ক্যারিবীয় সাগরে আরও এক নৌকায় হামলা চালিয়েছে মার্কিন সেনারা। হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা পিট হেগসেথ। নিহতরা অপরাধ চক্র ট্রেন ডি আরাগুয়ার সদস্য ছিল বলে দাবি করেছেন তিনি।
ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযান নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে হেগসেথ জানান, হামলাটি চালানো হয় গত রাতে। এ নিয়ে ক্যারিবীয় সাগরে ১০টি হামলা চালালো মার্কিন বাহিনী। এর ফলে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৩ জন।
গত সেপ্টেম্বর থেকে ক্যারিবীয় সাগরে নৌযান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছে মার্কিন বাহিনী। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এসব নৌযান ভেনেজুয়েলা থেকে এসেছে এবং দেশচির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি ‘মাদক-সন্ত্রাসী হুমকি’র অংশ।
ক্যারিবীয় সাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেনেজুয়েলার নৌযানগুলোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে ‘বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের’ শামিল বলে অভিহিত করে এই হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের একটি দল। কিন্তু কোনো নিন্দা ও সমালোচনাই পাত্তা দিচ্ছে না ট্রাম্প প্রশাসন।
গত বৃহস্পতিবারই (২৩ অক্টোবর) মাদক চোরাচালানকারীদের হত্যার অজুহাতে ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযান চালানোর ইঙ্গিত দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ভেনেজুয়েলার মাদক চোরাচালানকারীদের ওপর তার প্রশাসন যে হামলা চালাচ্ছে শিগগির তা আরও বিস্তৃত হতে পারে। এমনকি ভেনেজুয়েলার ভূখণ্ডেও হামলা শুরু হতে পারে।
ভেনেজুয়েলার চারপাশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। সেই সঙ্গে মাদক চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ভেনেজুয়েলা ঘিরে সামরিক উপস্থিতি জোরদার ও নৌযানে ধারাবাহিক হামলার ঘটনাগুলো থেকে অনেকেই মনে করছেন, খুব শিগগিরই ল্যাটিন আমেরিকার দেশটিকে সামরিক আগ্রাসন চালাতে পারে মার্কিন বাহিনী।
এদিকে এ ঘটনায় ল্যাটিন আমেরিকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ভেনেজুয়েলায় যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করেছেন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। এমন উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার ভেনেজুয়েলায় স্থলভাগে হামলার ইঙ্গিত দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউস সভাসদদের নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এবার পরবর্তী লক্ষ্য হবে (ভেনেজুয়েলার) ভূখণ্ড। তিনি আরও বলেন, ‘মাদক চোরাচালানকারীদের ওপর হামলার জন্য যুদ্ধ ঘোষণার দরকার নেই। তবে অভিযানের ব্যাপারে কংগ্রেসকে জানানো হবে।
‘আমি মনে করি আমরা কেবল সেইসব লোকদের হত্যা করব যারা আমাদের দেশে মাদক আনছে। ঠিক আছে? আমরা তাদের হত্যা করব,’ ট্রাম্প বলেন। ‘এখন এগুলো [মাদক] স্থলপথে আসছে... আপনি জানেন, পরবর্তী লক্ষ্য হবে (ভেনেজুয়েলার) স্থল।’
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি প্রতিবেদন নাকচ করে দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে ভেনেজুয়েলার কাছে মার্কিন বিমান বাহিনী বি-১ বোমারু বিমান উড়িছিল। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এখনও কোনো বোমারু বিমান মোতায়েন করিনি, তবে খুব শিগগির ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযান হতে পারে।’
বিশ্লেষকরা অনুমান করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের মাদকবিরোধী প্রচেষ্টা আসলে ভেনেজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টার একটি অজুহাত, যাকে ট্রাম্প ‘মাদক-সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করেছেন। বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা এমনকি ট্রাম্পের কিছু প্রভাবশালী সমর্থকও ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে প্রশাসনের সামরিক হামলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
যেমন অ্যারিজোনার ডেমোক্র্যাট সিনেটর মার্ক কেলি বৃহস্পতিবার এমএসএনবিসি-তে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এখন আমরা ভেনেজুয়েলার উপকূলে বি-৫২ উড়াচ্ছি। সেখানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের কথা বলছি?’
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘এতবার ঘনঘন শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কি লাভ বয়ে এনেছে, তা সে ভিয়েতনাম, কিউবা, ইরাক বা আফগানিস্তানেই যেখানেই হোক না কেন? এটা আমেরিকানদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। এটা আমাদের নিরাপদ করছে না। বরং বিপরীত প্রভাব পড়ছে।’
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান ও এপি
ইএ/টিকে