ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের বিরোধে এবং রাজনৈতিক টানাপড়েনে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারে শাটডাউন স্মরণকালের দীর্ঘ ও জটিল আকার ধারণ করেছে। শাটডাউনের কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, চিকিৎসা, ব্যাবসা- বাণিজ্যের পাশাপাশি এবার দেশটির বিমানবন্দরগুলোতে ব্যাপক ফ্লাইট বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, শাটডাউনের কারণে বিমানবন্দরগুলো ব্যাপক ফ্লাইটের শিডিউল বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কোথাও সময় মতো উড়ছে না বিমান। আবার কোথাও একটার পর একটা ফ্লাইট বাতিল হয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহ বেতন না পেয়ে বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে অনুপস্থিত। ফলে দেশজুড়ে শত শত ফ্লাইট বাতিল এবং হাজারো ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়্যার-এর তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার ((৩১ অক্টোবর) থেকে রোববার (২ নভেম্বর) পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ হাজার ৭০০টিরও বেশি ফ্লাইট দেরিতে ছেড়েছে এবং ২ হাজার ২৮২টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
সোমবারও (৩ নভেম্বর) পরিস্থিতি শিডিউল বিপর্যয় অব্যাহত ছিল। এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শিকাগো ও’হেয়ার, ডালাস ফোর্ট ওয়ার্থ, ডেনভার ও নিউয়ার্কসহ বড় বড় শহরগুলোর বিমানবন্দরে আরও ৪ হাজার ফ্লাইট দেরিতে ছাড়ে এবং ৬০০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়।
এফএএ জানায়, সরকারের শাটডাউনে কারণে তাদের ৩০টি বড় বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের অর্ধেকই এখন জনবল ঘাটতিতে রয়েছে। নিউইয়র্ক অঞ্চলের বিমানবন্দরগুলোতে স্টাফ বা কর্মী অনুপস্থিতির হার পৌঁছেছে ৮০ শতাংশে। অর্থাৎ ১০০ জন কর্মীর ৮০ জনই কাজে আসছেন না।
আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রায় ১৩ হাজার বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক বা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার আছেন, যারা ‘অপরিহার্য কর্মী’ হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু গত ১ অক্টোবর থেকে বেতন ছাড়াই কাজ করছেন। তবে এফএএ বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে এই কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তা বজায় রাখতে বিমান চলাচলের সংখ্যা কমাতে হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি গত রোববার সিবিএস নিউজকে বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফ্লাইট চলাচলে বিলম্ব অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, ‘আমরা ওভারটাইম কাজ করছি যাতে সিস্টেম নিরাপদ থাকে। প্রয়োজনে ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত হবে।’
তিনি আরও জানান, কিছু এটিসি কর্মকর্তা জীবিকা নির্বাহের জন্য বিকল্প পেশায় যোগ দিয়েছেন, তবে তাদের বরখাস্ত করা হবে না। ডাফির ভাষায়, ‘যখন কেউ পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য দ্বিতীয় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে, তখন আমি তাকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করব না।’
আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রে সরকারে শাটডাউন টানা ৩৫তম দিনে গড়িয়েছে। এর আগে সবশেষ ২০১৮-২০১৯ সালের শাটডাউন ৩৫ দিন ছিল যা দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ শাটডাউন। আর কয়েক ঘণ্টা পরই এবারের শাটডাউন নতুন ইতিহাস গড়বে।
এদিকে সরকারে শাটডাউন কাটানোর পথ এখনও কুয়াশাচ্ছন্ন। আশার আলোর রেখা যেন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। কারণ একটাই প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বিরোধ এখন তুঙ্গে। জাতীয় স্বার্থে ঐক্যের পরিবর্তে তারা প্রাধান্য দিচ্ছে নিজেদের স্বার্থ। এ কারণে দীর্ঘ হচ্ছে শাটডাউন।
ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান ও বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক দ্বন্দ্বে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি ব্যয় সংক্রান্ত বিল অনুমোদন না পাওয়ায় গত মাসের ১ অক্টোবর থেকে শুরু এই শাটডাউন। এরপর এক মাসেও মেলেনি এর সমাধানসূত্র। বরং দুদলের মধ্যে তিক্ততা বেড়েছে বহুগুণে। এতে আরও ঘনীভূত হচ্ছে সংকট।
অর্থ বরাদ্দ বিল নিয়ে সরকারি দল ও বিরোধী দলের দ্বন্দ্বের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৪বার ভোট হলেও সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি কেউই। বাজেট নিয়ে সমঝোতায় না হওয়ায় সাময়িকভাবে স্থগিত হয়েছে বেশ কিছু সরকারি সেবা। চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পথে নেমেছেন অনেক মার্কিন। স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা বাণিজ্য।
আগের সবগুলো সরকারি শাটডাউন কাটিয়ে উঠতে দুই দল রাতভর আলোচনায় বসে সমাধান করলেও এবার সেই সহযোগিতার মনোভাব একেবারেই অনুপস্থিত। বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘতম এ অচলাবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাত্রা সপ্তাহে কমতে পারে শূন্য দশমিক দুই শতাংশ।
টিএম/টিএ