দারুণ ছন্দে এগিয়ে চলা রিয়াল মাদ্রিদ ও কক্ষচ্যূত লিভারপুলের লড়াই শুরু হতেই দুই দলের রূপ বদলে গেল। আক্রমণের ঝড় তুলল স্বাগতিক দল। আর তাদের সামনে দুর্ভেদ্য প্রাচীর হয়ে দাঁড়ালেন থিবো কোর্তোয়া। একটা সময় গিয়ে তার দেয়ালে চিড় ধরল। অসাধারণ এক জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হলো লিভারপুল।
অ্যানফিল্ডে মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচটি ১-০ গোলে জিতেছে আর্না স্লটের দল। ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন অ্যালেক্সিস ম্যাক-অ্যালিস্টার।
পুরো ম্যাচে বল দখলে বেশ পিছিয়ে থাকলেও আক্রমণে আধিপত্য করে লিভারপুল। গোলের জন্য ১৭টি শট নিয়ে তারা লক্ষ্যে রাখতে পারে ৯টি। আর নিজেদের খুঁজে ফেরা রেয়ালের আট শটের কেবল দুটিই লক্ষ্যে ছিল।
চার ম্যাচে তিন জয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে উঠেছে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নরা। সমান পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে পঞ্চম স্থানে রিয়াল মাদ্রিদ।চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এই নিয়ে টানা দুইবার মাদ্রিদের দলটিকে হারাল লিভারপুল। অ্যানফিল্ডেই গত আসরের প্রাথমিক পর্বে তারা জিতেছিল ২-০ গোলে।
গত আট ম্যাচে ছয়টিতে হারের তীব্র হতাশা থাকলেও, ঘরের মাঠে আত্মবিশ্বাসী শুরু করে লিভারপুল। প্রথমার্ধের প্রায় পুরোটা সময় আধিপত্য করে তারা।
দশম মিনিটে রেয়াল মাদ্রিদ বাইলাইনের কাছে পজেশন হারালে ভীতি ছড়ায় স্বাগতিকরা। দমিনিক সোবোসলাইয়ের পাস পেয়ে মাক অ্যালিস্টারের শটটি যদিও লক্ষ্যে থাকেনি।
ধীরে ধীরে গুছিয়ে উঠে, পজেশন ধরে রেখে আক্রমণের চেষ্টা করতে থাকে রিয়াল। যদিও তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারছিল না তারা। এরই মাঝে ২৭তম মিনিটে প্রতি-আক্রমণে সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায় লিভারপুল; কিন্তু অসাধারণ নৈপুণ্যে জাল অক্ষত রাখেন কোর্তোয়া। ওয়ান-অন-ওয়ানে সোবোসলাইয়ের জোরাল শট এগিয়ে এসে পা দিয়ে আটকান গোলরক্ষক।
একটু পর আরেক দফা বিপদ এড়াতে পারে রিয়াল মাদ্রিদ। একেবারে ডি-বক্সের মুখে ভিনিসিউসের হাতে বল লাগলে হ্যান্ডবলের বাঁশি বাজান রেফারি। তবে লিভারপুল দাবি তোলে, হ্যান্ডবলের ঘটনাটি ডি-বক্সের মধ্যে। ভিএআর অনেকক্ষণ পর্যালোচনার পর, মনিটরে নিজে দেখে হ্যান্ডবলের সিদ্ধান্তই বাতিল করে দেন রেফারি।
৪৩তম মিনিটে আবারও কোর্তোয়ার নৈপুণ্যে রক্ষা সফরকারীদের। ডি-বক্সের বাইরে থেকে সোবোসলাইয়ের জোরাল শট ঝাঁপিয়ে আটকান বেলজিয়ান গোলরক্ষক।
তিনটি লক্ষ্যভ্রষ্ট প্রচেষ্টার পর, ৪৫তম মিনিটে প্রথম লক্ষ্যে শট নিতে পারে রেয়াল। জুড বেলিংহ্যামের দুরূহ কোণ থেকে নেওয়া শট পা দিয়ে আটকান জিওর্জি মামারদাশভিলি। দুই মিনিট পর মাক অ্যালিস্টারের শটও ঠেকিয়ে দলকে সমতায় রাখেন কোর্তোয়া। দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতে আবারও লিভারপুলের আক্রমণের ঝড় এবং কোর্তোয়ার দুর্দান্ত দুটি সেভ।
৪৭তম মিনিটে ভার্জিল ফন ডাইকের হেড দারুণ ক্ষীপ্রতায় কর্নারের বিনিময়ে আটকান কোর্তোয়া। সোবোসলাইয়ের কর্নারে এবার হেড করেন উগো একিটিকে, ঝাঁপিয়ে এক হাতে বল বাইরে পাঠান গোলরক্ষক। পরের কর্নারেও হেড করেন একিটিকে, এবার বল পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।
৬১তম মিনিটে অবশেষে কোর্তোয়ার দেয়াল ভাঙতে পারে লিভারপুল। ফ্রি কিক পেয়ে ডি-বক্সে দারুণ এক ক্রস বাড়ান সোবোসলাই, আর গতিময় হেডে অ্যানফিল্ডকে উচ্ছ্বাসে ভাসান আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার মাক অ্যালিস্টার।
অধিকাংশ সময় নিজের ছায়া হয়ে থাকা কিলিয়ান এমবাপে ৭৫তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পান। ভিনিসিউসের কাটব্যাক পেয়ে প্রথম ছোঁয়ায় শট নেন প্রথম তিন ম্যাচে পাঁচ গোল করা ফরাসি তারকা, বল অনেকটা বাঁক খেয়ে বেরিয়ে যায়।
৮১তম মিনিটে আর্দা গিলেরকে উঠিয়ে ট্রেন্ট অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডকে নামান রিয়াল কোচ। সঙ্গে সঙ্গে যেন পুরো অ্যানফিল্ড থেকে ভেসে আসতে থাকে দুয়োর শব্দ!
সময় যত ফুরিয়ে আসছিল, ততই মরিয়া হয়ে উঠছিল রিয়াল। কিন্তু প্রতিপক্ষকে খুব একটা পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি ভিনিসিউস-বেলিংহ্যামরা।৮৭তম মিনিটে আরেকটি দারুণ সেভে ব্যবধান বাড়তে দেননি কোর্তোয়া; কোডি হাকপোর কাছ থেকে নেওয়া শট আটকান তিনি। পরমুহূর্তে সালাহর প্রচেষ্টা প্রতিহত করেন এদের মিলিতাও। যদিও তাদের শেষটা হতাশাতেই হয়।
অসাধারণ এই জয়ে সাম্প্রতিক সময়ের সব হতাশা মুছে ঘুরের দাঁড়ানোর জোরাল বার্তা দিল লিভারপুল।
এমআর
