এক মাসও হয়নি, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার বিতর্কিত গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। এরই মধ্যে নিজ দেশ ভেনেজয়েলায় হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে উসকালেন ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর ভক্ত বলে খ্যাত এ নেত্রী।
রোববার (২ নভেম্বর) আরটি ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ তথ্য।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার উপকূলে মার্কিন সামরিক বাহিনী মোতায়েনের ফলে, দেশটির শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন আসতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সদ্য শান্তিতে নোবেলজয়ী মারিয়া করিনা মাচাদো। এছাড়া তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে অপসারণে সহায়তা করলে যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে স্বাগত জানাবেন তিনি।
ওয়াশিংটন ইতোমধ্যে মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদক ‘পাচারকারীদের’ সাথে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ এনেছে। এ কারণে বছরের শুরুতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পশ্চিম ক্যারিবীয় অঞ্চলে একটি নৌবাহিনী মোতায়েন করেন এবং সেপ্টেম্বর থেকে মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলার উপকূলে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে তাদের জাহাজগুলোতে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে।
তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন যে মার্কিন এ অভিযানটি মাদকবিরোধী অভিযানের বাইরেও প্রসারিত হতে পারে।
সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের ‘দ্য মিশাল হুসেন শো’-তে মাচাদোকে সম্প্রতি প্রশ্ন করা হয়, ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক পদক্ষেপকে তিনি সমর্থন করেন কি না। জবাবে ভেনেজুয়েলার এ নোবেলজয়ী নারী বলেন, আমি বিশ্বাস করি, যে উত্তেজনা চলছে তা মাদুরোকে বুঝতে বাধ্য করার একমাত্র উপায় যে এখন চলে যাওয়ার সময় এসেছে।
মাচাদো দাবি করেন, গত বছরের নির্বাচনে মাদুরো ‘অবৈধভাবে’ ক্ষমতা দখল করেছিলেন। তিনি এও বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হবে না। কারণ, মাদুরো ভেনেজুয়েলার বৈধ প্রেসিডেন্ট নন বরং তিনি একটি মাদক সন্ত্রাসবাদী কাঠামোর প্রধান।
অন্যদিকে, মাচাদোর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী গোষ্ঠীগুলোতে মার্কিন তহবিল সরবরাহের অভিযোগ এনেছেন মাদুরো। একইসঙ্গ তিনি মাচাদোকে ভেনেজুয়েলার বিষয়ে ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপের জন্য একটি ফ্রন্ট বলে অভিহিত করেছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন ঠেকাতে চীন, রাশিয়া এবং ইরানের সাহায্যও চেয়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট।
প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক দশক ধরেই মার্কিন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে মাচাদোর। ২০০৫ সালে তাকে ওভাল অফিসে অভ্যর্থনা জানান যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ. বুশ। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর কট্টর বিরোধী এই রাজনীতিবিদ ইসরায়েল ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুরও একজন প্রকাশ্য সমর্থক।
এছাড়া, সরকার পতনের জন্য নিজ দেশ ভেনেজুয়েলায় হামলা চালাতে এবারই প্রথম উসকানি দেননি মাচাদো। ২০১৮ সালেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন তিনি। ওই চিঠিতে নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে উৎখাত করতে ভেনেজুয়েলায় সরাসরি সামরিক হামলা চালানোর জন্য ইসরায়েলকে আহ্বান জানান গণতন্ত্রপন্থি এ নেত্রী।
এমনকি গত ১০ অক্টোবর, যেদিন মাচাদোকে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়, ওইদিনই নিজের নোবেল পুরস্কারটি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেন তিনি।
এমকে/এসএন