স্কোরলাইনে তখন সমতা। ৯০ মিনিট পেরিয়ে যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটের খেলা চলছিল। বক্সের ডান দিক থেকে ফ্রেংকি ডি ইংয়ের কাট-ব্যাকে ছুটে গিয়ে স্লাইডে বল জিরোনার জালে পাঠালেন রোনাল্দ আরাউহো। জার্সি খুলে ছুটলেন বদলি নামা এই ডিফেন্ডার। পেছনে তার সতীর্থরা। গোটা বার্সেলোনা শিবিরে সে কী উল্লাস! জয়ে ফেরার স্বস্তিতে লা লিগার শীর্ষে উঠল হান্সি ফ্লিকের দল।
ঘরের মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে শনিবার লিগ ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতেছে শিরোপাধারীরা। প্রথমার্ধে পেদ্রির দারুণ গোলে বার্সেলোনা এগিয়ে যাওয়ার পর বাইসাইকেল কিকে সমতা ফেরান অ্যালেক্স উইটসেল। দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটায় আক্রমণে দাপট দেখিয়েও আর গোলের দেখা পাচ্ছিল না স্বাগতিকরা। চার মিনিট যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে ব্যবধান গড়ে দেন ৮২তম মিনিটে মাঠে নামা আরাউহো।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা দুই হারের পর জয়ের স্বাদ পেল বার্সেলোনা। রেয়াল মাদ্রিদকে টপকে আপাতত লা লিগার চূড়ায় উঠল কাতালান দলটি। ৯ ম্যাচে সাত জয় ও এক ড্রয়ে বার্সেলোনার পয়েন্ট হলো ২২। এক ম্যাচ কম খেলে ২১ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে রেয়াল। রোববার গেতাফের বিপক্ষে জিতলে আবার শীর্ষে উঠবে শাবি আলোন্সোর দল।
ম্যাচে ৬৮ শতাংশ পজেশন রেখে গোলের জন্য বার্সেলোনা শট নেয় মোট ২৭টি, যার ৯টি ছিল লক্ষ্যে। জিরোনার ১১ শটের ৪টি লক্ষ্যে ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পিএসজির বিপক্ষে হারের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলের বিরতির আগে লা লিগায় সেভিয়ার মাঠে পরাজয়ের ধাক্কা সামলে জয়ে ফেরার লক্ষ্যে তৃতীয় মিনিটে সুযোগ পায় বার্সেলোনা। বক্সের বাইরে থেকে গোলরক্ষক বরাবর বল মারেন মার্কাস র্যাশফোর্ড। পরের মিনিটে চোট কাটিয়ে ফেরা লামিনে ইয়ামালের প্রচেষ্টা লক্ষ্যে থাকেনি।
ত্রয়োদশ মিনিটে পেদ্রির চমৎকার গোলে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। ডান দিক থেকে ইয়ামালের পাস বক্সে পান তিনি। পাশে থাকা প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের বাধা এড়িয়ে জায়গা বানিয়ে কয়েকজনের মাঝ দিয়ে নিচু শটে ঠিকানা খুঁজে নেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। জায়গায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষকের। বার্সেলোনার সেই আনন্দ যদিও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ২০তম মিনিটে সমতায় ফেরে জিরোনা। কর্নার ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি বার্সেলোনার খেলোয়াড়রা। সতীর্থের হেড পাসে ওভারহেড কিকে গোলটি করেন বেলজিয়ান মিডফিল্ডার উইটসেল।
পরের চার মিনিটের মধ্যে আরও দুটি সুযোগ পায় জিরোনা। দারুণ দুটি সেভ করে দলকে রক্ষা করেন বার্সেলোনা গোলরক্ষক ভয়চেক স্ট্যান্সনি। ২৬তম মিনিটে সুযোগ আসে বার্সেলোনার সামনে। ফ্রেংকি ডি ইয়ংয়ের শট ঠেকান জিরোনা গোলরক্ষক। দুই মিনিট পর র্যাশফোর্ডের ফ্রি-কিক লাগে ক্রসবারে। বিরতির আগে এগিয়ে যাওয়ার দুটি পরিষ্কার সুযোগ পায় জিরোনা। কিন্তু দুবারই গোলরক্ষককে একা পেয়ে বাইরে শট করেন ব্রায়ান হিল ও উইটসেল।
দ্বিতীয়ার্ধে একের পর এক সুযোগ তৈরি করতে থাকে বার্সেলোনা। এই অর্ধের প্রথম ১০ মিনিটে ফের্মিন লোপেসের দুটি শট ঠেকান গোলরক্ষক, তার আরেকটি শট লাগে পোস্টে। ইয়ামালের একটি প্রচেষ্টাও ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক। ৬১তম মিনিটে জিরোনার জালে বল পাঠান পাউ কুবার্সি, কিন্তু বার্সেলোনার এরিক গার্সিয়া প্রতিপক্ষের একজনের পিঠের ওপর লাফিয়ে হেড করায় ফাউল ধরেন রেফারি। একটু পর র্যাশফোর্ডের দুটি শট ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক। ম্যাচ যখন ড্রয়ের পথে, শেষ বাঁশি বাজার এক মিনিট বাকি থাকতে সবকিছু পাল্টে দেন আরাউহো।
গোল করে জার্সি খুলে ফেলায় স্বাভাবিকভাবে হলুদ কার্ড দেখতে হয় তাকে। সেটা নিয়ে ভাবার আর সময় কই! বার্সেলোনা শিবিরে তখন শুধু উল্লাস। আনন্দের মাঝে একটি অস্বস্তির কাঁটাও অবশ্য আছে। আরাউহোর গোলের একটু আগে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন ফ্লিক। ক্লাসিকোয় রেয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ডাগআউটে থাকতে পারবেন না এই জার্মান কোচ।
এসএস/টিকে