‘স্বপ্নের পুরুষ’ ড. ইউনূসের লোভ-লালসা আছে, রাগ-ক্রোধও আছে : রনি

অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য ও কলামিস্ট গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, ২০২৫ সাল থেকে আমাদের আস্তে আস্তে আস্তে আস্তে স্বপ্নভঙ্গ হতে থাকল। আমরা দেখলাম যে আমাদের স্বপ্নের পুরুষ আসলে সাধারণ মানুষ। তার লোভ আছে, লালসা আছে, কামনা আছে, বাসনা আছে, দুর্বলতা আছে। তার রাগ আছে, ক্রোধ আছে, কৌশল আছে, বুদ্ধি আছে, প্রজ্ঞা আছে।

সবকিছু আমাদেরই মতো। আমাদের মতো ডাল-ভাতের মানুষ। বিএনপির মধ্যে এরকম মানুষ আছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে এরকম মানুষ আছে, জামাতের মধ্যে এরকম মানুষ আছে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ‘তিনতন্ত্র’ নামের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি।

গোলাম মাওলা রনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই ১৪ মাস আগে আমাদের দেশে ছিলেন একেবারে কিংবদন্তি মহাপুরুষ। আমরা মনে করতাম যে এরকম বাঙালি, যিনি আমাদের বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছে, এ কেবল বাংলার গর্ব নয়, পৃথিবীর গর্ব। পৃথিবীতে এরকম মহা মানুষ জন্ম নেয় না।

কাজেই মানুষই আমাদের শাসন ক্ষমতায় এসেছে। আমরা কৃতজ্ঞ। অর্থাৎ ২০১৪ সালের ৮ তারিখে আমাদের এরকম ছিল অনুভূতি। আর শেখ হাসিনার জামানাতে আমাদের একটা আফসোস ছিল যে যদি এই ড. ইউনূসের মতো একজন বিশ্বমানব আমাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতেন, তাহলে আমাদের যে অবহেলিত দেশ, যে পাসপোর্ট নিয়ে আমরা ভোগান্তিতে পড়ি, যে দেশের মান-মর্যাদা নিয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গাতে অপদস্থের শিকার হই। ঠিক এরকম একজনের মানুষ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানুষ যদি রাষ্ট্রে ক্ষমতায় বসেন, আমরা রাতারাতি সেই পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত একটি জাতিতে পরিণত হয়ে যাব।

তিনি বলেন, ড. ইউনূসও যখন ক্ষমতায় এলেন এবং তিনি যখন তার উপদেষ্টামণ্ডলী গঠন করলেন, আমরা তাকে অবারিত স্বাধীনতা দিয়ে দিলাম। কে তার বান্ধবী, কে তার সহকর্মী? কে তার সন্তান, কে তার ভাতিজা, কে তার বন্ধু? কে তার শুভানুধ্যায়ী, কে ডিপ স্টেট, কে জামায়াত, কে বিএনপি- কোনোকিছুই আমরা প্রশ্ন করলাম না। ড. মুহাম্মদ ইউনূস জিন্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ। এভাবে আমাদের সময় চলতে থাকল ২০২৪ সালের পুরোটি সময় অর্থাৎ আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর, এরপর ২০২৫ সাল থেকে আমাদের আস্তে আস্তে আস্তে আস্তে স্বপ্নভঙ্গ হতে থাকল। আমরা দেখলাম যে আমাদের স্বপ্নের পুরুষ আসলে সাধারণ মানুষ। তার লোভ আছে, লালসা আছে, কামনা আছে, বাসনা আছে, দুর্বলতা আছে। তার রাগ আছে, ক্রোধ আছে, কৌশল আছে, বুদ্ধি আছে, প্রজ্ঞা আছে। সবকিছু আমাদেরই মতো। আমাদের মতো ডাল ভাতের মানুষ। বিএনপির মধ্যে এরকম মানুষ আছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে এরকম মানুষ আছে, জামাতের মধ্যে এরকম মানুষ আছে।

তিনি আরো বলেন, দ্বিতীয়ত, তিনি যাদেরকে নিয়োগ দান করেছেন এবং তার কল্যাণে যারা নিয়োগ লাভ করেছেন, সে সকল উপদেষ্টাদের নিয়েও আমাদের বাড়াবাড়ি রকম যাকে বলা হয় আতিরসাধ্যের আধিক্য ছিল, প্রেমময়তা দিয়ে এরা আমাদেরকে বট গাছের মাথায় বসিয়ে রাখবে, পরিস্থান থেকে পোলাও-কোরমা এনে দেবে, আমাদের সমস্ত রাস্তাঘাটগুলো ফুঁ দিয়ে তারা পরিষ্কার করে ফেলবে এবং আমাদের ব্যাংকগুলোকে সারা দুনিয়ার যত টাকা আছে, ডলার, পাউন্ড, স্টারলিংক, সৌদি রিয়াল থেকে শুরু করে কাতারি রিয়াল, তারপরে আরো যত মুদ্রা আছে সেগুলো দিয়ে আমাদের এই ব্যাংক-বিমা ভরিয়ে ফেলবে। শেখ হাসিনা ১৫ বছর ধরে যা সর্বনাশ করেছে, তারা ১৫ মাসের মধ্যে সেটা রিবিল করবে। কিন্তু বললাম যে ৫ মাসে আমাদের মহু ভঙ্গ হলো রিভিল তো দূরের কথা। শেখ হাসিনা যেভাবে রেখে গিয়েছেন, ওটা অব্যাহত রাখা সম্ভব হলো না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল। কিন্তু বৈদেশিক ঋণ বেড়ে গেল। অর্থাৎ আনুমানিক ১০ বিলিয়ন ডলার আমাদের বৈদেশিক ঋণ বা আরো বেশি ১৫ বিলিয়ন ডলার গত ১২ মাসে বেড়ে গেল।

এ কলামিস্ট বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস শেখ হাসিনার মতো করেই পাল্লা দিয়ে দেশের বাইরে যাওয়া শুরু করলেন। লটবহর নিয়ে আমরা প্রথমে কিছু বললাম না, কিন্তু আস্তে আস্তে আস্তে আস্তে আমরা মুখ খুলতে শুরু করলাম। এর কারণ হলো শেখ হাসিনা যেখানে যেতেন, তিনি বিবিসির সঙ্গে, সিএনএন-এর সঙ্গে, তারপর বিদেশি পত্রপত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশেও সাক্ষাৎকার দিতেন। উনিও ঠিক একই কাজকর্ম করা শুরু করলেন। কিন্তু উনি যে কাজটি করলেন না, সেটা হলো বাংলাদেশে কোনো সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে তিনি সম্পর্ক স্থাপন করতেই চাইলেন না। বাংলা ভাষায় যারা কথা বলে, বাংলাতে যারা লিখে, এমনকি বাংলাদেশে বসে যারা ইংরেজিতে লিখে, ইংরেজি পত্রিকাগুলোতে তার আচার-আচরণে মনে হলো যে এরা ভালো ইংরেজি জানেও না, বলেও না, আর বোঝেও না। কাজেই এদের সঙ্গে কথা বলা নিরর্থক। তিনি তার আর্ট-অ্যাটিটিউড, বডি ল্যাংগুয়েজ দ্বারা যে জিনিসটা বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে আমার ট্যালেন্ট, আমার মেধা, আমার যোগ্যতা- এটা তোমরা মূল্যায়ন করতে পারবে না। কাজেই যারা আমাকে মূল্যায়ন করতে পারে, আমি সেখানে যাব, সেখানে গিয়ে আমি ফুয়েল নিয়ে আসব। তোমাদেরকে শাসন করার, তোমাদেরকে পরিচালনা করার আর আমার যত কথা ওখানে গিয়ে বলব।

এমকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কারও উসকানিতে পা না দিতে আহ্বান সংস্কৃতি উপদেষ্টার Dec 19, 2025
img
হাদির মৃত্যুর খবরে উত্তাল চট্টগ্রাম Dec 19, 2025
img
হাদির মৃত্যুর সংবাদ প্রধান উপদেষ্টাকে জানান সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী Dec 19, 2025
img
হাদির খুনিদের হস্তান্তর না করলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে: আসিফ Dec 19, 2025
img
চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনে হামলার চেষ্টা, গ্রেপ্তার ১২ Dec 19, 2025
img
ওসমান হাদির মৃত্যুতে চরমোনাই পিরের শোক Dec 19, 2025
img
দেশপ্রেমের প্রশ্নে অটল হাদি এক অবিচল সাহসের নাম : নাসির উদ্দিন নাসির Dec 19, 2025
img
ডেইলি স্টারের সামনে সাংবাদিক নূরুল কবীর নাজেহাল Dec 19, 2025
img

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধে তীব্র যানজট

চালক-যাত্রীদের অনুরোধেও সড়ক ছাড়েননি ছাত্র-জনতা Dec 19, 2025
img
ওসমান হাদির মৃত্যুতে মির্জা ফখরুলের শোক Dec 19, 2025
img
ঢাবির মুজিব হলের নাম বদলে শহীদ ওসমান হাদী দিলেন শিক্ষার্থীরা Dec 19, 2025
img
ওসমান হাদির মৃত্যুতে ছাত্রদলের শোক Dec 19, 2025
img
আধিপত্যবাদের দোসররা শান্তিপূর্ণ ক্ষোভকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে: ডাকসু ভিপি Dec 19, 2025
img
সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান পিনাকীর Dec 19, 2025
img
উত্তাল শাহবাগ, আন্দোলনে যোগ দিলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা Dec 19, 2025
img
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ Dec 19, 2025
img
ওসমান হাদির মৃত্যুতে নুরুল হক নুরের শোক Dec 19, 2025
img
‘ছাদে আটকা পড়ছি, মাফ কইরা দিয়েন, ভবনে আগুন দিছে, দেখা নাও হতে পারে’ Dec 19, 2025
img
শনিবার দুপুরে মানিকমিয়া অ্যাভিনিউতে হাদির দ্বিতীয় জানাজা Dec 19, 2025
img
সংবাদ প্রতিষ্ঠানে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে: মাহফুজ আলম Dec 19, 2025