ড. ইউনূসকে ৬ মানবাধিকার সংস্থার চিঠি: আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা রোধে একগুচ্ছ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লিখেছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। চিঠিতে গুম-খুনের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।

ওই ছয় মানবাধিকার সংস্থা হলো—সিভিকাস, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে), ফর্টিফাই রাইটস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট।

রোববার (২০ অক্টোবর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে লেখা খোলা চিঠিটি এইচআরডব্লিউ’র ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

চিঠিতে জুলাই বিপ্লব ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মৌলিক স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আইন সংস্কার শুরু করা এবং গুম ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তদন্তের মতো উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়েছে। চিঠিতে মানবাধিকার বিষয়ে ১২টি সুপারিশ স্থান পেয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানকালে ও বিগত ১৫ বছরে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতনসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলাসহ যেকোনো মামলার ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে ওই ছয় মানবাধিকার সংস্থা।

একই সঙ্গে র্যাব বিলুপ্ত করাসহ নিরাপত্তা খাত সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থা ছয়টি। এ ছাড়া গুমকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। চিঠিতে প্যারিস প্রিন্সিপালের আওতায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে স্বাধীন ও কার্যকর করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আইনি সংস্কার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের সাইবার সিকিউরিটি অধ্যাদেশ, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও মানহানির ধারা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সংশোধন করতে হবে।

খসড়া ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা অধ্যাদেশ এবং খসড়া জাতীয় তথ্য ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে চিঠিতে।

ছয় মানবাধিকার সংস্থা আরও বলেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করুন এবং সাংবাদিকদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং আটক থেকে রক্ষা করুন। ২০২৪ সালের আগে ও পরে দায়ের করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা বাতিল, নির্বিচারে গ্রেপ্তার বন্ধ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিতে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্ত করে জাতিসংঘ। ছয়টি মানবাধিকার সংস্থার চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ প্রকাশিত প্রতিবেদনে শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য উঠে এসেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণ প্রসঙ্গে সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, রাজনৈতিক দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ থেকে বিরত থাকা। এটি (রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা) প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনকে ক্ষতিগ্রস্ত এবং কার্যকরভাবে বাংলাদেশি ভোটারদের একটি বৃহৎ অংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করবে। ’

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি করাসহ কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি ছিল জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে অংশ নেওয়া বিভিন্ন মহলের। পরে গত ১০ মে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। ১২ মে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

ছয় মানবাধিকার সংস্থার চিঠিতে বাংলাদেশে এনজিওবিষয়ক ব্যুরো সংস্কার ও বিদেশি তহবিলে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা, রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন বন্ধ, চলাচল, জীবিকা ও শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া রোহিঙ্গা নিপীড়ন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (আইসিসি) চলমান মামলায় আইসিসিকে পূর্ণ সহযোগিতা এবং আইসিসির চাহিদা অনুযায়ী ব্যক্তিদের হস্তান্তর করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
২০৩১ বিশ্বকাপ যৌথভাবে আয়োজন করতে চায় ৪ দেশ Oct 21, 2025
img
জোবায়েদ হত্যা : নেপথ্যে পুরোনো প্রেম! Oct 21, 2025
img
বিএনপি কার্যালয়ে সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় রুমিন ফারহানার দুঃখ প্রকাশ Oct 21, 2025
img
বিএনপি নেতার বাড়িতে মিলল অস্ত্র Oct 21, 2025
img
জামায়াত ক্ষমতায় এলে ফেরার আশঙ্কা আওয়ামী লীগের : সামান্তা শারমিন Oct 21, 2025
img
দুই ট্রাকের সংঘর্ষে প্রাণ গেল চালক-হেলপারের Oct 21, 2025
img

বেবিচক চেয়ারম্যান

ইমপোর্ট কুরিয়ার সেকশন থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে মনে হচ্ছে Oct 21, 2025
img
দল নিষিদ্ধ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না : মাসুদ কামাল Oct 21, 2025
img
এস আলম গ্রুপের ৮০০ কোটি টাকার শেয়ার জব্দের নির্দেশ! Oct 21, 2025
img
জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হলেন সানায়ে তাকাইচি Oct 21, 2025
img
দীপাবলির প্রদীপ প্রজ্বলন করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প Oct 21, 2025
img
একাধিক সন্তানের জন্ম দিতে চাই : পরিণীতি চোপড়া Oct 21, 2025
img
ভাঙা হচ্ছে হোয়াইট হাউসের একাংশ Oct 21, 2025
img
সিরিজ নিশ্চিত করতে ৪ স্পিনার নিয়ে মাঠে নামছে বাংলাদেশ Oct 21, 2025
img
এআইয়ের অপব্যবহার রোধে শুধু নীতিমালা নয়, প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পরামর্শ : সিইসি Oct 21, 2025
img
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন জিততে পারবে বলে মনে হয় না : ট্রাম্প Oct 21, 2025
img
আপিলে বিভাগে নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের মামলার শুনানি পেছাল Oct 21, 2025
img
রাজশাহীতে ৫৫ লাখ টাকার সোনার বারসহ যুবক আটক Oct 21, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরাতে শুরু আপিল শুনানি Oct 21, 2025
img
২৪ ঘণ্টার মধ্যে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের সম্ভাবনা Oct 21, 2025