নারী-পুরুষ উভয় ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে তিনশ’র বেশি রান তাড়ায় সফল হয়েছে ভারত। নারী বিশ্বকাপে তৃতীয়বার ফাইনালে ওঠার পথে তারা অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩৩৯ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছে। মেয়েদের বিশ্বকাপে সবমিলিয়ে এটি সর্বোচ্চ লক্ষ্য তাড়ায় জয়ের রেকর্ড। এমন ইতিহাসগড়া জয় সম্ভব হয়েছে রেকর্ড সেঞ্চুরিয়ান জেমিমাহ রদ্রিগেজের কল্যাণে। অথচ ক্রিজে নামার আগমুহূর্তে তাকে তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ের কথা জানানো হয়।
আগে ব্যাট করা অস্ট্রেলিয়া নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৩৩৮ রান তোলে ফোবে লিচফিল্ডের ১১৯, অ্যালিসা পেরির ৭৭ ও অ্যাশলে গার্ডনারের ৬৩ রানে ভর করে। পরবর্তীতে জেমিমাহ রদ্রিগেজের ১২৭ ও অধিনায়ক হারমনপ্রীত কৌরের ৮৯ রানের সুবাদে ৫ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয় পেল ভারত। কেবল স্কোরবোর্ড দিয়েই হয়তো জেমিমাহ’র হার না মানা ইনিংসের বর্ণনা সম্ভব নয়।
আগের ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাদ পড়ায় এবারই প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নেমে তিন ম্যাচে দু’বার আউট হলেন শূন্য রানে। যা তাকে একাদশ থেকে ছিটকে দেয়। ফলে বিশ্বকাপের আগে ফর্মে থাকা জেমিমাহ পড়েন হতাশার সাগরে। অবশ্য এক ম্যাচ পরই আবার ফিরলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, যেখানে ক্যারিয়ারে খুব কম সময় তিন নম্বরে খেলা পজিশনে নামানো হয় তাকে। ৫৫ বলে ৭৬ রান করে মান রাখলেন। এবার মাইটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও বড় লক্ষ্য তাড়ায় তিন নম্বরে জেমিমাহ। এবার তো ইতিহাস গড়েই ক্রিজ ছাড়লেন।
জয় নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই কাঁদছিলেন মহারাষ্ট্রের ২৫ বছর বয়সী এই ব্যাটার। ম্যাচ পরবর্তী প্রেজেন্টেশনে যখন ডাকা হলো, কান্নার জন্য কথাই বলতে পারছিলেন না ঠিকঠাক। সেই অবস্থাতেই জেমিমাহ বললেন, ‘স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। স্বপ্নটা এখনও শেষ হয়নি। সত্যিই গত চার মাসের কাজটা কঠিন ছিল। এটা একা করতে পারিনি। মা, বাবা, কোচ এবং আমার ওপর যারা বিশ্বাস রেখেছিলেন, তাদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
লিকলিকে গড়নের এই ব্যাটার পেশিবহুল কিংবা শক্তিমত্তা দিয়ে শট খেলেন না। ব্যাটিংয়ের দারুণ দক্ষতা, টাইমিংয়ের সহজাত ক্ষমতা ও কৌশল কাজে লাগানোর চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা তাকে সফল করেছে। অথচ ব্যাটিংয়ে নামার আগে এদিনও তিনে খেলতে হবে বলে জানতেন না জেমিমাহ। ১৩৪ বলে অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংসের পর জানালেন, ‘তিন নম্বরে ব্যাট করতে যে আমি জানতাম না। দলীয় আলোচনা চলাকালে আমি গোসল করছিলাম। শুধু বলেছিলাম আমাকে জানাতে। মাঠে নামার পাঁচ মিনিট আগে, আমাকে বলা হয়েছিল তিন নম্বরে ব্যাট করতে হবে।’ সেঞ্চুরির পর উদযাপন না করা প্রসঙ্গে জেমিমাহ বলেন, ‘আমার পঞ্চাশ বা শতরানের বিষয় নয়। ভারতকে জিতিয়ে আনার লক্ষ্য ছিল। একটা সেটআপ ছিল। আগে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলো আমরা হেরেছি।’
প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে নেমে ব্যাটিংটা ঠিকঠাক হচ্ছিল না বলে উদ্বিগ্ন ছিলেন জেমিমাহ, ‘গত বছর আমাকে এই বিশ্বকাপ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। কোনো কিছুই নিজের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এই সফরে আমি প্রায় প্রতিদিনই কেঁদেছি। মানসিকভাবে ভাল জায়গায় ছিলাম না। একটা উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। জানতাম আমাকে জ্বলে উঠতে হবে। ইংল্যান্ড ম্যাচে বাদ পড়াটা আরও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আসে। সবমিলিয়ে আমি বড় কিছু করতে চেয়েছিলাম, সৃষ্টিকর্তা পুরো বিষয় সহজ করে দিয়েছেন।’
আইকে/এসএন