড়বে সৌদি, আশা ট্রাম্পের Oct 18, 2025
img
ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলই চিনতাম না: জয়া আহসান Oct 18, 2025
img
জাকেরকে নিয়ে করা মন্তব্যে বাংলাদেশ কোচের বিরক্তি প্রকাশ Oct 18, 2025
img
চুল কাটতে গিয়ে কক্সবাজারের যুবলীগ নেতা ঢাকায় গ্রেপ্তার Oct 18, 2025
img
আমার ছেলে মেসির ফ্যান, তাই ফুটবল খেলা বেশি দেখি: শামা ওবায়েদ Oct 18, 2025
img
পাকিস্তানের হামলায় প্রাণ হারাল ৩ ক্রিকেটার, ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে না আফগানরা Oct 18, 2025
img
ফোনালাপে নেতানিয়াহুর ভূয়সী প্রশংসা করলেন মাচাদো Oct 18, 2025
img
রিয়াদে এক সিনেমায় শাহরুখ,সালমান ও আমির খান Oct 18, 2025
img
শাপলা প্রতীক নিয়ে মন্তব্য এনসিপি নেত্রী সামান্তার Oct 18, 2025