বাংলাদেশে সবুজ জ্বালানি রূপান্তর ও টেকসই উন্নয়নে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি)-তে আয়োজিত তরুণী নারীদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা বিশাল সম্ভাবনা দেখি। এখানে প্রতিভাবান তরুণীরা যদি জ্বালানি খাতে নেতৃত্ব দেয়, তবে অর্থনীতি হবে আরো টেকসই, আরো শক্তিশালী।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এখন বৈশ্বিক বাস্তবতা।
তাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বাংলাদেশকেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে কার্বন নিঃসরণ থেকে আলাদা করতে হবে।’
‘এটাই আমাদের মূল রাজনৈতিক বার্তা—উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষা একসঙ্গে এগোতে হবে’, বলেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, ‘কোনো দেশই তার জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করে পূর্ণ উন্নয়ন অর্জন করতে পারে না। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।
নারীরা যদি শিক্ষায় ও কর্মক্ষেত্রে অংশ নিতে পারেন, তাহলে দেশ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।’
তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নও নারী শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ বাড়াতে নানা চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছে, তবে তাদের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য অনুপ্রেরণার হতে পারে। প্রথমত নারীদের সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতন করা, দ্বিতীয়ত তাদের আর্থিক ও শিক্ষাগতভাবে ক্ষমতায়ন করা—এই দুটি দিকেই মনোযোগ দিতে হবে বলেছেন রাষ্ট্রদূত।’
তিনি আরো যোগ করেন, ‘মেয়েদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত শিক্ষায় রাখার পাশাপাশি অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে।
রাষ্ট্রদূত ‘শক্তি কন্যা’ উদ্যোগটির প্রশংসা করে বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের তরুণীদের সবুজ জ্বালানি খাতে সম্পৃক্ত করার দারুণ উদাহরণ। আমরা চাই তরুণীরা নিজেদের উপস্থাপন করুক, প্রশিক্ষণ পাক এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে যুক্ত হোক। আজকের আয়োজনের মাধ্যমে আমরা প্রতিভাবান তরুণীদের সঙ্গে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করছি যারা নারী পেশাজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করতে প্রস্তুত।’
তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সরকারি পর্যায়ের সংলাপের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগও সক্রিয় করছে, যাতে বাংলাদেশ তার পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ভবিষ্যতের পথে আরো দ্রুত অগ্রসর হতে পারে।
বাংলাদেশ ও ইউ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন,
‘বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক এখন একটি কৌশলগত অংশীদারত্বে রূপ নিচ্ছে যার কেন্দ্রে রয়েছে অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি, মৌলিক অধিকার এবং লিঙ্গসমতা।
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, আর ইউরোপ দ্রুত উষ্ণ হয়ে ওঠা মহাদেশগুলোর একটি। আমরা সবাই একই চ্যালেঞ্জের মুখে। একসঙ্গে কাজ করলেই সমাধান সম্ভব।’
ইইউ রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন নির্ভরযোগ্য অংশীদার। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই, যেন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন ও পরিবেশ সুরক্ষা একই সঙ্গে এগিয়ে যায়।’
রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, ‘আপনারা আমাদের ওপর নির্ভর করতে পারেন। বাংলাদেশের পাশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সবসময় থাকবে।’
আরপি/টিকে