দেশে আওয়ামী লীগের লোকজন যেন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক : মাসুদ কামাল

জাতিকে বিভক্তি করা নিয়ে কথার একপর্যায়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, দেশে আওয়ামী লীগের লোকজনকে যেন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে। সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন। তুমি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করতে, অতএব তুমি সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন থাকো। তুমি কোনো কথা বলতে পারবে না।

তোমার মতামতের কোনো মূল্য নাই। তুমি কেউ না দেশে। এই যে কাজটা আওয়ামী লীগ করেছিল বিএনপি এবং জামায়াতের সঙ্গে, ঠিক সেই একই কাজ, তার চেয়েও দ্রুতবেগে, তার চেয়েও প্রবলভাবে এই সরকার করা শুরু করল অথবা এই সরকার নিজেরা করল না, অন্যরা করল, এ সরকার তাদের প্রশ্রয় দিল। এই সরকার করতে বলল, করার মতো অনুকূল পরিবেশ তৈরি করল। দেশটা আবার দুই ভাগ হয়ে গেল।

শনিবার (১ নভেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি।

আলোচনার শুরুতে মাসুদ কামাল বলেন, আমরা আতঙ্কিত বোধ করছি একটা কথা ভেবে যে কথাটা আমরা শুরু থেকে বলতাম এবং বিগত সরকারের আমলেও বলেছি বহুবার। সেটা হলো- আমরা কি জাতিটাকে বিভক্ত করতে চাই? আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল তখন আমি বহুবার বলেছি। আওয়ামী লীগ এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে জাতিটাকে বিভক্ত করছিল। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী দল, জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী দল, এদেরকে রাজনীতি করতে দেওয়া যাবে না, জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের চর ছিলেন- এ ধরনের নানা কথা আমাদেরকে শুনতে হয়েছে। ফলটা কী হয়েছে? ফলটা হলো জাতিটাকে দু-ভাগ করে দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা। যে দেশ আমরা চালাব, আমরাই থাকব, তোমরা থাকবেই না, তোমাদের দৌড়ের উপর রাখব।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের আগস্টে আমরা কী ভেবেছিলাম? আমরা ভেবেছিলাম, এবার বুঝি জাতিটা ঐক্যবদ্ধ হবে এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে আনা হয়েছিল, যিনি আওয়ামী লীগ-বিএনপি কোনো দলই করেন না। তিনি হলেন ড. ইউনূস। দেশে তার একটা পজিটিভ ইমেজ ছিল। আমরা ভেবেছিলাম, উনি বিভিন্ন দলমত নির্বিশেষে সমস্ত লোকদেরকে এনে যোগ্য লোকদের একত্রিত করে একটা সরকার গঠন করবেন এবং সেই সরকার একটা নির্দিষ্ট সময় পরে দেশে একটা নির্বাচন দেবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে এবং এর মাঝে উনি কিছু কিছু কাজ করবেন, যে কাজগুলো, যে সমস্ত নিয়ম কানুন, যে সমস্ত রীতি থাকলে একটা মানুষের পক্ষে অথবা সরকার প্রধানের পক্ষে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠা সহজ হয়, সে ধরনের সিস্টেমগুলো উনি চেঞ্জ করবেন। এই তো ছিল প্রত্যাশা। যে প্রত্যাশা ছিল, যে আশা ছিল- সেটা এখন আমাদের হতাশায় পরিণত হয়েছে। আমরা দেখছি, ঐক্যের নামে এখন আরেকটা অনৈক্য তৈরি করা হয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, প্রথমত বিভক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের লোকজনকে যেন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়েছে। সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন। তুমি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করতে, অতএব তুমি সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন থাকো। তুমি কোনো কথা বলতে পারবে না। তোমার মতামতের কোনো মূল্য নাই। তুমি কেউ না দেশে। এই যে কাজটা আওয়ামী লীগ করেছিল বিএনপি এবং জামায়াতের সঙ্গে, ঠিক সেই একই কাজ, তার চেয়েও দ্রুতবেগে, তার চেয়েও প্রবলভাবে এই সরকার করা শুরু করল অথবা এই সরকার নিজেরা করল না, অন্যরা করল, এ সরকার তাদের প্রশ্রয় দিল। এই সরকার করতে বলল, করার মতো অনুকূল পরিবেশ তৈরি করল। দেশটা আবার দুই ভাগ হয়ে গেল। এখন এক ভাগে যারা আছেন, তাদের মধ্যেও আবার এখন আরেকটা দ্বিধা-বিভক্তি তৈরি হলো। এই জুলাই সনদকে কেন্দ্র করে। এই গণভোটকে কেন্দ্র করে।

ইউটি

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দ্য গ্রেট পিরামিডের পাশে বিশ্বের বৃহত্তম প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর উদ্বোধন করল মিশর Nov 03, 2025
img
মুন্সীগঞ্জে বিএনপির ২ গ্রুপের সংঘর্ষে প্রাণ হারাল যুবক Nov 03, 2025
img

ডাকসুর বিবৃতি

তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে বিএনপি Nov 03, 2025
img
বৃথা গেলো ভলভার্টের সেঞ্চুরি, আফ্রিকাকে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ী ভারত Nov 03, 2025
img
কাস্টমস কর্মকর্তা শহিদুজ্জামান বরখাস্ত Nov 03, 2025
img

টেবিল টেনিস

থাই কোচের বিদায়, ইরানি কোচ আনতে চায় বাংলাদেশ Nov 03, 2025
img
১১ দেশে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন চলছে Nov 03, 2025
img
৪ দিনের পূর্বাভাসে লঘুচাপ নিয়ে নতুন তথ্য Nov 03, 2025
img
আরও ১০০ বছর রাজত্ব করো- শাহরুখকে ফারাহ Nov 02, 2025
img
বিএনপিকে আলোচনায় বসতে জামায়াতের আহ্বান Nov 02, 2025
img
রাজধানীতে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৪ Nov 02, 2025
img
১৬ বছর পর আমন্ত্রণ ফেরানোর পর এবার বিটিভিতে গেলেন আসিফ Nov 02, 2025
img
নতুন রূপে শাহরুখ, ‘কিং’ সিনেমার টাইটেল ট্র্যাকে মুগ্ধ দর্শক Nov 02, 2025
img
ভুল করে গোল খাওয়ার পর আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক মার্টিনেজের মন্তব্য Nov 02, 2025
img
ট্রাম্পের কড়া বার্তাকে ‘স্বাগত’ জানাল নাইজেরিয়ার সরকার Nov 02, 2025
img
‘শাপলা কলি’ পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনসিপি নেতাকর্মীদের পোস্ট Nov 02, 2025
img
আগে ক্যাপাসিটি বিল্ড আপ, তারপর এলডিসি থেকে উত্তরণ : আমীর খসরু Nov 02, 2025
img
প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি, পরিবারসহ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ৬ জনের সাক্ষ্য Nov 02, 2025
img
ভারতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল অন্তত ১৮ জনের Nov 02, 2025
img
সবচেয়ে ভারী স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করছে ভারত Nov 02, 2025