এই মুহূর্তে দেশে অধ্যাপক গোলাম আজমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি বলে মনে করেন সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি। তিনি বলেন, ‘আপনাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি কে? আপনারা কেউ কেউ বলবেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, কেউ বলবেন ড. ইউনূস, কেউ হয়তো জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, কেউ হয়তো তারেক রহমানের নাম বলবেন।’
‘কিন্তু আপনি যদি ঘটনা পরম্পরায় কতগুলো বিষয় আপনি লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন এই মুহূর্তে সরকারের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী যে গ্রুপ, সেটি হলো জামায়াতে ইসলামী। এবং জামায়াতের সবকিছু যে আমির চালাচ্ছেন তা নয়।
দৃশ্যপটে এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক গোলাম আজমের সুযোগ্য পুত্র আমান আযমীর ইশারায় সব হচ্ছে। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া ভিডিও বার্তায় রনি বলেন, ‘আমাদের দেশের দুজন লোককে জামায়াতের লোকজন বা ইসলামপন্থীরা মজলুম হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
তার মধ্যে এক নম্বরে হলেন মজলুম সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান, যিনি আমার দেশের সম্পাদক। আর অধ্যাপক গোলাম আজমের পুত্র আমান আজমী; তাকে মজলুম হিসেবেই মানুষজন স্বীকৃতি দেয়।
রনি বলেন, ‘দেশের অনেক মানুষ বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন। কিন্তু ইসলামপন্থীদের কাছে এই দুজন মানুষ রীতিমতো একটা সেলিব্রেটির পর্যায়ে চলে গেছেন। তারা যদি হাসেন, বাংলাদেশের ইসলামপন্থীরা সবাই হাসেন, তারা এখন কাঁদেন না। কিন্তু যদি কোনো কারণে তারা কাঁদেন, তাহলে কেয়ামত হয়ে যাবে।
যদি কোনো অবস্থায় তারা রাগ হয়ে যান, হুকুম দেন, সঙ্গে সঙ্গে তাদের লক্ষ লক্ষ ভক্ত, অনুসারী দলমত নির্বিশেষে রাস্তায় নেমে জিয়াফত করে ফেলবে। সেই দিক থেকে আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে আমান আযমীকে সবচেয়ে ক্ষমতাধর লোক মনে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমান আযমী গোলাম আজমের মতো নন। তিনি সম্পূর্ণ নতুন একটা জিনিস বা কিছু একটা করতে চাচ্ছেন। এখন সেটা ইসলামী রেভল্যুশন হতে পারে, সেটা জামায়াতে ইসলামীকে ক্ষমতায় আনার জন্য অথবা আরো অনেক কিছু।
তিনি বড় কিছু করার চেষ্টা করছেন। এজন্য তার যে পোশাক, কথাবার্তা, সাক্ষাৎকার, মিডিয়ার মধ্যে আসা, চলাফেরা সবকিছুর মধ্যেই একটা ভাব চলে এসেছে।’ রনি বলেন, ‘আমি যে তাকে সবচেয়ে ক্ষমতাধর লোক বললাম; এর কারণ হচ্ছে অতি সম্প্রতি একটা ইউটিউব চ্যানেলে তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি যেটি স্পষ্ট তার নিজের মুখে বলেছেন যে তার সঙ্গে সেনাপ্রধানের কথা হয়েছে এবং জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান করজোড়ে তাকে মিনতি করে প্রস্তাবনা দিয়েছেন। বলেছেন আপনি দয়া করে এই আর্মি অফিসারদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন না বা তাদেরকে আপনি কোর্টে নেবেন না। তো এই যে তার যে এই বক্তব্য সেই বক্তব্যের মধ্যে যথেষ্ট দৃঢ়তা ছিল।’
‘আমান আযমী একেবারে খালিদ বিন ওয়ালিদের মতো অকপটে এই কথা বলে দিলেন মিডিয়ার সামনে। এবং পরবর্তী সময় যখন তিনি মামলা করলেন এবং সেই ট্রাইব্যুনালে যখন সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হলো; তারপর তাদের সেই কোর্টে হাজির করা, বিচার করা, জেলখানায় আনা-নেওয়া সব ব্যাপারে আমরা নানা রকম আশঙ্কার কথা শুনেছিলাম। কিন্তু আমান আযমী যেভাবে চেয়েছেন ঠিক সেইভাবেই সবকিছু হয়েছে।’
রনি বলেন, ‘যেটা এই স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমান পারেননি, জিয়াউর রহমান, এরশাদও পারেননি। এই যে সার্ভিং যেসব সেনা কর্মকর্তা তাদের মার্শাল ল কোর্টের বাইরে এনে সিভিল কোর্টে বিচারের যে ব্যবস্থা; এই ব্যবস্থা করানোর ক্ষেত্রে অতীতের কোনো রাষ্ট্রনায়ক সাহস পাননি। কিন্তু আমান আযমীর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান যে অসীম সাহসিকতা দেখিয়েছেন, এটা কেবল সাহসের মধ্যে আবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে প্রশাসনিক ক্ষমতা এবং সরকারের ওপর তাদের যে কর্তৃত্ব এবং প্রভুত্ব এটি প্রমাণিত এবং আগামী দিনে তারা যে রাষ্ট্র ক্ষমতার মূল চাবিকাঠি এবং রাষ্ট্র ক্ষমতার অন্যতম নিয়ামক এবং নিয়ন্ত্রক; এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
এসএস/টিকে