জামায়াত ক্ষমতায় এলে ফেরার আশঙ্কা আওয়ামী লীগের : সামান্তা শারমিন

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, ‘জামায়াত আর আওয়ামী লীগ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এ দুই দলের গঠনপ্রক্রিয়া, ইন্টারনাল মেকানিজম এবং রাষ্ট্রকল্প একই ধরনের। দুটি দলই একে অন্যকে ব্যবহার করে রাজনীতি করে। জামায়াত ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার আশঙ্কা আছে। আওয়ামী লীগ তখন দেশের এবং দেশের বাইরের অনেক শক্তিকে এটা দেখানোর চেষ্টা করবে যে বাংলাদেশ ইসলামি চরমপন্থিদের হাতে চলে যাচ্ছে। এভাবে আওয়ামী লীগ তার প্রাসঙ্গিকতা তৈরি করবে।’ গণমাধ্যকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

সামান্তা শারমিন বলেন, ‘রাজনীতিতে জামায়াত অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে আওয়ামী লীগের কারণে। আওয়ামী লীগ তাদের কোণঠাসা করেছে এতে জামায়াতের ইন্টারনাল সক্ষমতা বেড়েছে। এটা আওয়ামী লীগেরই একটা প্ল্যান যে জামায়াত যত শক্তিশালী থাকবে আওয়ামী লীগ তত শক্তিশালী থাকবে। এটা তাদের একটা পারস্পরিক বোঝাপড়ার অংশ।’

তিনি বলেন, ‘জামায়াত এখন আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে। সিভিল সোসাইটিতে আওয়ামী লীগের পক্ষের অনেকে সোচ্চার। আওয়ামী লীগের পক্ষের ভোটটা কোথায় যাবে এটা নিয়ে তারা প্রশ্ন করছে। জামায়াত চেষ্টা করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের ভোটটা যেন তাদের থাকে।’

এনসিপি নেত্রী আরও বলেন, ‘জামায়াত এখানে পুরোপুরি আওয়ামী লীগকে আবার পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছে। জামায়াত নেতারা আওয়ামী লীগের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের বলে আসছেন যে জামায়াত আপনাদের ক্ষতি করবে না। আমরা ক্ষমতায় এলে আপনাদের দেখব। সাভার অঞ্চলে যত আওয়ামী লীগের নেতা, যারা জেলে আছেন তাদের পক্ষে লড়ছেন জামায়াতের একজন সেলিব্রেটি আইনজীবী।

তিনি এর আগেও, কিছু বিতর্কিতের পক্ষে লড়ছিলেন। এটা টাকার জন্য নাকি রাজনীতি? এ নিয়ে সমালোচনা হলে নানান রকমের ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপারটা আসলে হত্যাকারীর পক্ষে দাঁড়ানো। এটা তিনি সামলে ফেলতে পারবেন বলে সাহসও দেখাচ্ছেন!’

তিনি বলেন, ‘মানুষ দেখে আসছে যে আওয়ামী লীগ আর জামায়াত হচ্ছে অ্যান্টি। জামায়াত একসময় বিএনপির কাঁধে সওয়ার হয়ে চারদলীয় জোটে গিয়ে সরকারের অংশ হয়েছিল। বিএনপি তখন এটা সামাল দিতে পারে নাই। বিএনপি আর জামায়াতের পক্ষে আসলে বাংলাদেশপন্থি রাজনীতি করা খুব কঠিন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত তিন দলের পক্ষেই বাংলাদেশপন্থি এবং বাংলাদেশের নাগরিক মর্যাদাপন্থি রাজনীতি করা খুবই কঠিন। কারণ এ দলগুলো কখন কীভাবে কার বিরুদ্ধে বা পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে পড়ে তা দলীয় দিক থেকে তাদের খেয়াল থাকে না।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠিত এ রাজনৈতিক দলগুলোর কোনোটির সঙ্গেই এনসিপির যে রাষ্ট্রকল্প, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তার মিল নাই। এ কারণে এনসিপি এ পুরোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে কোনোভাবেই পাশাপাশি চলতে বাধ্য নয়। আমরা নিজেদের জোট গঠনের চেষ্টা করব অথবা আমরা নিজেদের সক্ষমতা এককভাবে এ নির্বাচনেই পরখ করে দেখতে চাই।’

সামান্তা বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসের স্টার্টিং পয়েন্ট ১৯৭১। যেটা গণমানুষের কাছ থেকে আওয়ামী লীগ ছিনিয়ে নিয়েছিল। আওয়ামী লীগের হাত থেকে মুক্তিযুদ্ধকে মুক্ত করতে ২০২৪ পর্যন্ত আসতে হয়েছে। এখন আবার জামায়াত ’২৪কে ’৭১-এর মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাইছে। জামায়াত চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগের হয়ে ’৭১কে আবার আমাদের হাত থেকে নিয়ে যাওয়ার। মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাইয়ের প্রেক্ষাপটটা আসলে একই। জনগণের চাওয়াটাও একই। পার্থক্য শুধু এটুকুই যে আমরা বর্তমান নতুন প্রজন্ম ’৭১কে পাই নাই।’

আসন্ন জাতীয় সংসদকেন্দ্রিক নির্বাচনি প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির এই নেত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতির আগে দেখতে হবে রাষ্ট্রের প্রস্তুতি কেমন? বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ। নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম, কথাবার্তা এবং যে পলিসি পুরোটাই অসংস্কারকৃত। এ অবৈধ, অসংস্কারকৃত নির্বাচন কমিশন ফ্যাসিজমকে পুনরুজ্জীবিত করবে। এ নির্বাচন কমিশন কোনোভাবেই একটা ফেয়ার ইলেকশন দিতে পারবে না। এটার কোনো নিদর্শন এ কমিশনের নাই। শুধু শাপলা প্রতীক দিয়েই এর উদাহরণ দেওয়া যায়।’

তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর নির্বাচন কমিশনের কয়জন আমলাকে পরিবর্তন করা হয়েছে? কে কে নিয়োগ পেয়েছেন? তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী? তারা কার দ্বারা সুপারিশপ্রাপ্ত এবং এখন যারা কাজ করছেন তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম কী? এসব প্রশ্নের সুষ্ঠু উত্তর খুঁজতে হবে। আমরা দেখেছি এখন পর্যন্ত ভোটার তালিকা থেকে মৃত ভোটারের নাম মুছে ফেলা হয় নাই। এটা নিয়ে তাদের কোনো উদ্যোগও নাই। একটা অপর্যাপ্ত এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভলি দুর্বল প্রশাসন দিয়ে এ ইসি চালানো হচ্ছে। দলীয়ভাবে আমার নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আগে আমাকে জানতে হবে, রাষ্ট্রের প্রস্তুতি কী? তিনটি অবৈধ ইলেকশনের পরে একটি ইলেকশন হতে যাচ্ছে সেটা নিয়ে রাষ্ট্রের প্রস্তুতি কী? আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী পরে দেব।’

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অবশেষে সরব রিপন মিয়া সুইমিংপুলে Oct 21, 2025
img
অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকায় যেতে হবে : মির্জা ফখরুল Oct 21, 2025
২০ বছর পুরনো প্লেন কিনলো ইউএস বাংলা Oct 21, 2025
img
জনগণ নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে: প্রিন্স Oct 21, 2025
img
রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপ: রুশ গোয়েন্দা প্রধান Oct 21, 2025
img
রাজশাহীতে ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত Oct 21, 2025
img
একশ্রেণির লোকের মাথা খারাপ হয়ে গেছে: রেজাউল করীম Oct 21, 2025
img
জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করলে বিনা নোটিশে বন্ধ হবে গণমাধ্যমের পোর্টাল : ফয়েজ আহমদ Oct 21, 2025
img
শ্যামাসঙ্গীতে ‘জিন্স’ বিতর্কে মুখ খুললেন ইমন চক্রবর্তী Oct 21, 2025
img
ইউএস-বাংলার যুক্ত হলো এয়ারবাসের আরেক উড়োজাহাজ Oct 21, 2025
img
মেহেদি উৎসবের মাধ্যমে প্রকাশ্যে এলো ইবি ছাত্রীসংস্থা Oct 21, 2025
img
এ কে আজাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান নায়াব ইউসুফের Oct 21, 2025
img
নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ Oct 21, 2025
img
সাবেক চীফ হুইপ ফিরোজসহ স্ত্রী-ছেলের বিরুদ্ধে দুদকের ৩ মামলা Oct 21, 2025
img
কাশফুলের স্নিগ্ধ সৌন্দর্যে মুগ্ধ বুবলী Oct 21, 2025
img
শ্রদ্ধা কাপুর ফিরছেন বড়পর্দায়, ২০২৬-২০২৭ সালের চলচ্চিত্রে দাপট Oct 21, 2025
img
পদোন্নতি পেলেন পুলিশের ৮০ কর্মকর্তা Oct 21, 2025
img
এবার চার দিন আগেই নিজের জন্মদিন উদযাপন করলেন পরীমনি Oct 21, 2025
img
নিজের ভাই আরবাজকে পছন্দ করেন না সালমান! Oct 21, 2025
img
এশিয়া কাপের ট্রফি চেয়ে নাকভিকে ভারতের চিঠি Oct 21, 2025