সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সংঘাতের সময় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতা করেছে দাবি করেছে কাবুলে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার। আফগানিস্তানের সরকারি মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ গতকাল বুধবার দেশটির সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ দাবি করেছেন।
মুজাহিদ বলেন, “আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘাতের সময় বিভিন্ন দেশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান এবং পাকিস্তানের সঙ্গে মধ্যস্থতার আগ্রহ জানিয়েছে। এসব দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। আমরা এই ব্যাপারটিকে স্বাগত জানাই এবং আমরা চাই অন্যান্য দেশ যাতে আফগানদের পাশে দাঁড়ায়, সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র তার প্রভাব ব্যবহার করুক।”
পাকিস্তানের নিষিদ্ধ সশস্ত্র তালেবানপন্থি রাজনৈতিক গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান(টিটিপি)-কে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার মদত ও সহায়তা দিচ্ছে— গত কয়েক বছর ধরে কাবুলের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ জানিয়ে আসছে ইসলামাবাদ। তবে কাবুল বরাবরই এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
গত ৯ অক্টোবর রাতে কাবুলে বিমান অভিযান চালায় পাকিস্তানের বিমান বাহিনী। সেই অভিযানে নিহত হন টিটিপির শীর্ষ নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদ, দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ক্বারি সাইফুল্লাহ মেহসুদসহ কয়েক জন জ্যেষ্ঠ নেতা।
‘পাকিস্তানি বিমান বাহিনী আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হেনেছে’— অভিযোগ তুলে ১১ অক্টোবর আফগান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সেনাচৌকিগুলোতে হামলা চালায় আফগান সেনাবাহিনী। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও অবশ্য প্রস্তুত হয়েই ছিল। তারাও পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করে।
১৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলে এই সংঘাত। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তর আইএসপিআরের তথ্য অনুসারে— সংঘাতে নিহত হয়েছেন ২ শতাধিক আফগান সেনা এবং ২৩ জন পাকিস্তানি সেনা। তারপর ১৫ অক্টোবর প্রথমে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে পাকিস্তান-আফগানিস্তান। সেটি শেষ হওয়ার পর দুই দেশের সরকারের সম্মতির ভিত্তিতে বিরতির মেয়াদ আরও বাড়ানো হয়। এখনও যুদ্ধবিরতিতে আছে দুই প্রতিবেশী দেশ।
প্রসঙ্গত, দুই দেশের মধ্যে যখন সংঘাত চলছিল, সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা হ্রাস করা তার জন্য ‘খুবই সহজ’ একটি কাজ। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও আফগানিস্তানের সঙ্গে মধ্যস্থতার আগ্রহ জানিয়েছিলেন।
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুলওয়াহিদ হাকিমি তোলো নিউজকে বলেছেন, “পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রভাব রয়েছে, তার যথাযথ ব্যবহার যদি ওয়াশিংটন করে— তাহলে তা এ অঞ্চলের জন্য খুবই ভালো একটি ব্যাপার হবে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতিতেও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।”
সূত্র : তোলো নিউজ