রাজনৈতিক বিশ্লেষক জিল্লুর রহমান বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে গণভোটের আলোচনা শুরু হলেও প্রশ্ন রয়ে গেছে এটি কি সমস্যার সমাধান নাকি নতুন বিভ্রান্তির সূচনা? সব দল এতে স্বাক্ষর করেনি, কারো কারো মতামতও নেওয়া হয়নি। ফলে পূর্ণ রাজনৈতিক ঐক্য ও জনবোঝাপড়া ছাড়া এই গণভোট কিভাবে অর্থবহ হতে পারে?
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে জিল্লুর রহমান এসব কথা বলেন। জিল্লুর রহমান বলেন, ‘‘গণভোট সাধারণত একটি সরল প্রশ্নে ‘হ্যা’ বা ‘না’র মাধ্যমে জনমত যাচাই করে কিন্তু জুলাই সনদ জটিল দলিল। এতে সাংবিধানিক পুনর্বিন্যাস, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, ট্রানজিশনাল জাস্টিস ও রাষ্ট্রচিন্তার নীতিমালা রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ‘বাস্তবায়ন হবে কি না’ এই একক প্রশ্নে ভোট নিলে জনমতের বিকৃতি ঘটতে পারে।’’ তিনি বলেন, বাংলাদেশে আগের তিন গণভোট ১৯৭৭, ১৯৮৫ ও ১৯৯১ এর অভিজ্ঞতা দেখায়, রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রভাব ও অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন ছিল সব সময়। এবার প্রস্তাব করা হচ্ছে সনদের ৮৪টি প্রস্তাব ব্যালটে না তুলে কেবল বাস্তবায়নের প্রশ্নে ভোট নেওয়ার। কিন্তু ভোটাররা যদি বিস্তারিত না জানেন, তা হলে সিদ্ধান্ত কতটা বিবেচনাসঙ্গত হবে?
তিনি আরো বলেন, গণতান্ত্রিক দেশগুলো বড় সংস্কারের আগে দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে যায়। পার্লামেন্টারি স্ক্রুটিনি, হোয়াইট পেপার, ব্যাখ্যামূলক বুকলেট, গণশুনানি এসব ছাড়া শুধু হ্যাঁ-না ভোট দেওয়া বিবেচকের পথ নয়।
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ চাইতে পারেন কিন্তু আদালতের মতামত রাজনৈতিক বৈধতা দেয় না তা আসে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া ও জনসম্পৃক্ততা থেকে। আবার নির্বাচনের দিনেই গণভোট নেওয়ার প্রস্তাব ব্যবস্থাপনাগত ঝুঁকি বাড়াবে; আলাদা তারিখে আয়োজন করলে তা আরো গ্রহণযোগ্য হতো।’ তিনি বলেন, জুলাই সনদ ক্ষমতা বণ্টন ও ভবিষ্যৎ কাঠামোর নতুন সমীকরণ টানে।
ফলে আদালত, নির্বাহী ও আইনসভার সম্পর্কেও নতুন টানাপোড়েনের আশঙ্কা আছে। এসব ঝুঁকি ব্যাখ্যা না করলে ভোটার অন্ধ নির্বাচনের মুখে পড়বেন। তিনি বলেন, এখন প্রয়োজন অগ্রাধিকারের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য আনা। হাসপাতাল, শিক্ষা, আইনশৃঙ্খলা, আদালতের স্বচ্ছতা এখানেই মানুষ পরিবর্তন দেখতে চায়। বড় বক্তৃতা বা আন্তর্জাতিক করতালি নয়, নাগরিক আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন মূল কাজ।
জিল্লুর রহমানের মনে করেন, গণভোট যদি হয়ও, তা হতে হবে স্পষ্ট প্রশ্নে, তথ্যসমৃদ্ধ প্রচারে, স্বচ্ছ বিধানে এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে। অন্যথায় এটি হবে আরেকটি বিভাজনের যন্ত্র। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পুঁজি রাজনৈতিক বাকচাতুর্য নয়, জনবিশ্বাস। সেই বিশ্বাস ফেরানোই এখন জরুরি। কারণ ব্যাখ্যার ব্যালটে জিতলেই প্রকৃত অর্থে দেশ জেতে।
এসএস/টিএ